Thursday, May 16, 2024

বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে স্বনির্ভরতা ও কর্ম সংস্থানের নয়া দিশা দেখাতে উদ্যোগ রামকৃষ্ণ সারদা মিশন আশ্রমের

- Advertisement -spot_imgspot_img

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ মাত্র ৩ বছর আগে যাত্রা শুরু করেছিল স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে উজ্জীবিত এই মিশনটি কিন্তু তারই মধ্যে মিশনের আদর্শে যেন ৩ টি দশক এগিয়ে গেছে। শনিবার ৩ রা ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষ্যে হলদিয়ার দুর্গাচকে কুমার চন্দ্র জানা প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত ঠাসা কর্মসূচীর মধ্যেই এমনই আলোচনায় মশগুল হতে দেখা গেল অতিথি অভ্যাগত থেকে উপস্থিত অনেককেই।  এদিনের অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য ছিল প্রতিবন্ধীদের স্বনির্ভরতা ও কর্ম সংস্থানের পথ দেখানো। রামকৃষ্ণ সারদা মিশন আশ্রমের মহাধ্যক্ষ স্বামী  বিবেকাত্মানন্দ মহারাজের ভাবনায় দয়া বা অনুগ্রহ নয়, প্রতিবন্ধীরা দাঁড়াবেন নিজের পায়ে, নিজের জোরে। সেই পথটাই তাঁদের দেখিয়ে দেওয়া। যে যেখানে উপযুক্ত সেই পেশায় তাঁদের সংযুক্ত করা।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

এদিন এই উপলক্ষ্যে প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রতিবন্ধীদের জন্য স্ব-রোজগার মেলা ও কর্মশালা। কলকাতার নামী সংস্থা রেড্ডিজ ফাউন্ডেশন একাজে সহযোগিতায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই ফাউন্ডেশন ইতিমধ্যেই এই কাজে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় রেখেছে। এই উপলক্ষ্যে হলদিয়ার বিভিন্ন শিল্প সংস্থাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রতিবন্ধীদের কেরিয়ার কাউন্সেলিংয়ের জন্য কোথায় কাজের সুযোগ রয়েছে সেবিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়। উদ্যোক্তারা জানান, আমরা সব্বাই কোথাও না কোথাও প্রতিবন্ধী। যে যা জানিনা সে সেখানে প্রতিবন্ধী। তবুও আমরা কোথাও না কোথাও পেশায় নিয়োজিত। ঠিক তেমনই যাঁদের আমরা প্রতিবন্ধী বলে থাকি তাঁদেরও যদি ঠিক জায়গায় নিয়োজিত করতে পারি সেখানে তাঁরা সফল হবেন।

এদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত চলা একগুচ্ছ কর্মসূচীর মধ্যে একটি বর্নাঢ্য পদযাত্রা ছাড়াও আয়োজন করা হয়েছিল প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের বিনা খরচে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির। বিভিন্ন হাসপাতালগুলির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মহকুমা হাসপাতালের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে প্রতিবন্ধী সণাক্তকরণ শিবির অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবন্ধীদের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও পুনর্বাসন নিয়ে একটি মূল্যবান আলোচনা করেন রাজ্যের প্রাক্তন ডেপুটি ডিরেক্টর অনিরুদ্ধ বসু। এদিন শতাধিক প্রতিবন্ধীকে ট্রাই সাইকেল, হুইল চেয়ার, শ্রবণ যন্ত্র, দৃষ্টিহীনদের মোবিলিটি স্টিক প্রদান করা হয়। মিশনের এই উদ্যোগে সামিল হতে দেখা গেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা ও হলদিয়া মহকুমা প্রশাসন, হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর, হলদিয়া মহকুমা হাসপাতাল ও পুরসভা, দেউলপোতা সেবা সমিতি ও বিভিন্ন শিল্প সংস্থাকে।

২০১৯সালের মার্চ মাসে পথ চলা শুরু করেছিল রামকৃষ্ণ সারদা মিশন আশ্রম। এই মাত্র ৩ বছরে গ্রামে গ্রামে দুঃস্থ মানুষের জন্য বিনামূল্যে চোখের শিবিরের পাশাপাশি শিল্পশহরে শ্রমিক-কর্মচারীদের কমখরচে চোখের চিকিৎসার জন্য মিশনের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে আধুনিকমানের ক্লিনিক ও সার্জারি বিভাগ। যা ইতিমধ্যেই যথেষ্ট সফল। এরপরই
মিশন কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগ যেখানে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী মানুষকে সামাজিক পুনর্বাসন, তাদের স্বনির্ভরতার দিশা দেখানো এবং কর্মসংস্থান নিয়ে পরামর্শ দেওয়ার। আগামী দিনে মিশনের লক্ষ্য বন্দর শহরে একটি স্থায়ী প্রতিবন্ধী সহায়তা কেন্দ্র গড়ে তোলা। স্বামী বিবেকাত্মানন্দ মহারাজ জানান সেই স্থায়ী কেন্দ্রটি গড়ে তোলার লক্ষ্যেই আজকের এই উদ্যোগ। শুধু জেলা নয় সমগ্র রাজ্যের সমস্ত প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন হয়ে উঠবে এই কেন্দ্র এটাই আমাদের লক্ষ্য।”

সঙ্ঘের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অসীমকুমার বেরা জানিয়েছেন, “সন্ন্যাসী ও গৃহী মানুষদের নিয়ে তৈরি এই সংস্থার লক্ষ্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মহিলাদের স্বনির্ভরতা নিয়ে কাজ করা। শুধু তাই নয় চলছে নতুন নতুন পরীক্ষা নিরীক্ষাও। যেমন প্রতিবন্ধীদের কষ্ট লাঘবে সূর্যরশ্মি থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ শক্তি দ্বারা পরিচালিত হুইল চেয়ার তৈরির উদ্যোগ শুরু হয়েছে হলদিয়ায়। একাজে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে হলদিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের আইডিয়া ল্যাব। কলেজের শিক্ষক ও পড়ুয়ারা কম খরচে এধরনের হুইল চেয়ার তৈরির কাজ শুরু করেছে। হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ, হলদিয়া এনার্জি লিমিটেড, পেট্র কার্বন, ইন্দোরামা সহ একাধিক সংস্থা প্রতিবন্ধীদের যৌথভাবে একাজে সহযোগিতা করছে।”

- Advertisement -
Latest news
Related news