নিজস্ব সংবাদদাতা: একেই কী বলে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা না দেওয়া? সবই যখন মোটামুটি স্বাভাবিক চলছিল তখুনি নিয়ম ভাঙার অনুমতি মিলল কী করে? প্রশাসন কী জানতনা তৃতীয় ঢেউয়ের কথা? তা’হলে কেন অনুমতি দেওয়া হয়েছিল পার্কস্ট্রিটে বর্ষবরণের হৈ-হুল্লোড়ের, লাখো মানুষের জমায়েতে? একটা প্রশ্ন উঠছে, হুল্লোড় করবে মানুষ আর দায় নেবে সরকার? উত্তরটাও তৈরি আছে, যখন সরকার নিয়ম বেঁধে দিয়েছিল তখন তো মানুষ হুল্লোড় করেনি। দুর্গাপূজায় প্রশাসনিক মদতটা খুব জরুরি ছিল? যদি পুজো না হত, মেলা না হত, খেলা না হত, আমাদের ছেলেমেয়েগুলো কী আর কটা মাস বাড়তি স্কুল করার সুযোগ পেতনা? প্রশ্নটা তর্ক বিতর্কের নয়, ভেবে দেখার। ভাবতে এই কারনেই হবে যে করোনা বাতাসে ছড়ায় না, মানুষের সংস্পর্ষে হয়। সেই ভাবনা থেকেই অনেকে এমনটাই মনে করছেন যে করোনার সংক্রমন দাহ্য পদার্থে মারাত্মক আগুনটা লেগেছে পার্কস্ট্রিটের বর্ষবরণ মাতামাতি থেকেই।
গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কলকাতা পুলিশের আরও ১৩ জন আধিকারিক।
সূত্রের খবর, গত ২৪ ঘণ্টায় যে ১৩ জনের শরীরে করোনার হদিশ মিলেছে, তাঁদের অধিকাংশই বড়দিন এবং নববর্ষের ডিউটিতে পার্ক স্ট্রিটে মোতায়েন ছিলেন। সবমিলিয়ে কলকাতা পুলিশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩। দিনকয়েক আগেই কলকাতা পুলিশের অনেক আধিকারিকের শরীরে করোনার অস্তিত্ব মিলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বাহিনীর আরও সদস্যের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। সূত্রের খবর, ওই সময়ের মধ্যে এক আইপিএস অফিসার-সহ কলকাতা পুলিশের ১৩ জন আধিকারিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অধিকাংশ আধিকারিকই বড়দিন এবং নববর্ষের সময় পার্ক স্ট্রিটে ডিউটি করছিলেন। বিশেষত বড়দিনে তো পার্ক স্ট্রিটে জনসমুদ্র আছড়ে পড়েছিল।
রবিবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, শেষ ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৬,১৫৩ জন করোনা আক্রান্তের হদিশ মিলেছে। সংক্রমণের হার ১৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। যা কিনা পাঁচ শতাংশের নীচে থাকা অত্যন্ত জরুরি। তাও নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা এখনও কম আছে। পরীক্ষার সংখ্যা বাড়লে আক্রান্তের ছবিটা আরও স্পষ্ট হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সবথেকে বেশি উদ্বেগ বাড়িয়েছে কলকাতা। শেষ ২৪ ঘণ্টায় শুধু কলকাতায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩,১৯৪ জন। সঙ্গে যোগ হয়েছে ওমিক্রনের আতঙ্ক।
গত সোমবার রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ ছিল ৪৩৯। রবিবার তা বেড়ে ছাড়িয়ে গেল ছ’হাজারের গণ্ডি। অর্থাৎ, বিগত ছয় দিনে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যায় প্রায় ১৫ গুণ বেশি বৃদ্ধি দেখা গেল রাজ্যে। শুধু কলকাতাতেই দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়াল তিন হাজার। পাল্লা দিয়ে অস্বাভাবিক হারে সংক্রমণ বাড়ছে মহানগরী সংলগ্ন হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। শুধু তাই নয়, রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণের হারও পৌঁছে গেল ১৬ শতাংশের একেবারে দোরগোড়ায়।
গত বুধবার রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ হাজারের গণ্ডি পার করেছিল। শুক্রবার তা ছাড়িয়েছিল তিন হাজার। শনিবার সেই সংখ্যাটা পৌঁছে গিয়েছিল সাড়ে চার হাজারে। রবিবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৬ হাজার ১৫৩ জন। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি আক্রান্ত কলকাতায়। বিগত এক সপ্তাহে গোটা রাজ্যের মধ্যে কলকাতাতেই সংক্রমণ বৃদ্ধির হার সব চেয়ে বেশি। মহানগরীতে গত বুধবার যেখানে সাড়ে পাঁচশোর কাছাকাছি দৈনিক সংক্রমণ ছিল, শনিবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২ হাজার ৩৯৮। রবিবারই সেই সংখ্যাটা ছুঁল ৩ হাজার ১৯৪। দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যার বিচারে জেলাভিত্তিক তালিকায় কলকাতার পরেই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। ওই জেলায় শুক্রবার নতুন আক্রান্ত পাঁচশোর কাছে পৌঁছেছিল। রবিবার তা পৌঁছে গেল হাজারের কাছে। নতুন করে সংক্রমিত ৯৯৪ জন। এরপরও না ভাবলে ভাববেন কখন?