নিজস্ব সংবাদদাতা: শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা বর্তমান শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের যাবতীয় স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তির হলফনামা কোর্টে জমা করতে বলেছেন। কিন্তু আরও যে বিষয়টি উল্লেখযোগ্য যে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আদালতের এজলাসে এও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পোষ্য কুকুরের জন্য একটি ফ্ল্যাট রয়েছে কলকাতার বুকেই। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পরই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা রাজ্য জুড়ে যে পার্থ চট্টোপাধ্যায় কত ধনী ব্যক্তি যে তিনি কুকুরের জন্য একটি আলাদা ফ্ল্যাট কিনতে পারেন? প্রশ্ন এটাও যে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এই আয়ের উৎস জানার জন্যই কি আদালত তাঁকে তাঁর স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির বিবরণ হলফনামা আকারে জমা দিতে বলেছেন?
জানা গেছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হয়ে মামলা লড়তে এসেছিলেন বরিষ্ঠ আইনজীবী তৃনমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। মামলা শুরু হওয়ার আগেই এজলাসে ব্যক্তিগত আলাপচারিতা চলছিল বিচারক গঙ্গোপাধ্যায় ও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে। অনেকদিন পরে বিচারক গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে এসেছেন কল্যাণ বাবু। তাই নিয়েও বিচারক গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর কুশল প্রশ্ন করেন। এরপরই কথায় কথায় চলে আসে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সম্পত্তির প্রশ্ন। এখানেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘আপনি কি জানতে চান যে আপনার মক্কেলের পোষ্যের জন্য কোথায় ফ্ল্যাট রয়েছে। আপনি কী নাকতলায় অবস্থিত আপনার মক্কেলের আ্যলসেশিয়ানের ফ্ল্যাটের ঠিকানা জানতে চান?’ এই প্রশ্নে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কিছুটা থমকে যেতে দেখা যায়।
এরপরই বিচারপতি বলেন, ‘ওঁর সব সম্পত্তি নিয়ে তদন্ত হোক। ওনার আ্যলসেশিয়ানের জন্য কোথায় ফ্ল্যাট আছে এটা তো সবার জানা দরকার। বিচারপতি বলেন, আমি কিন্তু একটা বাচ্চার মত নির্দেশ দেইনি। আমি সব বুঝেই নির্দেশ দিয়েছি। আপনার মক্কেলের কী বলার আছে, হলফনামা দিন।’ এরপরই বিচারপতি বলেন, আমি ওঁর আয়ের উৎস জানতে চাই। কোনও দিন সুযোগ পেলে গান্ধি পরিবারেরও আয়ের উৎস জানতে চাইব।’ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য এসএসসি মামলায় একটি নতুন সংযোজন বলে মনে করা হচ্ছে যেখানে এসএসসি দুর্নীতি মামলার শুনানিতে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তো বটেই কিন্তু নাকতলায় কুকুরের জন্য ফ্ল্যাট চমকে দিয়েছে গোটা রাজ্যকে।
এদিকে যে ভাবে বিচারপতি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পোষ্যর প্রজাতি আ্যলসেশিয়ান আর ফ্ল্যাটের অবস্থান যে নাকতলায় এটা বলার মধ্যে দিয়ে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিয়েছেন যে যথেষ্ট হোম-ওয়ার্ক করেই তিনি এই মামলায় নেমেছেন এবং নিয়মিত হোম-ওয়ার্ক করেও যাচ্ছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের যে নাকতলায় নিজের পোষ্য আ্যলসেশিয়ানের জন্য একটি ফ্ল্যাট রয়েছে তা তিনি জানালেন কী করে? এসএসসি দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় তদন্ত শুরু করে দিয়েছে CBI. তারা কী তবে তদন্তে উঠে আসা বিভিন্ন রিপোর্ট বিচারপতিকে জমা দিতে শুরু করেছেন? সেই রিপোর্টেই কী পাওয়া গেছে আ্যলসেশিয়ানের জন্য নাকতলায় ফ্ল্যাট থাকার খবর? নাকি তৃনমূলের কোনও নেতা গোপনে পার্থের বিরুদ্ধে এই তথ্য সরবরাহ করছে? ঘটনা যাইহোক না কেন এসএসসি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কুকুরের জন্য ফ্ল্যাট একটি ভিন্ন মাত্রা সংযোজন করল বলেই মনে করা হচ্ছে।