নিজস্ব সংবাদদাতা: বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা নাগাদ দিঘার একটি হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের হোটেলের দুটি তলের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। তার চেয়েও বড় ঘটনা এই অগ্নিকাণ্ড প্রশ্ন তুলে দিয়েছে পর্যটকদের কাছে কতটা নিরাপদ দিঘার এই হোটেলগুলো। হোটেলে থাকা পর্যটকরা জানিয়েছেন, করোনাকালের জন্য

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা নাগাদ আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে নিউ দিঘার হোটেল ভিক্টোরিয়াতে। প্রথমে দোতলায় আগুন লাগে যা কিনা ক্রমশঃ গ্রাস করে তিন তলাকেও। আগুন লাগার জেরে কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় আশপাশের এলাকা। পর্যটকদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। আধঘন্টার মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের ২টি ইঞ্জিন। চারটি ব্রাঞ্চ দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে দমকল বাহিনী। যদিও এরই মধ্যে আগুন আর ধোঁয়ার ফাঁদে আটকে পড়েন চারতলায় থাকা পর্যটকরা। সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে তাঁরা দেখেন গলগল করে ধোঁয়া উঠে আসছে চারতলায়। তাঁরা আতঙ্কে নিজেদের প্রাণ বাঁচানোর আবেদন জানিয়ে চিৎকার করতে থাকেন ব্যালকনিতে বেরিয়ে। কিন্তু দু’তলা এবং তিন তলায় আগুন থাকায় কারুরই পক্ষে চারতলায় যাওয়া সম্ভব হচ্ছিলনা।
এবার প্রাণের ভয়ে কয়েকজন পর্যটক জানলা দিয়ে গেলে রেইন পাইপ বেয়ে নীচে নামতে থাকেন। ওই হোটেলে ঘন্টা খানেক আগেই এসে উঠেছিলেন দার্জিলিংয়ের শিলিগুড়ির বাসিন্দা বিশ্বনাথ রায়। তিনি জানিয়েছেন, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় অল বেঙ্গল মার্শাল আর্টের একটি প্রতিযোগিতা করার জন্য স্থানীয় আয়োজকদের সঙ্গে তিনি আলোচনার জন্য এসেছিলেন। ওই প্রতিযোগিতার প্রতিযোগীদের এই হোটেলেই থাকার কথা ছিল। তাই আলোচনার পাশাপাশি হোটেলের ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখতে এসেছিলেন তিনি। বিশ্বনাথের কথায়, ‘স্থানীয় আয়োজকদের সঙ্গে আলোচনার মধ্যেই আমরা পোড়া কিছুর গন্ধ পাই। বাইরে বেরিয়ে জানলা দিয়ে ধোঁয়া দেখতে পাই। আমাদের প্রাথমিক ধারণা ছিল হোটেলের পাশে কিছু জ্বালানো হয়েছে। কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যেই জানলা দিয়ে ঘরের মধ্যে ধোঁয়া ঢুকতে দেখে সবাই মিলে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামতে যাই। সিঁড়িতে গিয়ে দেখি পুরো সিঁড়ি কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। আমাদের দমবন্ধ হয়ে আসছিল। এরপর জানলার পাশে একটি রেইন পাইপ দেখতে পেয়ে সেটা বেয়ে নীচে নেমে এসেছি। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ তিনি আমাদের সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছেন।’
ওই স্থানীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে থাকা মহিষাদলের বাসিন্দা বিধান জানা তখনও আতঙ্কে কাঁপছেন। বিশ্বনাথের সঙ্গে বিধান ও তাঁর সঙ্গীরা রেইন পাইপ দিয়ে নীচে নেমে প্রাণে বেঁচেছেন। বিধান জানালেন, ‘এক ভয়াবহ মৃত্যুর হাত থেকে আজ রক্ষা পেলাম। চোখের সামনেই দেখলাম এক মহিলা ও তাঁর স্বামী ব্যালকনির রেলিং টপকে জানলার রড ধরে পাইপ আশ্রয় করে নামছেন। মহিলা শেষ অবধি ঠিকঠাক নেমে আসতে পারলেও তাঁর স্বামী আতঙ্কে এতটাই কাঁপছিলেন যে শেষ অবধি পাইপ ধরে রাখতে না পেরে হাত ফস্কে পড়ে যান।” অন্যদিকে ব্যালকনির রেলিং টপকে বেশ কয়েকজন পর্যটককে নিচে ঝাঁপ দিতে দেখা যায়। করোনাকালীন নিষেধাজ্ঞা থাকায় মাত্র জনা কুড়ি পর্যটক ছিলেন ওই হোটেলে। নচেৎ বড়সড় প্রানের ক্ষয় ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা ছিল।
দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর রামনগরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক দিলীপ কুমার গুছাইত জানিয়েছেন, হোটেলের দ্বিতীয় ও তৃতীয়তল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও কী কারণে এই আগুন লেগেছে তা এখুনি বলা সম্ভব নয়। হোটেলের অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ও অগ্নিসুরক্ষা কতটা ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হোটেল কর্মীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন হঠাৎই হোটেলের সিঁড়ির লবি থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ওই হোটেলে ইলেকট্রিকের কাজ চলছিল। মনে করা হচ্ছে, শর্ট সার্কিটের কারণে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।
হোটেলের অন্ততঃ ১৫টি রুম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে। রামনগর ১ পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ তথা দিঘার শঙ্করপুর হোটেল আ্যশোসিয়েশনের সভাপতি সুশান্ত পাত্র বলেছেন প্রাথমিক পর্যবেক্ষনের পর আমার মনে হয়েছে চার থেকে পাঁচ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আর দিঘার হোটেল পর্যটকদের জন্য কতটা সুরক্ষিত সেই প্রশ্নও তুলে দিয়ে গেছে এই আগুন।