নিজস্ব সংবাদদাতা: আবারও কী তবে অতীত হতে চলেছে সৈকত শহরে সোনালী সূর্যছটা মেখে স্বপ্নের ঘোড়দৌড়? বৃহস্পতিবার এরকমই নির্দেশ জারি করা হয়েছে দিঘা জুড়ে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী দিঘার বুকে ঘোড়া নিষিদ্ধ করেছে দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ। সৈকত শহর ও সমুদ্র তট থেকে পুরোপুরি ঘোড়া সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট ঘোড়া ব্যবসায়ীদের।

দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়নপর্ষদ সূত্রে জানানো হয়েছে, ঘোড়ার ক্ষুরে নষ্ট হচ্ছে সৈকতের সংবন্ধন, নষ্ট হচ্ছে সৈকত সরনীর রাস্তা, ঘোড়ার বিষ্ঠা সমুদ্রের জলে মিশে বিষাক্ত জল স্নানে নামা পর্যটকদের শারীরিক ক্ষতি করছে। এই জিনিস চলতে পারেনা। তাই ঘোড়া নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বক্তব্য দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের প্রশাসক মানস কুমার মন্ডল বলেছেন, ‘দিঘার বিষ্ঠা অত্যন্ত মারাত্মক যার সংস্পর্শে আসলে মানবদেহের গুরুতর ক্ষতি হয়। সমুদ্র সৈকতে ঘোড়া ব্যবহারের সময় ঘোড়া বিষ্ঠা ত্যাগ করে যা সমুদ্রের জলে মিশছে। এক দিকে জলদূষিত হচ্ছে অন্যদিকে সেই জল পর্যটকদের শরীরে লাগায় ক্ষতি হচ্ছে তাঁদের। ঘোড়ার ক্ষুরে বিচ থেকে বালিয়াড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের সৈকত সরনীর টাইলসের রাস্তা ভাঙছে। তাই ঘোড়া আর দিঘায় চলতে দেওয়া যাবেনা।’
মন্ডল আরও জানিয়েছেন, ‘পর্যটকদের পক্ষ থেকে বহু অভিযোগ আসছিল।’ সমুদ্র তটে ভিড়ের মধ্যে ঘোড়া ছোটানোয় দুর্ঘটনার শিকারও হয়েছেন পর্যটকরা। পশ্চিমবঙ্গ তথা সারা দেশের আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকা এই পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে মানুষের অভিযোগ চাইনা আমরা। দিঘা এবং পর্যটনের স্বার্থেই দিঘায় ঘোড়া নিষিদ্ধ করা হল।’ এদিকে এই নিষেধাজ্ঞাকে ঘিরে অনিশ্চিত জীবনের শঙ্কায় ঘোড়া ব্যবসায়ী পরিবারগুলি। ২৬টি পরিবারের শতাধিক সদস্য এই ঘোড়ার ওপরই জীবিকা নির্বাহ করেন। গত ৬৫ বছর ধরেই এই ঘোড়া ছুটিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন এঁরা। গত প্রায় ২বছর ধরে দফায় দফায় লকডাউন এমনিতেই মেরে রেখেছে মানুষগুলিকে। তার ওপর এই নতুন ফরমানে বিপর্যস্ত তাঁরা।
বেশ বিপাকে পড়েছেন ঘোড়া কারবারিরা। ঘোড়া ব্যবসায়ী সিরাজুল শেখ জানিয়েছেন, গত ২বছর ধরে লকডাউনের কারনে ঘোড়াকে দানা জোগানোর পরিস্থিতিই নেই অনেকের। তাই হয়ত আস্থাবল ছেড়ে বর্তমানে সমুদ্র শহরের ঘোড়াগুলি যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তা’বলে সরকার ঘোড়া ব্যবসা বন্ধ করে দিলে আমরা প্রাণে মারা যাব। সরকার যদি নেহাতই ঘোড়া নিষিদ্ধ করতে চান তাহলে আমাদের বিকল্প ব্যবস্থা করে দিন। দোকান করার স্টল করে দিন। নচেৎ আমরা ঘোড়া ব্যবসা বন্ধ করবনা।”
যদিও এধরনের নির্দেশ এই প্রথম না। এর আগেও কয়েকবার একই কারন দেখিয়ে ঘোড়ার কারবারে লাগাম পরাতে চেয়েছে প্রশাসন। কিন্তু ঘোড়া ব্যবসায়ীদের আন্দোলন সেই লাগাম ছিঁড়েছে বারবার। এবার কী হয় সেটাই এখন দেখার। কারন আন্দোলনের পথেই নামছেন ব্যবসায়ীরা।