নিজস্ব সংবাদদাতা: হলদিয়া এবং পূর্ব মেদিনীপুরের তৃনমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব কিংবা দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে বন্দর শহরের ঠিকাদারদের নিয়ে বৈঠক করেছেন আইএনটিটিউইসি (INTTUC) রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় (Ritabrata Banerjee) আর তাকে ঘিরেই জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে শাসকদলের অন্দরেই। বিষয়টিকে নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিজেপিও। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হলদিয়া টাউনশিপের ওই বৈঠকে কেন তাঁদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হলনা কেনই বা তাঁদের অজ্ঞাতসারে এই বৈঠক তা নিয়ে অসন্তোষ কাজ করছে দলের ভেতরেই।
উল্লেখ্য হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে তোলাবাজি গত ১দশকে প্রায় শিল্পের মর্যাদা পেয়েছে। শাসকদলের ছোটবড় নেতাদের তোলাবাজির জেরে প্রাণ ওষ্ঠাগত শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে ঠিকাদারদের। তোলা না পেলেই হুমকি, কাজ বন্ধ করে দেওয়া ইত্যাদি নানারকম উপদ্রবে অতিষ্ঠ তাঁরা। বিষয়টি নিয়ে দুই মন্ত্রী ও জেলাশাসকের উপস্থিতিতে একটি সরকারি বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন শিল্পাঞ্চলের এক কর্তা। বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয় সরকার।
মাস খানেক আগেই পুরানো দুই নেতাকে বহিস্কার করে দলের শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি করা হয়েছে নতুন এক শ্রমিক নেতা শিবনাথ সরকারকে। তার ঠিক পরে পরেই স্থানীয় কোনও শ্রমিক নেতা ছাড়াই ঠিকাদারদের সঙ্গে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দলের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতির ওই বৈঠক তোলা বিতর্ককেই ফের উস্কে দিল। বিষয়টি নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছে বিজেপি। বিজেপির শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বরা বলছেন, ‘তোলাবাজির কেন্দ্রীকরন করল তৃনমূল নেতারা। আগে স্থানীয় নেতারা তোলা তুলতেন ভাগ যেত রাজ্যে। এবার সরাসরি রাজ্যই তোলা তুলবে।
সূত্র মারফৎ জানা গেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হলদিয়া টাউনশিপে ঠিকাদারের সঙ্গে যে বৈঠকটি করেছেন আইএনটিটিউসির রাজ্য সভাপতি বৈঠক করেছিলেন সেখানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী মলয় ঘটক। এই বৈঠকে ডাকা হয়নি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি শিবনাথ সরকারকে। ডাকা হয়নি জেলা তৃনমূল কংগ্রেসেরও কাউকেই। হলদিয়ার এক তৃনমূল নেতা জানিয়েছেন, ‘ জেলার শ্রমিক নেতৃত্ব এমনকি মাদার সংগঠনের নেতৃত্বও অন্ধকারে ছিল এই বৈঠক সম্পর্কে। বৈঠকে ঠিকাদারদের উপস্থিত করার জন্য পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। শিল্পাঞ্চলের থানাগুলির বড়বাবুদের বলা হয় তাঁর থানার অধীন ঠিকাদারদের উপস্থিত করতে হবে! এলাকার সংগঠন গড়বে থানা? তাহলে আমাদের প্রয়োজন কোথায়? পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কিংবা হলদিয়ার আইএনটিটিইউসি ইউনিট রাখার কী দরকার তবে? পুলিশ দিয়েই সংগঠন চালানো হোক!’
এই ধরনের বৈঠকের খবর পাওয়ার পর রীতিমতো ক্ষুব্ধ হলদিয়া শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলির শ্রমিকরাও। তাঁদের বক্তব্য, শ্রমিক সংগঠন কাদের জন্য? শ্রমিক না ঠিকাদারের? এখন তো দেখছি উনি (ঋতব্রত) ঠিকাদারদেরই নেতা হয়ে বসেছেন। নাম প্রকাশের এক শ্রমিক বলেন, ” উনি রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাদের সঙ্গে অর্থাৎ শ্রমিকদের সঙ্গে একটিও বৈঠক করেননি। গত প্রায় একদশক ধরে শ্রমিকদের সিওডি বা চার্টার অফ ডিমান্ড নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ কিংবা ঠিকাদারদের সাথে কোনও আলোচনা হচ্ছেনা। জেলায় নতুন সভাপতি হওয়ার পর উনি বলেছিলেন, এবার শ্রমিক সিওডি নিয়ে কথা হবে। এখন দেখছি উনি নিজের সিওডি নিয়েই ঠিকাদারদের সাথে আলোচনা করেছেন!’
হলদিয়া বন্দরের বিজেপি নিয়ন্ত্রিত শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি প্রদীপ বিজলী বলেন, ‘ এ আর নতুন কথা কী? ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় শাসকদলের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি হয়েছেন এত তদবির করে। ওঁদের দলে তো শুনেছি বড় পদ পেতে বড় অংক খসাতে হয়। সেই টাকা তুলতে হবেনা ? স্থানীয় নেতাদের বৈঠকে ডাকলে ঠিকাদারদের কাছ থেকে আদায়াকৃত তোলার ভাগ দিতে হবে স্থানীয় নেতাদের। তাই সরাসরি বৈঠক করেছেন। বেচারা স্থানীয় নেতারা। তাঁদের দলের নেতারাই তাঁদের মর্যাদা দেননা তো শ্রমিক, জনগন ওদের মানবে কেন?”