বিশ্ব

Ukraine-Russia Conflict: রাত কেটেছে এক প্যাকেট ম্যাগি খেয়ে, বাঙ্কারও কাঁপছে বোমার আঘাতে! ইউক্রেনে আটকে পড়া পশ্চিম মেদিনীপুরের ডাক্তারি পড়ুয়া জানালেন অভিজ্ঞতা

Published by
KGP Desk

নরেশ জানা ও শশাঙ্ক প্রধান: ‘বুধবার একটু রাত করেই পড়াশুনা করেছি। তখনও বিশ্বাস করিনি যুদ্ধটা লাগতে পারে। অধ্যাপক পড়ুয়াদের মধ্যে একটা বিশ্বাস ছিল শেষ অবধি মিটমাট হয়ে যাবে। অনেক রাতে তাই নিশ্চিন্তেই ঘুমাতে গেছিলাম। পরের দিন বেলা অবধি ঘুমিয়ে নেব ভেবেছিলাম কিন্তু ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ একটা বিকট শব্দে ঘুম ভাঙল। তারপর আরও শব্দ, আরও! বুঝলাম বোমা পড়ছে, যুদ্ধ লেগে গেছে।

সুশোভন বেরা, ইউক্রেন

তাড়াতাড়ি ঘরের জানলা দিয়ে মুখ বার করে দেখি, বাইরে ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে। বোমার শব্দ শোনা যাচ্ছে। কয়েক মিনিট ছাড়া ছাড়া বিস্ফোরণ হচ্ছিল। কয়েকটি যেন বেশ কাছেই ফাটল। মনে হচ্ছে বোরিসপিলে বিমানবন্দরেই পড়েছে বোমাগুলো।’ কথা গুলো বলে একটু দম নিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে আটকে পড়া পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের বাসিন্দা সুশোভন বেরা।

২০১৯ সালে ডাক্তারি পড়তে ইউক্রেন পাড়ি দিয়েছেন সুশোভন। এবছর তাঁর থার্ড ইয়ার চলেছে। বর্তমানে ইউক্রেনের রাজধানী কিভেই রয়েছে সে। আর সেই কিভ-ই এখন রাশিয়ার আক্রমনের মূল লক্ষ্য। সুশোভন ও তাঁর কয়েকজন সহপাঠী থাকেন কিভের অ্যাকাডেমিকা টুপোলেভা স্ট্রিট লাগোয়া অ্যাপার্টমেন্টগুলির একটিতে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যের মধ্যেই ওই অ্যাপার্টমেন্টগুলি কার্যত জনশূন্য হয়ে পড়েছে।

কাগজপত্র মিলিয়ে নেওয়া। নারায়নচন্দ্র ও নিভারানী

বেশিরভাগ মানুষই রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা থেকে বাঁচতে মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন কিভের বিভিন্ন মেট্রো স্টেশনে। কারণ, এগুলি মাটির অনেক গভীরে। সুশোভনদের সরিয়ে নিয়ে গেছে স্থানীয় প্রশাসন। প্রথমে একটা বহুতলের বেসমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়, পরে রাতের দিকে একটি বাঙ্কারে রাখা হয়েছে তাঁদের। সুশোভন বলছেন, বোমার আঘাতে সেই বাঙ্কারও যেন কাঁপছে।

সুশোভনের সবংয়ের বাড়ি

সবং সদরে গরুর হাটের কাছেই বাড়ি সুশোভনের বাবা নারায়ণচন্দ্র বেরা সারের ব্যবসা করেন। মা ও নিভারানী গৃহবধূ। দুই দিদির বিয়ে হয়ে গেছে। সবংয়ের একটি নার্সারি স্কুলে পড়ার পর পিংলার ধনেশ্বরপুর থেকে মাধ্যমিকের পাঠ নিয়েছিলেন সুশোভন। মেদিনীপুর শহরের মোহনানন্দা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আওতায় ডাক্তারি পড়ার পরীক্ষার বসার জন্য প্রশিক্ষণ নেন। তারপরই মিলে যায় ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়ার ছাড়পত্র। ২০২১সালের সেপ্টেম্বরে সবংয়ে এসে বাবা-মার সঙ্গে কয়েকটা দিন কাটিয়ে গেছেন সুশোভন। ফের আসার কথা ছিল ১লা মার্চ। বিমানের টিকিট কাটাও হয়ে গিয়েছিল কিন্তু এখন সেসব ছেড়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে বাঙ্কারে।

সুশোভন জানিয়েছেন, ‘গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাতে শুধু এক প্যাকেট ম্যাগি খেয়েছি। তারপর শুক্রবার সকাল ১০টা মানে এখনও অবধি আর কিছুই জোটেনি। প্রচন্ড খিদে পাচ্ছে। এলাকার সমস্ত দোকানপাট বন্ধ রয়েছে বলেই খবর পাচ্ছি। ওদিকে রাতভর বাঙ্কারের ইস্পাত কঠিন পাটাতনে শুয়ে গা হাত পায়ে প্রচন্ড ব্যথা। আসার সময় ব্যাগে করে টুথ ব্রাশ, পেস্ট, কয়েকটা জামা প্যান্ট, মোবাইল চার্জার নিয়ে এসেছিলাম। তাতেই মোবাইলটা চার্জ দিয়ে কোনও মতে চলছে। তবে বাঙ্কারের ভেতর নেটওয়ার্ক অসম্ভব দুর্বল। আর মাঝেমধ্যে বোমা পড়ার শব্দে বাঙ্কার কেঁপে উঠছে।’ শুক্রবার বাবা-মার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছেন সুশোভন কিন্তু নেটওয়ার্ক দুর্বল থাকার ফেটে ফেটে যাচ্ছিল অবয়ব, কেটে যাচ্ছিল কথা। বলেছেন, আসার সময় পাসপোর্ট, পড়ুয়াদের জন্য বিশেষ রেসিডেন্সিয়াল কার্ড সঙ্গে নিয়েছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এখান থেকেই যাতে সোজা বিমানবন্দর হয়ে দেশে ফিরতে পারেন।

যদিও আপাততঃ সেই সম্ভবনা নেই বলেই মনে হচ্ছে।
কারন রাশিয়ার আক্রমনের লক্ষ্যে রাজধানী কিভে অবস্থিত ইউক্রেনের সামরিক সদর দপ্তরের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বোরিসপিলও। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে ঘোষনা করা হয়েছে ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী কেউই এই মুহূর্তে ইউক্রেন ছাড়তে পারবেননা। বৃহস্পতিবারই রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে , ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের প্রথম দিনেই তারা সব লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলেছে। ইউক্রেনের স্থলভাগে ৮৩টি সামরিক লক্ষ্যকে ধ্বংস করেছে। ইউক্রেন সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মো়ট ২০৩টি সামরিক আঘাত হেনেছে পুতিনের দেশ। ইউক্রেন সেনা পাল্টা দাবি, খারকিভের কাছে রাশিয়ার চারটি যুদ্ধ ট্যাঙ্ক ধ্বংস করেছে তারাও। লুহানস্ক অঞ্চলে নিহত হয়েছেন ৫০ জন রুশ সেনা। ছ’টি রুশ যুদ্ধবিমানকে গুলি করে নামিয়েছে ইউক্রেন সেনা। যদিও এই তথ্য অস্বীকার করেছে রাশিয়া। সরকারি বেসরকারি দাবি মানলে যুদ্ধের প্রথম দিনেই দু’পক্ষের সেনা ও অসামরিক ব্যক্তি মিলিয়ে ২০০জনের কাছাকাছি প্রাণ হারিয়েছেন।

ওদিকে সবংয়ে বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবারও টিভির সামনেই বসে রয়েছেন সুশোভনের বাবা মা। প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে আতঙ্কে। নেট ওয়ার্ক খারাপ হওয়ার কারনে বেশিরভাগ সময়ে যোগাযোগ করে উঠতে পারছে না ছেলের সাথে । শুক্রবার একবারই কথা হয়েছে ছেলের সাথে। যুদ্ধের আতঙ্কের পাশাপাশি আতঙ্ক যদি নেট পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে তাহলে যেটুকু যোগাযোগ করতে পারছে ছেলের সাথে সেটাও আর পারবে না । ভারত সরকারের কাছে তাদের আবেদন যেকোন উপায়ে তার ছেলেসহ যে সমস্ত ভারতীয় ছেলেমেয়েরা ওখানে পড়াশোনার জন্য গিয়েছেন প্রত্যেককেই যাতে নিরাপদে ফিরিয়ে আনা হয় ভারতে। শুক্রবার নতুন করে দু’দেশের সঙ্ঘাত কোন মাত্রায় পৌঁছাবে কে জানে?

Recent Posts

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল-২০৯ ।। চিন্ময় দাশ

জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল চিন্ময় দাশবিষ্ণু মন্দির, প্রজাবাড় (ময়না, পূর্ব মেদিনীপুর) যত দূর চোখ যায়, সবজি…

11 months ago

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের  জার্ণাল- ২০৮।। চিন্ময় দাশ

জীর্ণ মন্দিরের  জার্ণাল- ২০৮ চিন্ময় দাশ শ্রীশ্রী দামোদরজীউ মন্দির, হাসিমপুর (কেশিয়াড়ি, পশ্চিম মেদিনীপুর) মেদিনীপুর জেলার…

11 months ago

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল-২০৭।। চিন্ময় দাশ

জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল চিন্ময় দাশ শিব মন্দির, মিত্রসেনপুর (চন্দ্রকোণা, পশ্চিম মেদিনীপুর)বহুকালের প্রাচীন নগরী চন্দ্রকোণা। ভানবংশ,…

11 months ago

Templ Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল- ২০৬।। চিন্ময় দাশ

জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল চিন্ময় দাশলক্ষ্মীজনার্দন মন্দির, শ্রীরামপুর (সবং, পশ্চিম মেদিনীপুর) জমিদারী গড়েছিলেন বটে, বৈষয়িক ছিলেন…

12 months ago

Temple Tell: জীর্ণমন্দিরের জার্ণাল- ২০৫।। চিন্ময় দাশ

জীর্ণমন্দিরের জার্ণাল চিন্ময় দাশ শ্রীশ্রী রসিকনাগর জীউ মন্দির, জয়ন্তীপুর (চন্দ্রকোণা শহর) মন্দির নগরী চন্দ্রকোণা। এর…

12 months ago

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল-২০৪।। চিন্ময় দাশ

জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল— ২০৪ চিন্ময় দাশবিষ্ণু মন্দির, মার্কণ্ডপুর (পাঁশকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর) রূপনারায়ণ নদ—মেদিনীপুর জেলার পূর্বাংশের…

12 months ago