নিজস্ব সংবাদদাতা: এতদিনে তার নামটা তো সবারই জানা হয়ে গেছে। সেই যে আসানসোলের সেই যুবক যার বাবা পিডব্লুডি(PWD)র অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আর মা ছিলেন শিক্ষিকা। ছিলেন এই কারনে যে ছেলে চুরি করে ধরা পড়ার লজ্জায় আত্মহত্যা করেছেন তিনি। তাঁদেরই একমাত্র সন্তান সৌমাল্য চৌধুরী । সুদর্শন, সুপুরুষ এবং ইংরেজিতে এম.এ পাশ। এর আগে একাধিকবার ধরা পড়েছে সৌমাল্য। শেষবার গত জুন মাসে হাওড়ার সাঁকরাইলে। আর এবার ধরা পড়লেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে একটি চুরির মামলায়। আর তাকে ধরে হতবাক ঘাটালের শীর্ষ পুলিশ আধিকারিকরা! ১৭০টি চুরির রেকর্ড রয়েছে তার নামে।
পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্মীর একটি ফ্ল্যাট থেকে তিন লক্ষাধিক টাকার গয়না চুরি হয়। ঘটনা ঘাটাল থানার কোন্নগর এলাকার একটি ফ্ল্যাটের। যেখানে মহাশ্বেতা দে নামে এক বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মী থাকেন। গত ৩ জানুয়ারি তাঁর আবাসনের গেটের তালা ভেঙে লক্ষাধিক টাকার সোনার গয়না চুরি হয়। সেই চুরির ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। ফ্ল্যাটের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে একটি মোটরবাইক আরোহী ঢুকে যাচ্ছে আবাসন প্রাঙ্গনে। বেশ কিছুক্ষণ বাদে বেরিয়ে যায় সেই আরোহী। মোটরবাইকের নম্বর প্লেট নেই কিন্তু মোটরবাইকটি অদ্ভূত ধরনের। সেই মোটরবাইকের সন্ধান করতে করতেই ঘাটাল থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক (OC) দেবাংশু ভৌমিক তাঁর দল নিয়ে পৌঁছে যান পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায়। ধরে আনেন এক যুবককে যার নাম সৌমাল্য চৌধুরী। ইদানিং পাঁশকুড়াতেই ঘরভাড়া নিয়ে থাকছিল সে।
সোমবার ঘাটাল আদালতে তোলা হলে বিচারক ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে একাধিক চুরির অভিযোগ রয়েছে ধৃতের বিরুদ্ধে। লিপিবদ্ধ সেই চুরির পরিমান ১৭০টি। ঘাটালের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (SDPO) অগ্নিশ্বর চৌধুরী বলেন, ‘এমন অদ্ভুত শখ বা পেশা বেছে নেওয়া দেখে আমি তো অবাক। ইংরেজিতে মাস্টার ডিগ্রি করেছেন উনি। গত বছর হাওড়ায় এক চুরির ঘটনায় ধরা পড়ার পর তাঁর চাকরি চলে যায়। ভদ্র পরিবারের ছেলে। ছেলে চোর হয়েছে জেনে মা আত্মহত্যা করেছেন। ধৃতকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’
জানা গেছে, সৌমাল্য একসময় আসানসোলেই থাকতেন। ইংরেজিতে মাস্টার্স করার পর বাবা ছেলের জন্য খড়গপুরে রেলের একটি চুক্তিভিত্তিক কাজও জুটিয়ে দেন বলে খবর। কিন্তু পুলিশকে সৈমাল্য জানিয়েছে , চাকরি তাঁর পছন্দের নয়। চোর হওয়াটাই তার কাছে বেশ থ্রিলের! চুরিকেই পেশা করেছেন তাই। আসানসোলে থাকতেই এক ফুল দোকানির কাছে চুরির প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তিনি। শুরু করেছিলেন মায়ের গহনা দিয়ে। খড়গপুরে চাকরি পাওয়ার পরই আসানসোলে একটি চুরির ঘটনায় ধরা পড়ে তাঁর চাকরি চলে যায়। তবে তাতে দুঃখ নেই। ছাড়া পেলে আবার চুরি করবেন? পুলিশ অফিসারের এই প্রশ্ন শুনে নাকি মুচকি হেসেছেন সৌমাল্য।