Wednesday, May 8, 2024

Russia-Ukraine Conflict: দেড় কিলোমিটার হেঁটে ঢুকেছি বাঙ্কারে, খাবার নেই, ফুরিয়ে আসছে জল! ইউক্রেনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা শোনালেন নারায়নগড়ের অনিন্দিতা

- Advertisement -spot_imgspot_img
অনিন্দিতা মাইতি

অনিন্দিতা মাইতি (ইউক্রেন): বৃহস্পতিবার দিনভর বোমা আর ক্ষেপণাস্ত্র পড়ার কানে তালা লাগানো আওয়াজ। ইউক্রেনের রাজধানী সেন্ট্রাল কিয়ভের পাশেই আমরা কয়েকজন মিলে একটা ১৬ তলা আ্যপার্টমেন্টে কয়েকটা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকি। বাংলা ছাড়াও ভারতের অন্যান্য প্রদেশের কয়েকজন ছাত্রী রয়েছে। আমার সিক্স্থ ইয়ার। জুনেই ফাইনাল পরীক্ষা আর তারপরই পাকাপাকি বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা ছিল কিন্তু তার আগেই সত্যি সত্যি যুদ্ধটা লেগেই গেল। যুদ্ধ লাগতে পারে এমন একটা সম্ভবনা তৈরি হচ্ছিল। স্থানীয় প্রশাসন থেকে আমাদের বলা হয়েছিল সবাই মিলে একসাথে, কাছাকাছি থাকার জন্য। বলা হয়েছিল শুকনো খাবার মজুদ করে রাখতে। শুকনো খাবার রেখেও ছিলাম কিন্তু তাড়াহুড়োতে সে সব আনতে ভুলে গেছি।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

বৃহস্পতিবার আমাদের রাত কেটেছে ওই ১৬ তলা
আ্যপার্টমেন্টের বেসমেন্টে। দিনভর থরথর করে কেঁপেছে বাড়ি। অতবড় বাড়ি সহজেই জঙ্গি বিমানের নজরে আসতে পারে, বাড়ি ভেঙে পড়তে পারে তাই শুক্রবার ভোরেই আমাদের সরিয়ে আনা হয় দেড়কিলোমিটার দুরে অন্য একটি বাড়ির নিচের বাঙ্কারে। আসার সময় ট্রলি ব্যাগে কোনও মতে ঢুকিয়ে নিয়েছিলাম কয়েকটি জামা কাপড়, মোবাইল, ল্যাপটপ, চার্জার পাসপোর্ট, পড়ুয়াদের জন্য বিশেষ রেসিডেন্সিয়াল কার্ড। কিন্তু শুকনো খাবার আনতেই ভুলে গেছি। দিনের বেলায় গোটা কিয়ভেই কার্ফূ্ চলছে। দোকানপাট বন্ধ খাবার কোথায় পাব জানিনা।

বাবা ও বোনের সঙ্গে অনিন্দিতা ( ছবির বাঁদিকে, হাতে মোবাইল)

যুদ্ধ লাগতে পারে এমন আশঙ্কায় দেশে ফেরার টিকিট কাটছিল প্রায় সমস্ত পড়ুয়া। টিকিটের দাম অসম্ভব বেশি। আমি প্রায় দ্বিগুণ দাম দিয়ে টিকিট কেটেছিলাম। আমার ফ্লাইট ছিল ২৮শে ফেব্রুয়ারি কিন্তু এখন সমস্ত আশাই তো শেষ। শুনতে পাচ্ছি বোরিসপিল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এখন প্রায় অগ্নিস্তূপ। সমস্ত উড়ান বন্ধ। ইন্ডিয়ান আ্যম্বাসি থেকে খবর পাচ্ছি দুটো বিশেষ বিমান পাঠানো হচ্ছে ভারতীয়দের নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে ওই বিমান তো বোরিসপিল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে নামতে পারবেনা। শুনছি রোমানিয়া সীমান্তে নামবে। আর আমরা যেখানে আছি সেখান থেকে রোমানিয়া সীমান্ত বাসে করে যেতে হয় আট থেকে দশ ঘন্টা। এই যুদ্ধ বিধ্বস্ত মাটির ওপর দিয়ে অত রাস্তা যাব কী করে? আমরা তো সামান্য দূরত্বের দোকানে যেতেই ভয় পাচ্ছি।

আমাদের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়নগড় ব্লকের বইতা জনার্দনপুর। বাবা অদ্বৈত কুমার মাইতি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভগবানপুর থানার এক্তারপুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমরা দু’বোন মা কণিকা মাইতি নিপাট গৃহবধূ। বাবা যেহেতু দুরে চাকরি করেন তাই আমাদের দু’বোনকে সামলানো মায়ের পক্ষে অসুবিধার হচ্ছিল। সংসারের যাবতীয় কাজ তাঁকেই সামলাতে হয়। তাই আমি বেলদায় মামাবাড়িতে থেকে পড়াশুনা করতাম। ২০১৬ সালে বেলদা গঙ্গাধর একাডেমি থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর ডাক্তারি পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ইচ্ছা ছিল শিক্ষিকা হব। কিন্তু রাজ্যে বছরের পর বছর এসএসসি পরীক্ষা নেই, শিক্ষক নিয়োগ নেই। বাধ্য হয়ে ডাক্তারি পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমার বোনও রাজস্থানের কোটায় ডাক্তারি প্রবেশিকার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর মাত্র ৪ মাসের মধ্যেই পড়ার কাজ শেষ হয়ে আসছিল তার আগেই এসে পড়ল যুদ্ধ। জানিনা কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

- Advertisement -
Latest news
Related news