পশ্চিমবঙ্গ

Haldia: ‘নিয়োগ করব কি? কারখানাই বন্ধ হতে বসেছে!’ রাজ্যের দুই মন্ত্রীর সামনে ‘গুন্ডামি’ চিত্র তুলে ধরলেন হলদিয়া সার কারখানার আশঙ্কিত আধিকারিক

Published by
KGP Desk

নিজস্ব সংবাদদাতা: রাজ্যের একমাত্র সার (N.P.K 10:26:26) কারখানায় উৎপাদন তলানিতে ঠেকছে, আলুচাষীরা সার পর্যাপ্ত সার পাচ্ছেননা, কালোবাজারি চলছে সারের। কৃষকরা রীতিমত মারামারি করছে সারের জন্য। আর তার একমাত্র কারণ হলদিয়ায় রাজ্যের ওই একমাত্র সার কারখানায় কার্যত গুন্ডামি রাজ চালাচ্ছে মুষ্টিমেয় শ্রমিক। আর সেই শ্রমিকদের পেছনে রয়েছে রাজ্যের শাসকদলের একাংশই। কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রশাসনের সর্বস্তরে জানিয়েও কোনও ফল হয়নি। গত ৯০ দিনে কারখানার উৎপাদন অর্ধেক হয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের কারখানা গুলিতে স্থানীয় যুবকদের নিয়োগ সংক্রান্ত একটি সমন্বয় সভায় হাজির হয়ে এমনই অভিজ্ঞতা হল রাজ্যের সেচ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র এবং মৎসমন্ত্রী অখিল গিরির। যদিও ঘটনা এটাই যে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিধায়ক হিসাবে এই ঘটনা তাঁদের অজানা থাকার কথা নয়। যেমনটা অজানা থাকার কথা নয় জেলার জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের। তবুও বৃহস্পতিবার রাজের মন্ত্রী ও জেলার সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্তাদের সামনেই আরও একবার উচ্চারিত হল রাজ্যের কল কারখানাগুলিকে কী পরিমাণ দুর্বৃত্তায়ন ‘ফেস’ করতে হচ্ছে তারই কথা।

বৃহস্পতিবার হলদিয়ার দুর্গাচকের কুমারচন্দ্র জানা প্রেক্ষাগৃহে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছিল শিল্প খাতে সমন্বিত শ্রম ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ক আলোচনা সভা যার বাহারি নাম “Synergy between Industry and Govt. Departments vis-a-vis Employment generation.” যার মদ্দা কথা হল রাজ্যের কারখানা গুলিতে স্থানীয় বেকার যুবক যুবতীদের সম্ভাব্য কর্মসংস্থান করা। সরকার পক্ষ ছাড়াও আমন্ত্রিত ছিলেন কারখানাগুলির পদাধিকারীরা। আলোচনার প্রস্তাবনায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলা শাসক পূর্ণেন্দু মাজি রাজ্য সরকারের তরফে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিকে কি পরিমান সাহায্য সহযোগিতা করা হচ্ছে তার একটি নাতিদীর্ঘ বক্তব্য রাখেন। এরপরই বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কারখানার পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখার অনুরোধ করা হয় আর এই পর্বেই হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের আসল চিত্র উঠে আসে রাজ্যের একমাত্র সার কারখানা ইন্দোরামা কর্তৃপক্ষর কথায়।

ইন্দোরামা সার উৎপাদন কারখানার ভাইস প্রেসিডেন্ট (এইচ আর) পার্থসারথী ব্যানার্জী জানান, তাঁদের স্থায়ী অস্থায়ী মোট ৮০০ কর্মীর মধ্যে মাত্র ৭০/৮০জন ঠিকা শ্রমিক গত ৩ মাস ধরে লোডিং প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছেনা। এরফলে পরিবহনের জন্য উৎপাদিত সার লরি ইত্যাদিতে বোঝাই করা যাচ্ছেনা। যেহেতু সার কারখানা থেকে বের হচ্ছেনা তাই সেগুলিকে গুদাম জাত করতে হচ্ছে। এদিকে গুদামে স্থান সঙ্কুলান ক্রমশ সংকুচিত হওয়ায় উৎপাদন কমিয়ে দিতে হচ্ছে। পার্থসারথী ব্যানার্জী আরও জানিয়েছেন, কিন্তু পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে তাতে এবার উৎপাদনটাই বন্ধ করে দিতে হবে।

কারখানার ভাইস প্রেসিডেন্ট জানান, ‘আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা দিন প্রতি ৩২০০টন যা আমরা বর্তমানে ১৮০০ টনে নামিয়ে আনতে হয়েছে। আমরা এও আশঙ্কা করছি যে এই কারনে উৎপাদন না বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তাই নয় আমরা এও আশঙ্কা করছি যে ওরা কারখানায় অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করে ধর্মঘটের পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। কারখানায় ভয়ভীতির পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে।’ কারখানা কর্তৃপক্ষর এক আধিকারিক জানান, ‘ওই শ্রমিকদের দাবি কী আমরা জানিনা, কোনও আলোচনায় বসানো যাচ্ছেনা ওদের। বিষয়টি হলদিয়া ও জেলার তৃনমূল নেতৃত্ব, পুলিশ, প্রশাসন সর্বস্তরে জানানো হয়েছে কিন্তু কোনও ফল হয়নি। কাদের সঙ্গে আলোচনা করব, কারা ওদের নিয়ন্ত্রণ করে কেউ বলতেই পারছেনা।’

রাজ্যের এই কারখানাটি পরশ (Paras) ব্র্যান্ড নামে নাইট্রোজেন ফসফেট পটাশ মিলিত সার উৎপাদন করে থাকে। এই সার আলু চাষীদের জন্য বিশেষ উপযোগি। রাজ্য সরকার এর বিপণন ক্ষেত্র ও পরিমান নির্ধারণ করে দেন যাতে হুগলি, বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর প্রভৃতি আলুচাষের জায়গাগুলিতে পর্যাপ্ত সারের যোগান যায়। এর বাইরে অন্য রাজ্য থেকেও কেন্দ্র সরকারের নির্দেশ মত কিছু সার আসে। দুর্ভাগ্যবশত: হলদিয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হবার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্র নির্ধারিত সারও ওই এলাকায় আসছেনা ফলে তীব্র কালোবাজারি তৈরি হয়েছে। কোথাও কোথাও সারের জন্য মারামারির পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।

অবশ্য এই চিত্র শুধু হলদিয়ার একটি কারখানারই নয় বরং বলা যেতে পারে কমবেশি সব কারখানার। খোদ আইওসি (IOC) কেও ‘ফেস’ করতে হচ্ছে এই সমস্যা। কারখানার নিয়মমাফিক মেরামতির জন্য শাটডাউন চলছে আইওসির। বিভিন্ন ঠিকাদারের অধীনে ৪ হাজার চুক্তি ভিত্তিক শ্রমিক প্রায় ১৯০দিন কাজ করবেন এই শাটডাউন পর্যায়ে। আইওসির এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, “স্থানীয় মানুষদের নিয়োগ করার জন্য আমরাও এখানকার শাসকদলের নেতাদের কাছে নামের তালিকা চেয়েছি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কেউ তালিকা দিতে পারেননি। অথচ কিছু মানুষ প্রতিদিনই গেটের সামনে এসে ঝামেলা করে যাচ্ছেন। নিত্য নতুন অশান্তির পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। এই যদি পরিস্থিতি হয় তবে এখানে নতুন বিনিয়োগ হবে কী করে?”

ঘটনা হচ্ছে গোটা হলদিয়ার শিল্পাঞ্চল এখন শাসকদলের একাধিক গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। এঁদের বেশিরভাগেরই কোনও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ নেই। পেশিবল আর গোষ্ঠীবলের ওপর দাঁড়িয়েই বিভিন্ন কারখানাগুলির ওপর আধিপত্য স্থাপন, লোকনিয়োগের নামে টাকা আদায়, তোলা আদায় ইত্যাদি চলছে। হলদিয়া নেতৃত্ব কাউকে ঘাঁটাতে সাহস পাচ্ছেনা। বৃহস্পতিবার অবশ্য জেলাশাসক একটি কমিটি তৈরি করার কথা বলেছেন। আশ্বস্ত করেছেন প্রতি ১৫দিন অন্তর ওই কমিটি বসে শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি বিচার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। যদিও এতেও আতঙ্ক কাটছেনা শিল্প কর্তাদের।

Recent Posts

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল-২০৯ ।। চিন্ময় দাশ

জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল চিন্ময় দাশবিষ্ণু মন্দির, প্রজাবাড় (ময়না, পূর্ব মেদিনীপুর) যত দূর চোখ যায়, সবজি…

11 months ago

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের  জার্ণাল- ২০৮।। চিন্ময় দাশ

জীর্ণ মন্দিরের  জার্ণাল- ২০৮ চিন্ময় দাশ শ্রীশ্রী দামোদরজীউ মন্দির, হাসিমপুর (কেশিয়াড়ি, পশ্চিম মেদিনীপুর) মেদিনীপুর জেলার…

11 months ago

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল-২০৭।। চিন্ময় দাশ

জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল চিন্ময় দাশ শিব মন্দির, মিত্রসেনপুর (চন্দ্রকোণা, পশ্চিম মেদিনীপুর)বহুকালের প্রাচীন নগরী চন্দ্রকোণা। ভানবংশ,…

11 months ago

Templ Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল- ২০৬।। চিন্ময় দাশ

জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল চিন্ময় দাশলক্ষ্মীজনার্দন মন্দির, শ্রীরামপুর (সবং, পশ্চিম মেদিনীপুর) জমিদারী গড়েছিলেন বটে, বৈষয়িক ছিলেন…

12 months ago

Temple Tell: জীর্ণমন্দিরের জার্ণাল- ২০৫।। চিন্ময় দাশ

জীর্ণমন্দিরের জার্ণাল চিন্ময় দাশ শ্রীশ্রী রসিকনাগর জীউ মন্দির, জয়ন্তীপুর (চন্দ্রকোণা শহর) মন্দির নগরী চন্দ্রকোণা। এর…

12 months ago

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল-২০৪।। চিন্ময় দাশ

জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল— ২০৪ চিন্ময় দাশবিষ্ণু মন্দির, মার্কণ্ডপুর (পাঁশকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর) রূপনারায়ণ নদ—মেদিনীপুর জেলার পূর্বাংশের…

12 months ago