নিজস্ব সংবাদদাতা: জামিনের সমস্ত সম্ভবনাই বাতিল হয়ে গেল তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) প্রাক্তন মহাসচিব তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কলঙ্ক প্রাক্তন শিক্ষা ও শিল্প মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee)। এমনিতেই ব্যপক অংকের টাকা উদ্ধার মামলায় ইডি (Enforcement Directorate) গ্রেফতার করেছে তাঁকে। সাধারন ভাবে ইডি গ্রেফতার করলে জামিন পাওয়া কঠিন তার ওপর এসএসসি (SSC) দুর্নীতি মামলায় জেলে হেফাজতে থাকাকালীনই তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে প্রাথমিক চার্জশিট জমা দিল সিবিআই (CBI)। এই চার্জশিটে এসএসসি “নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় মাস্টারমাইন্ড পার্থ চট্টোপাধ্যায়” এমনটাই সিবিআই দাবি করেছে বলে জানা গেছে।
আইনজ্ঞদের বক্তব্য এর ফলে এই মামলা শেষ না হওয়া অবধি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন পাওয়া কার্যতঃ অসম্ভব হয়ে পড়ল। তাঁদের বক্তব্য সাধারন কোন বড়সড় মামলায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চার্জশিট জমা না দিলে জামিন পাওয়ার একটা সম্ভবনা থাকে। জামিনের আপিল করে আসামীর আইনজীবী আদালত কে জানায় “কোনও নির্দিষ্ট চার্জ আনতে না পারা সত্ত্বেও বিপক্ষ ইচ্ছা করে তাঁর মক্কেলকে জেলে রাখতে চাইছে। এতে তাঁর মক্কেলের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।” সেক্ষেত্রে জামিন পাওয়ার একটা সম্ভবনা থাকে কিন্তু চার্জশিট জমা হওয়ায় সেই সম্ভবনা অনেকটাই কমে গেল। দ্বিতীয়ত, সিবিআই এই মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে মাস্টার মাইন্ড বলে দাবি করে তাঁকে জেলে রেখেই শুনানির দাবি করবে যাকে বলে কাস্টডি ট্রায়াল।
উল্লেখ্য পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে ইডি। অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি নগদ অর্থ এবং একাধিক সোনা গয়না উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে গোটা বাংলায়। পরবর্তীতে পার্থ-অর্পিতার নামে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি এবং একাধিক বিস্ফোরক তথ্যের সন্ধান পায় তদন্তকারী অফিসাররা। এর মাঝেই কয়েকদিন পূর্বে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে সিবিআই। আর এদিন অবশেষে আদালতের নিকট একটি প্রাথমিক চার্জশিট পেশ করল তারা।
উল্লেখ্য, সিবিআইয়ের চার্জশিটে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অশোক সরকার, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় এবং শান্তি প্রসাদ সিনহার মতো মোট ১৬ জনের নাম থাকার পাশাপাশি দাবি করা হয়েছে যে, “পার্থ এসএসসি সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলার মাস্টারমাইন্ড।” উক্ত মামলায় প্রথম থেকেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর আইনজীবীরা দাবি করে আসছেন, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় যে কারচুপি হয়েছে, সেই সম্পর্কে কোন কিছুই জানতেন না প্রাক্তন তৃণমূল কংগ্রেস মহাসচিব।
পাশাপাশি স্কুল সার্ভিস কমিশন সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি এবং শান্তি প্রসাদ সিনহা, অশোক সরকারের মতো শিক্ষা আধিকারিকদের বিরুদ্ধে একাধিক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনা হয়েছে চার্জশিটে। তবে শুধুমাত্র সিবিআইয়ের চার্জশিটই নয়, এর আগেও বাগ কমিটির রিপোর্টে এসএসসি উপদেষ্টা কমিটিকে ‘অবৈধ’ বলে ঘোষণা করা হয়; যা তৈরি করেছিলেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ফলে সবমিলিয়ে অতীতে বাগ কমিটির রিপোর্ট এবং বর্তমানে সিবিআইয়ের চার্জশিটে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অস্বস্তি যে আরো বাড়ল, তা বলাবাহুল্য। আর সেই অস্বস্তি অনেকগুন বেড়ে গেল জামিনের সম্ভবনা প্রায় নাকচ হয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায়।