নিজস্ব সংবাদদাতা: বুধবার হাভাতে মার্কা জামা কাপড় পরা ছেলেটাকে গেটে আটকে দিয়েছিল আইআইটি খড়গপু্রের নিরাপত্তারক্ষীরা। বলেছিল ভেতর দিয়ে ওপাশে যাওয়ার রাস্তা নেই। প্রাচীরের বাইরে দিয়ে প্রেমবাজারের দিকে যেতে হয়। ছেলেটি বলল, আমি আইআইটিতে ভর্তি হতে এসেছি। হেসে কুটোকুটি নিরাপত্তারক্ষীরা। এরপরই নিজের রদ্দি মার্কা থলে থেকে কাগজ পত্তর বের করে দেখায় সে। আর তাই দেখে চক্ষু চড়ক গাছ নিরাপত্তা রক্ষীরা! তাঁরা দেখেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে বি টেকে ভর্তি হওয়ার জন্য নির্বচিত হয়েছে ছেলেটা। জানা গিয়েছে, বাঁকুড়ার শালতোড়ার পাবড়া নামক এক প্রত্যন্ত গ্রামের রাস্তায় সাইকেলে চেপে ফেরিওয়ালার কাজ করতেন মেধাবী ছাত্র ছোটন কর্মকার। এবার তিনি ভর্তি হয়েছেন খড়্গপুর আইআইটিতে।
উল্লেখ্য, ছোটনের বাবা কানাই কর্মকার সংসার চালাতে সাইকেলে চেপে গ্রামে গ্রামে ঘুরে চুড়ি-ফিতে এবং খেলনা বিক্রি করতেন। একটা সময়ে ছোটনকেও করতে হয়েছে ওই কাজ। যদিও, তাঁর লক্ষ্য ছিল অন্য। আর সেই লক্ষ্যপূরণের জন্যই কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি আজ পৌঁছে গিয়েছেন আইআইটি পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার তিনি ভর্তি হন আইআইটিতে। তার আগে বুধবার সন্ধ্যেনাগাদ পৌঁছে যান আইআইটি ক্যাম্পাসের সামনে। এক্কেবারে সাধারণ পোশাকের ওই মেধাবী ছাত্রকে ক্যাম্পাসের গেটের সামনে ইতস্তত ঘুরতে দেখে আইআইটির নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁর পথ আটকান। আর তারপরেই পুরো ঘটনা জানতে পেরে চমকে যান তাঁরাও। সঠিকভাবে কাগজপত্র দেখে ছোটনকে সসম্মানে প্রবেশের অনুমতি দেন তাঁরা।
ছোটনের বাবা কানাই কর্মকার অবশ্য আইআইটি সম্পর্কে বেশি কিছু জানেন না। শুধু জানতেন, যদিও, সেখানে পড়তে গেলে প্রচুর টাকার দরকার। যার সামর্থ্য তাঁর ছিল না। এদিকে, ছোটনের বাড়িতে রয়েছে বাবা, মা ও দাদা। এমতাবস্থায়, মেধাবী ছোটনকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন অভিজিৎ মণ্ডল নামের স্থানীয় এক শিক্ষক। পাশাপাশি, ছোটনকে ট্রেনে তুলে দিতে এসে তাঁকে একটি গীতা এবং ভর্তির টাকা দিয়ে যান তিনি। এই প্রসঙ্গে অভিজিৎ বাবু জানিয়েছেন, অত্যন্ত মেধাবী ওই ছাত্রের পরিবারকে খুব কষ্ট করে অন্নসংস্থান করতে হয়। তাই, ছোটনের আইআইটিতে ভর্তির টাকা ওঁদের কাছে ছিল না। তবে, কয়েকজন সমাজকর্মীর দৌলতে এটা সম্ভব হয়েছে। পরবর্তীকালে ছোটন আরও সহৃদয় ব্যক্তিদের পাশে পাবেন বলেও জানান তিনি।
প্রচন্ড প্রতিকূলতার মধ্যেই বাংলা মিডিয়ামের সরকারি স্কুলে পড়াশোনা করেই আইআইটিতে যোগ্যতার সাথে প্রবেশ করছেন ছোটন। ছোটন বলেছেন, “এটা যে আদৌ সম্ভব হয়েছে, এটাই বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। আমি শালতোড়ার এক প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে। জেইই মেইন-এর পর অ্যাডভান্সড-এ বসে ভালো র্যাঙ্ক পেয়েছিলাম। কিন্তু এখানে ভর্তির মত টাকা ছিল না। সেটাও জুটে গেল। এখনও ভাবতেও পারছি না যে, আমি আইআইটিতে দাঁড়িয়ে আছি।”