Sunday, April 28, 2024

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল-২০৯ ।। চিন্ময় দাশ

- Advertisement -spot_imgspot_img

জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল
চিন্ময় দাশবিষ্ণু মন্দির, প্রজাবাড়
(ময়না, পূর্ব মেদিনীপুর) যত দূর চোখ যায়, সবজি খেতের সবুজ গালিচা বিছানো প্রান্তর জুড়ে। সেই সবুজের সমুদ্রের মাঝখানে, এক খণ্ড দ্বীপের মতো, মাথা উঁচিয়ে আছে একটি ঢিবি। গাছ আর আগাছার ঘণ ঝোপঝাড়ে মোড়া। সেই ঢিবির মাথায় দাঁড়িয়ে আছে কতকালের একটি জীর্ণ মন্দির। ক্ষয়রোগের চিহ্ন প্রকট হয়ে আছে মন্দিরের সারা অবয়ব জুড়ে।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

বিষ্ণু আরাধনার ঢেউ বয়ে চলেছে সে সময়। মহাপ্রভু চৈতন্যদেব স্বয়ং এসেছিলেন তমলুক নগরীতে সেই অভিঘাতে মহাপ্রভু মন্দির, জিষ্ণুহরি নন্দির, । বেশ কয়েকটি মন্দির গড়ে উঠেছিল তমলুকে। রাজবাড়ির অন্দরে দু’-দুটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিল রাজবাড়িও।
পূর্বকাল থেকে শিবের পূজা হোত ময়না রাজবাড়িতে।  নতুন মন্দির গড়ে, তাঁরাও বিষ্ণু আরাধনা শুরু করেছিলেন। এই ঢেউ লেগেছিল তমলুক-ময়না এলাকার সমাজ জীবনেও। ধনবান ব্যক্তিরাও মন্দির গড়েছিলেন কেউ কেউ।
মাইতি পদবীর একটি ধনবান বংশের বাস ছিল প্রজাবাড় গ্রামে। তাঁরাও একটি মন্দির গড়ে, শালগ্রাম প্রতিষ্ঠা করে সেবাপূজা করতেন।
জনৈক অনিল মাইতি যখন পরিবারের কর্তা, একদিন একটি শকুনি মন্দিরটির মাথায় বসে পড়েছিল। এমন অশুভ ঘটনার কারণে, মন্দিরটি অশুচি হয়ে যায়। পূজার্চনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সেদিন থেকে।
জানা যায়, মাইতি বংশের শ্রীধর, লক্ষ্মীকান্ত এবংমহেন্দ্র—তিন সহোদর ভাই অপবিত্র বাস্তু ত্যাগ করে, দেশান্তরী হয়ে চলে গিয়েছিলেন। বিগ্রহহীন মন্দিটি সেদিন থেকেই পরিত্যক্ত।
নারায়ণ বা লক্ষ্মীনারায়ণ নামের একটি শালগ্রাম পূজিত হোত অভিশপ্ত মন্দিরটিতে । সেটি কোথায়, সে সন্ধান করা যায়নি। শিলাটির কোন হদিশ পাওয়া যায়নি এলাকার কারও কাছেই। দুটি-তিনটি গ্রামে নিবিড় সমীক্ষা চালিয়েও না।
এদিকে, ঝোপঝাড় আর বিষাক্ত সরিসৃপের কারণে, মন্দিরে ওঠার পথটি দুর্গম। পর্যবেক্ষণের কাজ সারতে হয়েছে, খানিক দূরত্ব রেখেই। বেশ দেখা যায়, মন্দিরটি  একটু বিশিষ্ট রীতিতে গড়া হয়েছিল। ইটের তৈরি পূর্বমুখী সৌধটি গড়া হয়েছিল শিখর রীতিতে।
পূর্ব এবং দক্ষিণ—দু’দিকেই দুটি অলিন্দ। দুটিতেই খিলানের তিনটি করে দ্বারপথ। গর্ভগৃহ থেকে অলিন্দে ঢোকার একটি করে দ্বারপথ দুটি অলিন্দেই। অলিন্দগুলির সিলিং টানা-খিলানের। কিন্তু গর্ভগৃহের সিলিং জরীপ করা সাধ্যে কুলোয়নি।
বিমান বা মূল মন্দিরটির উচ্চতা আনুমানিক ৩৫ ফুট। জগমোহন দুটির উচ্চতা ফুট পঁচিশেক। দক্ষিণের জগমোহনের সামনের দেওয়াল অনেকটাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
মন্দিরের অলঙ্করণের কাজ হয়েছিল টেরাকোটা আর পঙ্খের প্রলেপে। যদিও সেসকলের অধিকাংশই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। যে কয়েকটি টিকে আছে এখনও—বিষ্ণুর দশাবতার, ত্রিভঙ্গ ভঙ্গীমায় শ্রীকৃষ্ণ, হলধারী বলরাম,  কুঠারমুষ্ঠি পরশুরাম, ধনুর্ধারী রামচন্দ্র, দেবদাসী ইত্যাদির মূর্তি।
পঙ্খের ফুলকারি নকশার কাজ ছিল মন্দিরে। তার অধিকাংশই আজ আর টিকে নাই। অধিকাংশই কালের গর্ভে হারিয়ে গিয়েছে।
ভিনিশীয় রীতির দুটি ‘প্রতিকৃতি-দ্বারপথ’ রচিত আছে। পশ্চিমের দেওয়ালে সেগুলির  অবস্থান। পঙ্খের নকশার কাজও আছে অনেক। কিন্তু সবই ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথিক। বিধিলিপি লেখা হয়ে গিয়েছে কপালে। প্রতিদিন পলে পলে, শহর জনপদ থেকে দূরে, শূন্য প্রান্তরে মৃ্ত্যুর দিন গুণছে দেবালয়টি।
ঋণস্বীকারঃ শ্রী পার্থ দে—তমলুক। শ্রী কৃষ্ণেন্দু দাস—ময়না।
যাত্রাপথঃ পাঁশকুড়া-তমলুক পথের উপর পুরুষোত্তমপুর। সেখান থেকে পশ্চিমমুখে এগিয়ে, কংসাবতীর উপর বাঁশের সাঁকো। সাঁকো থেকে নেমে, খানিক এগিয়েই প্রজাবাড় গ্রাম এবং ফাঁকা মাঠের ভিতর মন্দিরটি অবস্থিত।

- Advertisement -
Latest news
Related news