Saturday, July 27, 2024

MIdnapore: মেদিনীপুরের রাহুলদের দোকান সাজাচ্ছেন ব্যবসায়ী থেকে গৃহবধূ, কলেজ পড়ুয়ারা ! বছর ভর বিনামূল্যে জামা কাপড় পাচ্ছেন দুঃস্থরা

- Advertisement -spot_imgspot_img

নিজস্ব সংবাদদাতা: একদিনের বা মরশুমের দান নয়। শুধু বন্যার সময় কিংবা শীতের সময় নয়, সারা বছরের দোকান খুলেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের রাহুল কোলে, দেবাশিস ভূঁইয়া, বাপ্পা মান্না, অতনু কুইলা, সৌমেন সাউ, সৌমেন দত্ত সহ একগুচ্ছ তরতাজা তরুণের দল। কোথাও সেই দোকানের বয়স ১মাস, কোথাও ৭দিন আবার কোথাও দোকান খোলার অপেক্ষায়। এদের বেশিরভাগই আকাট বেকার। দোকানের জন্য মূলধন তো দুরের কথা নিজেদেরই পকেট খরচা জোগাড় হয়না কিন্তু দোকান চলছে রমরমিয়ে। কারন তাঁদের দোকান সাজিয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ী, গৃহবধূ, কলেজ পড়ুয়া থেকে নানা স্তরের মানুষজন। কেউ কিনে দিচ্ছেন নতুন জামা কাপড় আবার কেউ দিচ্ছেন অব্যবহৃত জামা কাপড় শাড়ি।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

মেদিনীপুর কলেজ থেকে ইতিহাসে এম.এ করার পর বি.এড করেছেন রাহুল কোলে। সৌমেন সাউ গ্র্যাজুয়েট। চাকরি বাকরি জোটেনি বলে নিজের বেকার সময়কে বেখাতে বইয়ে দিতে রাজি নন রাহুল, সৌমেন, দেবাশিসরা। এঁদের কেউ চালান উদ্যোগী সংঘ সমাজ কল্যাণ সমিতি আবার কেউ পরিচালনা করেন প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন নামে সমাজ কল্যাণ মূলক প্রতিষ্ঠান।

রাহুলদের দোকানের জন্য জামা কাপড় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন তরুণী

এই দুটি সংস্থা এক সাথে হাত মিলিয়ে শুরু করেছেন এই অভিনব দোকান, যা কিনা এক এক করে উদ্বোধন হতে চলেছে বিভিন্ন এলাকায়। রাহুল জানিয়েছেন, “একজন মানুষের এক প্রস্ত জামা কাপড়ে বছর কাটেনা। অন্ততঃ ৩ প্রস্ত জামা কাপড়ের প্রয়োজন। কিন্তু নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসারে সবার জন্য তিন প্রস্ত জামা কাপড় কেনা সম্ভব নয়। আমরা তাই ঠিক করেছি দুঃস্থ পরিবারগুলি সেই তিন প্রস্ত জামা কাপড় নিয়ে যাবেন এই দোকান থেকে। বছরে তিনবার তাঁরা আসবেন এবং পছন্দমত ও প্রয়োজন মত জামা কাপড় নিয়ে যাবেন।”

কাজটা শুরু করার আগে একটু ভাবনা ছিল রাহুল সৌমেনদের কিন্তু দিন যত গড়িয়েছে দেখা যাচ্ছে সমস্যা কেটে নতুন নতুন বিনা পয়সার দোকান খোলার উৎসাহ পাচ্ছেন তাঁরা। রাহুল জানিয়েছেন, আমরা শুরুটা করেছিলাম গত ২৬শে নভেম্বর মেদিনীপুর সদর ব্লকের বেঙ্গাই গ্রামে একটা দোকান দিয়ে। কয়েকজন সহৃদয় ব্যক্তি আমাদের জামা কাপড় দিয়ে সাহায্য করে। এরপর স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বাপি পাল প্রায় ১০০জনের জামা কাপড়ের ব্যবস্থা করে দেন একাই। ২রা ডিসেম্বর মেদিনীপুর শহর লাগোয়া ভূঞা পাড়ায় একটা দোকান খোলা হয়। এই দুটি দোকান চলছে। তৃতীয় দোকানটি খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে আগামী রবিবার শ্রীরামপুর গ্রামে।

রাহুলরা ‘বেঁচে থাকার লড়াই’ নাম দিয়ে একটি ফেসবুক ওয়াল শুরু করে সেখানে সমস্ত মানুষকে আহ্বান জানান, নতুন কিংবা অব্যবহৃত জামা কাপড় শাড়ি ইত্যাদি দান করার জন্য। সেই আবেদন করার পর অভূতপূর্ব সাড়া মিলেছে। মেদিনীপুর তো বটেই এবার এগিয়ে আসেন শালবনী, গড়বেতা সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষরা। চন্দ্রকোনা রোডের বাসিন্দা সঞ্চয়িতা আচার্য মহাশয়া ও শালবনী দূর্গা মন্দির সংলগ্ন এলাকার গৃহবধু সহ এগিয়ে এসেছেন স্কুল ও কলেজ পড়ুয়ারা। নিজেরা গাড়ি ভাড়া করে এসে জামাকাপড় দিয়ে গেছেন রাহুলদের ভান্ডারে।

জামা কাপড় দান করেন মিতু পড়িয়া, অঙ্কিতা পড়িয়া, বেদনা মহাপাত্র, শুভজিত বক্সি, টুম্পা পড়িয়া, গিরি পড়িয়া, অর্পিতা পড়িয়া, প্রমুখ। কলেজ ছাত্রী অঙ্কিতা ও শুভজিত বক্সি সহ বহু মানুষ। এঁদের কেউ যেমন জামা কাপড় কিনে দিয়েছেন তেমন কেউ আবার জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, বন্ধুর বিয়েতে উপহার পাওয়া জামা কাপড় ইত্যাদি নিয়ে এসেছেন। অতএব রাহুলদের দোকান চলতেই থাকবে।

- Advertisement -
Latest news
Related news