নিজস্ব সংবাদদাতা: এলাকায় থাকতে দেওয়া যাবেনা বৃহন্নলাদের, অবিলম্বে ছাড়তে হবে এলাকা।তাদের বাড়ি ভাড়া দেওয়া যাবে না বলেও চলছে বাড়ির মালিককে হুমকি। এমনই অভিযোগ নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হলেন কিন্নর সমাজের মানুষজন। থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে খোদ শাসকদলের অঞ্চল সভাপতি বিরুদ্ধে।

ঘটনা নারায়নগড় থানার মকরামপুর এলাকা। খড়্গপুর-চেন্নাই ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে ওপর অবস্থিত মকরামপুর টোল প্লাজার কাছেই তিনটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন জনা ১৫ বৃহন্নলা। টোলের সামনে দাঁড়ানো গাড়ি থেকে টাকা পয়সা চেয়ে থাকেন। মূলতঃ এটাই জীবিকা এঁদের। ওই বৃহন্নলাদেরই এলাকা ছাড়তে হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে এমনই অভিযোগ দায়ের হয়েছে থানায়। নারায়নগড় থানায় তাঁরা অভিযোগ করেছেন শুধু তাঁদেরই নয়, বাড়ি মালিকদেরও ডেকে শাসানি দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে বাড়ির মালিক যদি বৃহন্নলাদের না তাড়ায় তবে তাঁদেরও বয়কট করা হবে।
আর এই অভিযোগ বৃহন্নলারা দায়ের করেছেন ওই অঞ্চলের তৃনমূল কংগ্রেস সভাপতির বিরুদ্ধে। অঞ্চল সভাপতি লক্ষ্মী শীট সরাসরি এই কাজ করছেন। কখনও কখনও রাতে ভিতে এসে ২ঘন্টার মধ্যেই বাড়ি ছাড়তে বলা হচ্ছে না হলে জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ভয়ে বৃহন্নলাদের বাড়ি ছাড়াতে বলছেন বাড়ি মালিকরা। শুক্রবার রাতে ঘটনার কথা জানাইয়ে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বৃহন্নলারা।
ওই বৃহন্নলাদের একজন ডলি কিন্নর বলেছেন, গত চারমাস ধরে চলছে এই অত্যাচার। কখনও রাত ৮ টায়, কখনও রাত ১০টায় হাজির হচ্ছেন ওই নেতা অথবা তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা। একবার প্রায় মধ্যরাতে থানার দ্বারস্থ হতে হয় আমাদের। সেই যাত্রা সমস্যা মিটলেও ফের একই জিনিস শুরু হয়। আমি খড়গপুরে থাকি ওরা ভয় পায় বলে রাতে আমাকেই ছুটতে হয়। গতকালও একই জিনিস হওয়ায় আমি ফের নারায়নগড় থানায় যাই। গতকাল অভিযোগ দায়ের করতে বাধ্য হয়েছি। মানুষ হিসাবে আমাদের বাঁচার অধিকার আছে কিনা জানতে চেয়ে আইনের দ্বারস্থ হয়েছি। আমাদের জিনা হারাম করে দিচ্ছেন ওই নেতা লক্ষ্মী শীট।
যদিও এই ঘটনা বেমালুম উড়িয়ে দিয়ে লক্ষ্মী শীট বলেছেন, ‘আমি এই ঘটনার কথা জানিনা। আমি এর মধ্যে নেই। কেন আমাকে জড়ানো হচ্ছে জানিনা। ওরা আছে, থাকবে।” তবে ঘটনার সত্যতা মিলেছে স্থানীয় বিধায়ক তৃণমূল নেতা সূর্য অট্ট বলেন, ‘শুক্রবার আমার অফিসে কিছু স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষ এসে অভিযোগ করেছেন যে, “বৃহন্নলার নাম করে বিভিন্ন জায়গা থেকে ছেলে মেয়েদের নিয়ে এসে মকরামপুরে বিভিন্ন বাড়িতে রাখা হচ্ছে। এলাকা শান্ত রাখার জন্য বিষয়টি আমি পুলিশকে বিষয়টি জানাই। তারপর কী হয়েছে জানি না।’
যদিও বৃহন্নলা নেত্রী ডলি বলেন, ‘ আমাদের মানুষজন টোল গেটের সামনেই গাড়ি থেকে টাকা চায়। ব্যবসায়ী বা স্থানীয় মানুষদের কাছেও চাইতে যায়না। এমনকি বাচ্চা নাচাতেও যায়না। সাধারণ এলাকায় কোনও দাবি বা আদায় করেনা ওরা। শুধুমাত্র টোলপ্লাজাতেই মানুষের কাছ থেকে সাহায্য প্রার্থনা করে। এলাকার কোনও মানুষকে বিরক্তিও করিনা। আমরা শুনেছি ওনারা এলাকাকে ‘হিজড়া মুক্ত’ করার গোপন কর্মসূচি নিয়েছেন।