নিজস্ব সংবাদদাতা: উৎসশ্রী পোর্টালে আবেদন করে যখন শিক্ষক শিক্ষিকিরা বাড়ির কাছে ফিরতে চাইতে মরিয়া তখন বাড়ির কাছের স্কুল ছেড়ে ৭০০কিলোমিটার দুরে বদলি নিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের এক শিক্ষক।

শিক্ষকের এ হেন ‘পাগলামি’তে হতবাক সহকর্মীরা, মাথায় হাত পরিবারের। শিক্ষক অবশ্য নিজের সিদ্ধান্তে গর্বিত কারন এক জায়গায় আটকে থাকার মানুষ নন তিনি। চষে ফেলতে চান গোটা বাংলাটাকেই। তাই আগামী ১০ বছর দক্ষিনবঙ্গ ছেড়ে উত্তরবঙ্গে পাড়ি দিচ্ছেন তিনি।
পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানার পাঁচবেড়িয়া হাই স্কুলের বাংলার শিক্ষক মহাদেব মান্নাকে ঘিরে তাই কৌতূহলের শেষ নেই। কেউ তাকে ছিটেল বলছেন তো কেউ বদ্ধ পাগল। না হলে কেউ ৭ জেলা পেরিয়ে ৭০০ কিলোমিটার দুরে উজান ভাঙেন? হ্যাঁ, দক্ষিনবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ির মাঝখানে ৭টি জেলা।
মহাদেব মান্নার বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া এলাকায়। বাড়ি থেকে দাসপুর পাঁচবেড়িয়া স্কুলের দূরত্ব ছিল মাত্র ১৭ কিলোমিটার। আর বদলি নিয়ে যাচ্ছেন প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দূরে জলপাইগুড়ির মাল আদর্শ বিদ্যাভবনে। মঙ্গলবার পুরোনো স্কুলে ছিল তাঁর শেষ দিন। সহকর্মীদের উদ্যোগে বিদায় সংবর্ধনা হয় এদিন।
শিক্ষক মহাদেব মানান বলেন, ‘ আমরা যা পড়ি তাই কি মানি? সেই যে পড়েছিলাম থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে দেখব এবার জগৎটাকে। আমি সেটা শুধু পড়িই নি মেনেছি মনে প্রানে। সুযোগ যখন পেয়েছি আমি তার সদ্ব্যবহার করেছি। দুনিয়া না হোক বাংলাকে তো দেখবো, পুরো বাংলা! দক্ষিনবঙ্গে বাড়ির কাছে ১১ বছর চাকরি করলাম। উত্তরবঙ্গটাকে দেখতে চাই, জানতে চাই। তাই বাড়ির সকলের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও এমন সিদ্ধান্ত নিলাম। অবশেষে স্ত্রী ও অন্যান্যদের বোঝালাম। আপাতত উত্তরবঙ্গে ১০ বছর কাটানোর ইচ্ছে রয়েছে। আমার সুযোগ থাকলে অন্য রাজ্যেও বদলি নিতাম। দেশটাকে দেখতাম নিজের মত করে। আসলে বেড়ানো আর দেশ দেখাতো এক নয়, দেখতে হলে থাকতে হয়, মিশতে হয়, জানতে হয়। আমি সেটাই চেয়েছি।’
পুরানো স্কুল ছেড়ে যাওয়ার আগে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য জন্য ৫০ হাজার টাকার বই কিনে দিয়ে গেলেন শিক্ষক মহাদেব মান্না। বলেছেন, প্রতিটি শিশু ভিন্ন রুচি নিয়ে জন্মায়। শিশুদের আনন্দের জন্য স্কুলে রঙিন ছবি যুক্ত রকমারি গল্প বই এর বিপুল সমাবেশ থাকা দরকার যার অভাব রযেছে স্কুল গুলিতে। ছাত্ররা যাতে লেখাপড়ায় আনন্দ লাভ করে, কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটাতে পারে, তারই জন্য ৫০ হাজার টাকার গল্পের বই কিনে শিশু কিশোরদের জন্য দিয়ে গেলাম। পাশাপশি গরীব ও মেধাবী ছাত্রদের জন্য ২০ হাজার টাকাও স্কুলকে দিলাম।’