শিল্প সাহিত্য

Temple Tell: জীর্ণমন্দিরের জার্ণাল- ২০৫।। চিন্ময় দাশ

Published by
KGP Desk

জীর্ণমন্দিরের জার্ণাল
চিন্ময় দাশ
শ্রীশ্রী রসিকনাগর জীউ মন্দির, জয়ন্তীপুর (চন্দ্রকোণা শহর) মন্দির নগরী চন্দ্রকোণা। এর অলিতে গলিতে মন্দির। অধিকাংশ মন্দির মহাদেব শিব এবং শ্রীকৃষ্ণ বা ভগবান বিষ্ণুর। সেগুলিরই একটি কৃষ্ণমন্দিরের আখ্যান আজকের জার্ণালে।

বৈষ্ণবীয় আরাধনার জন্য, এক সময় অনেকগুলি অস্থল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল চন্দ্রকোণায়—শ্রী সম্প্রদায়ের বড় অস্থল, রামানন্দী সম্প্রদায়ের ছোট অস্থল, ব্রহ্ম সম্প্রদায়ের মুড়াকাটা অস্থল ইত্যাদি।
এগুলির সাথে বেশ কয়েকটি শ্রীপাটও ছিল এই নগরীতে। শহরের পূর্ব এলাকা জিরাট মুণ্ডমালা মহল্লায় একটি শ্রীপাট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এক গোস্বামীবংশ। কুলদেবতা রসিকনাগর জীউর জন্য একটি মন্দিরও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাঁরা।
অন্য এক গোস্বামীবংশের বসবাস ছিল এই এলাকার জয়ন্তীপুর মহল্লায়। তাঁদেরও কুলদেবতা ছিলেন রসিকনাগর জীউ। শ্রীপাট গড়েননি, তবে, নিজেদের বাস্তুর ভিতর তাঁরা একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দেতার জন্য।
মন্দিরে রসিকনাগর-এর কষ্টিপাথরের নির্মিত মূর্তিটি ত্রিভঙ্গ ভঙ্গীমার। এছাড়া, শ্যামসুন্দর, রাধারানি, তিন মূর্তি গোপাল, লোকদেবী শীতলা, কয়েক মূর্তি বিষ্ণুশিলাও মন্দিরের অধিষ্ঠিত আছেন।
দিনে দিনে অনেকই বড় হয়েছে গোস্বামীবংশটি। তাঁদের কয়েকজন গোস্বামী থেকে চ্যাটার্জী হয়েছেন পদবী বদল করে। বংশটি  পালা করে দেবতার নিত্যপূজা করে থাকেন। তবে, সম্বৎসরের বড় পার্বণগুলি যৌথভাবেই আয়োজন করা হয় এখানে। পুরো বংশ নিজেরাই মন্দিরের পৌরহিত্য করেন।
জন্মাষ্টমী, রধাষ্টমী, নন্দ উৎসব, ঝুলন, রাসযাত্রা, পুষ্যাভিষেক, মকর, চাঁচর-দোল– পার্বণগুলির আয়োজন করা হয় বিশেষ সমারোহের সাথে। একটি রাসমঞ্চও ছিল দেবতার। তবে, সেটি বিনষ্ট হয়ে গিয়েছে।
রসিকনাগরের মন্দিরটি চার-চালা রীতির, পাথরের। মন্দিরের ভূমি-নকশা সম্পূর্ণ বর্গাকার। দৈর্ঘ্য-প্রস্থ সাড়ে ১৪ ফুট হিসাবে, উচ্চতা প্রায় ৩০ ফুট। দেওয়ালগুলি আড়াই ফুট পুরু।
অলিন্দ নাই এই মন্দিরে। সরাসরি গর্ভগৃহে প্রবেশ করতে হয়। তবে, উত্তর দিকেও অতিরিক্ত একটি দ্বার আছে। দুটি পথই খিলান-রীতির। গর্ভগৃহটির ভিতরের ছাউনি বা সিলিং হয়েছে চতুষ্কোণ লহরা পদ্ধতিতে।
মন্দিরের পাদপীঠ বা ভিত্তিবেদীর সিংহভাগই ভূমিগত হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে সামান্য ইঙ্গিতটুকু মাত্র টিকে আছে। তবে, পাদপীঠের উপর, ফুট তিনেক বিস্তারের, একটি প্রদক্ষিণ-পথ আছে। ভক্তগণ মন্দিরের দেবতাকে পরিক্রমা করতে পারেন সেই পথে।
মন্দির-সৌধের শীর্ষক বা চুড়াটি সুরচিত। পর পর প্রশস্ত বেঁকি, সুদৃশ্য আমলক, কলস এবং বিষ্ণুচক্র সমন্বিত চুড়াটি বেশ মনোরম।
সাক্ষাৎকারঃ সর্বশ্রী আলোক চ্যাটার্জী, দীপক চ্যাটার্জী, অরুণ চ্যাটার্জী, শৌভিক চ্যাটার্জী এবং শ্রীমতী মালা চ্যাটার্জী—জয়ন্তীপুর।
সহযোগিতাঃ শ্রী রামপ্রসাদ পাঁজা, ভূমি বিভাগের প্রাক্তন কর্মী—জয়ন্তীপুর।
পথনির্দেশঃ মেদিনীপুর শহর, চন্দ্রকোণা রোড স্টেশন কিংবা পাঁশকুড়া থেকে (ঘাটাল হয়ে) চন্দ্রকোণা পৌঁছানো যাবে। সেখানে চন্দ্রকোণা-ঘাটাল পথের উপরেই জয়ন্তীপুর।

Recent Posts

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল-২০৯ ।। চিন্ময় দাশ

জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল চিন্ময় দাশবিষ্ণু মন্দির, প্রজাবাড় (ময়না, পূর্ব মেদিনীপুর) যত দূর চোখ যায়, সবজি…

11 months ago

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের  জার্ণাল- ২০৮।। চিন্ময় দাশ

জীর্ণ মন্দিরের  জার্ণাল- ২০৮ চিন্ময় দাশ শ্রীশ্রী দামোদরজীউ মন্দির, হাসিমপুর (কেশিয়াড়ি, পশ্চিম মেদিনীপুর) মেদিনীপুর জেলার…

11 months ago

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল-২০৭।। চিন্ময় দাশ

জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল চিন্ময় দাশ শিব মন্দির, মিত্রসেনপুর (চন্দ্রকোণা, পশ্চিম মেদিনীপুর)বহুকালের প্রাচীন নগরী চন্দ্রকোণা। ভানবংশ,…

11 months ago

Templ Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল- ২০৬।। চিন্ময় দাশ

জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল চিন্ময় দাশলক্ষ্মীজনার্দন মন্দির, শ্রীরামপুর (সবং, পশ্চিম মেদিনীপুর) জমিদারী গড়েছিলেন বটে, বৈষয়িক ছিলেন…

11 months ago

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল-২০৪।। চিন্ময় দাশ

জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল— ২০৪ চিন্ময় দাশবিষ্ণু মন্দির, মার্কণ্ডপুর (পাঁশকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর) রূপনারায়ণ নদ—মেদিনীপুর জেলার পূর্বাংশের…

12 months ago

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল-২০৩ চিন্ময় দাশ

জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল-২০৩ চিন্ময় দাশ সীতারাম মন্দির, শ্রীধরপুর (দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর)রূপনারায়ণ, শিলাবতী আর কংসাবতী—মুখ্য তিনটি…

12 months ago