নিজস্ব সংবাদদাতা: আশঙ্কা সত্যি করেই সেই মর্মান্তিক খবর এল। বাঙ্কার থেকে খাবার সংগ্রহে বেরিয়ে গোলাবর্ষণে মৃত্যু হল এক ভারতীয় পড়ুয়ার। এখুনি সরকারিভাবে সেই ভারতীয় পড়ুয়ার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু একটি সূত্র মারফৎ জানা গেছে ২১ বছর বয়সী নবীন শেখরাপ্পা ফাইনাল ইয়ারের ডাক্তারি ছাত্র ছিলেন। আগামী জুন মাসেই তাঁর পরীক্ষা শেষ করে পাকাপাকি ভাবে দেশে ফেরার কথা ছিল।

বিদেশ মন্ত্রকের তরফে সরকারিভাবে সেই ঘোষণার কিছুটা আগেই খারকিভে থাকা একাধিক ভারতীয় পড়ুয়া সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই খবর পোস্ট করেছিলেন। একটি সূত্রের খবর, মৃত ওই ভারতীয় পড়ুয়া নবীন কর্নাটকের হাভেরি জেলার বাসিন্দা। তিনি যখন বাঙ্কার থেকে বেরিয়ে খাবার সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন, সেইসময় গোলাবর্ষণে পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে। অন্য একটি সূত্র বলছে, রাশিয়ার সেনার একটি সরকারি ভবনে গোলাবর্ষণ করায় মৃত্যু হয়েছে নবীনের। সোশ্যাল মিডিয়ায় খারকিভ ন্যাশনাল মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে গোলাবর্ষণের ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে অনেক ভারতীয় পড়ুয়া পড়তে যান। ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়ার গোলাবর্ষণে খারকিভে কমপক্ষে ১১ জনের মৃত্যু খবর পাওয়া গিয়েছে। কিয়েভের উত্তরে এবং খারকিভ ও চেরনিহিভের আশেপাশে বোমা বর্ষণের মাত্রাও বাড়িয়েছে রাশিয়া।
তারইমধ্যে মঙ্গলবার সকালে ইউক্রেনে ভারতীয় দূতাবাসের তরফে সকল ভারতীয়কে কিয়েভ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একটি অ্যাডভাইজরি জারি করে ভারতীয় দূতাবাসের তরফে বলা হয়েছে, ‘পড়ুয়া-সহ সকল ভারতীয়দের জরুরিভিত্তিতে আজই কিয়েভ ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ট্রেন বা যে গণপরিবহণ পাওয়া যাচ্ছে তাতে চেপেই কিভ ছাড়ুন।’ যদিও ইউক্রেনে থাকা পড়ুয়ারা জানাচ্ছেন, কিভ থেকে ৮০০/৯০০ কিলোমিটার দূরে, রোমানিয়া কিংবা পোল্যান্ড সীমান্ত। ওই পথ কী ভাবে পাড়ি দেবেন পড়ুয়ারা? ট্রেনে জায়গা নেই, বাসে অসম্ভব ভাড়া। তাছাড়াও অতটা পথ যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যে দিয়ে যাওয়া! প্রচন্ড শীত, ভারী তুষারপাত। আর যেখানে বাইরে বেরুলেই ক্রমাগত বোমাবর্ষণ সেখানে কিভ থেকে নিরাপদে সরে যাওয়া যায় কী ভাবে?
ইউক্রেনের মরনফাঁদে আটকে পড়া ভারতীয় পড়ুয়াদের এই দুরাবস্থার জন্য ঘরে বাইরে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি সাংসদ বরুণ গান্ধী সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, “সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতির অভাবেই আজ ১৫ হাজার ভারতীয় পড়ুয়ার জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ইরাক কুয়েত যুদ্ধের সময় ভারত সরকার ১লক্ষ ৭০ হাজার মানুষকে দেশে ফিরিয়ে এনেছিল। তাঁরা কেউ পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলেননি।” বলাবাহুল্য এই কটাক্ষ সরাসরি মোদীকে ঘিরেই কারন ‘অপারেশন গঙ্গা’ নামে ইউক্রেন থেকে পড়ুয়াদের উদ্ধারের জন্য প্রধানমন্ত্রী যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন তাই নিয়ে উত্তরপ্রদেশের ভোটের বাজারে প্রচার চালাচ্ছেন মোদী, যোগী ও বিজেপি নেতারা এমনটাই অভিযোগ।
বিরোধীরা বলছেন, যুদ্ধ একদিনে লাগেনি, যুদ্ধ সম্ভবনা নিশ্চিত হতে শুরু করেছিল একমাসেরও বেশি সময় ধরে যখন থেকেই বলা হচ্ছিল ২০২২ সালের শুরুর দিকটাতেই রাশিয়া আক্রমন করতে চলেছে ইউক্রেনকে। অথচ সেই সময় ভারত সরকার নির্বিকার ছিলেন। গত ১ মাস ধরে দ্বিগুন, তিনগুন হয়েছে বিমানের টিকিটের দাম। তা স্বত্ত্বেও পড়ুয়ারা নিজের মত করে টিকিট কিনে দেশে ফেরার চেষ্টা করেছেন কিন্তু অত উড়ান কোথায়? ভারত সরকার সেই সময় থেকে নিজস্ব বিমান পাঠালে আজ একটিও পড়ুয়ার ইউক্রেনে পড়ে থাকার কথা নয়। ভারত সরকার বিমান পাঠাতে শুরু করেছেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ফলে বিমান নামতে পারছেনা ইউক্রেনের মাটিতে। বিমান নামছে রাজধানী কিভ থেকে ৮০০/৯০০ কিলোমিটার দূরে, রোমানিয়া কিংবা পোল্যান্ড সীমান্তে। বাঙ্কার থেকে বেরিয়ে কী ভাবে সেখানে যাবেন পড়ুয়ারা?
সরকারের তরফে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনার জন্য একাধিকবার বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ইউক্রেনের পরিস্থিতি নিয়ে বিশদে আলোচনা হয়েছে। ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনার জন্য চার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশগুলিতে পাঠানো হচ্ছে। হাঙ্গেরিতে যাবেন পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী। রোমানিয়ায় যাবেন অসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। স্লোভেনিয়ায় যাবেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু। কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) ভিকে সিং যাচ্ছেন পোল্যান্ড সীমান্তে। তারইমধ্যে সূত্রের খবর, ইউক্রেন থেকে ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনার জন্য বায়ুসেনাকে নির্দেশ দিয়েছেন মোদী।