শশাঙ্ক প্রধান: পরকীয়ার জেরে পর পর সন্তান সহ দুই গৃহবধূ পালিয়েছেন প্রেমিকের সাথে। কিছু দিন আগে এক গৃহবধূ ও তাঁর ৫ বছরের সন্তানকে ফিরিয়ে এনে পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছে পুলিশ। যদিও এখনও অবধি খোঁজ মেলেনি আড়াই বছরের সন্তান নিয়ে পালিয়ে যাওয়া আরেক গৃহবধূর। তারই মধ্যে এবার বিপরীত কান্ড ঘটে গেল পশ্চিম মেদিনীপুরের সেই পিংলা থানা এলাকাতেই।

ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা থানার জামনা গ্রামপঞ্চায়েতের অন্তর্গত পিংলা গ্রামে। গৃহবধূর দেহ উদ্ধার হয়েছে সোমবার। পুলিশ জানিয়েছে মৃতার নাম মৌসুমী মাইতি। গৃহবধূর বয়স ২৭ বছর। মৌসুমীর বাপের বাড়ি পার্শ্ববর্তী সবং থানার কাঁটাখালি গ্রামে। ৮ বছর আগে পিংলা গ্রামের শ্রীমন্ত মাইতির সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। তাঁদের একটি ৫ বছরের পুত্রসন্তান রয়েছে। শ্রীমন্তর বাড়ি পিংলা থানার পেছনেই, কয়েকশ মিটারের মধ্যেই। শ্রীমন্ত পেশায় রাজমিস্ত্রী। বাড়িতে বাবা-মা রয়েছেন। ভাই নিলাদ্রি মাইতি জরির কাজ করতে হাওড়া জেলার বাগনানে থাকত। মাঝেমধ্যে বাড়ি আসত। এবার এসেছিল ২৫ ডিসেম্বর উপলক্ষ্যে।
শ্রীমন্তর অভিযোগ সোমবার বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে এক ব্যক্তির বাড়িতে রাজমিস্ত্রির কাজ করছিলেন তিনি। দুপুর ১.৩০ নাগাদ ভাত খাওয়ার জন্য বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে ঘরের ভেতরে ঢোকেন। পেছনের একটি ঘরে গিয়ে দেখতে পান মৌসুমী গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় বাঁশের ধরনা থেকে ঝুলছেন। স্বামীর চিৎকারে ছুটে আসে প্রতিবেশীরা,খবর যায় পিংলা থানায়। পুলিশ ছুটে আসে।
উদ্ধার করা হয় মৌসুমীকে। নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানেই মৃত বলে ঘোষণা করা হয় মৌসুমীকে। ঘটনার খবর পেয়ে মৌসুমীর বাবা ঘটনাস্থলে আসে যদিও কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেননি তিনি। ওই দিনই পুলিশ মৌসুমীর স্বামী ও দেওরকে থানায় ডেকে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করে। সেখানেও ভাইয়ের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করেনি শ্রীমন্ত। ফলে ওই দিন পুলিশ কেবলমাত্র একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে।
মঙ্গলবার ওই গ্রামের কিছু গ্রামবাসী একটি সালিসী সভায় দুই ভাইকে নিয়ে বসে। গ্রামবাসীদের ওই অংশ দাবি করে গৃহবধূ যেভাবে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলছিল তা আত্মহত্যা হতেই পারেনা। সালিসী উপস্থিত গ্রামবাসীদের দাবি নীলাদ্রিকে চেপে ধরতেই সে স্বীকার করে যে বৌদির সঙ্গে তাঁর চারবছর ধরে পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। সে চেয়েছিল বৌদি তার সাথে পালিয়ে যাক কিন্তু বৌদি পালিয়ে যেতে রাজী না হওয়ায় সে খুন করেছে। এই সালিসী সভার পরই শ্রীমন্ত ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। শ্রীমন্তর দাবি, সে আগে জানতনা যে ভাইয়ের সঙ্গে স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে। ভাই জানানোর পরই সে বিষয়টি জানতে পারে এবং তার ভিত্তিতেই সে অভিযোগ দায়ের করেছে। এরপরই পিংলা থানার পুলিশ মঙ্গলবার নীলাদ্রিকে গ্রেফতার করে এবং খুনের মামলা দায়ের করে। যদিও নীলাদ্রি এই খুনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পুলিশের একটি সূত্র অবশ্য জানাচ্ছে এটি খুনের ঘটনা নয়। এটি আত্মহত্যাই। পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত এবং ময়নাতদন্তের প্রাথমিক সূত্রও আত্মহত্যার তত্ত্বকেই সায় দিচ্ছে। এটা ঠিকই যে মৌসুমীর সাথে নীলাদ্রির ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। নীলাদ্রি বাইরে কাজ করে নিজের বাবা-মার পাশাপাশি বৌদিকেও টাকা পাঠাতো। দেওর বৌদি সম্পর্কের কথা গ্রামবাসীদের কেউ কেউ যেমন জানত তেমন জানত মৌসুমীর বাপের বাড়ির লোকেরা। যে কারনে বাপের বাড়ি থেকে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। মনে করা হচ্ছে মৌসুমী চাইছিল সন্তানকে নিয়ে দেওরের সাথে পালাতে। কিন্তু নীলাদ্রি লোকলজ্জার ভয়ে সেটা করতে রাজি হয়নি। আর সেই অভিমান থেকেই আত্মহত্যা করেছে মৌসুমী।