Monday, May 13, 2024

Midnapore Teacher Protest: ‘সরকার মুখে মানবিক, কাজে অমানবিক!’ পশ্চিম মেদিনীপুরে মন্ত্রীর গড়েই মন্ত্রীর খোঁজ চেয়ে খালি গায়ে বিক্ষোভ শিক্ষক-ল্যাব আ্যসিটেন্টদের

- Advertisement -spot_imgspot_img

শশাঙ্ক প্রধান : কর্মসংস্থান নয় আসলে কর্মহীন করা হচ্ছে মানুষদের। এই সরকার মুখে মানবিক কিন্তু কাজে চূড়ান্ত অমানবিক। গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে চুপি চুপি ছাঁটাই করা হয়েছে ২১৮জন ল্যাব আ্যসিটেন্ট এবং ১২২জন শিক্ষককে। পশ্চিম মেদিনীপুরে এই ছাঁটাইয়ের সংখ্যাটা যথাক্রমে ৫৯ এবং ৮৫জন। তলে তলে চলছে আরও ছাঁটাই প্রক্রিয়া আর এই অভিযোগ তুলেই রবিবার খোদ মন্ত্রীর গড়েই মন্ত্রীর সন্ধান চেয়ে খালি গায়ে বিক্ষোভ দেখালেন সমগ্র শিক্ষা অভিযান বা NSQF শিক্ষকরা। ছুটির দিনে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায় হাওড়া-মুম্বাই জাতীয় সড়কে শিক্ষকদের দেখা গেল খালি গায়ে গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে কারিগরী মন্ত্রীর ‘সন্ধান চাই’ বলতে।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

বিক্ষোভরত শিক্ষকরা জানালেন,” আমাদের আর আলাদা করে কাজের দিন নেই, আমাদের ভাতে মেরে চিরছুটির ব্যবস্থা করছে এই সরকার তাই রবিবারও রাস্তায় নেমেছি। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা এই শিক্ষকরা জানিয়েছেন, NSQF শিক্ষকদের এখন কারিগরি মন্ত্রকের আওতায় নিয়ে গেছে সরকার আর কারিগরি মন্ত্রী গত সাত মাস ধরে আমাদের সময় দিতে পারছেননা। দেখা করছেননা তাই আমরা ডেবরায় তাঁরই বিধানসভা ক্ষেত্রে এসেছি তাঁর খোঁজ করতে।”

রাজ্য NSQF শিক্ষকদের সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক
শুভদীপ ভৌমিক বলেন,” এ এক অদ্ভুদ অমানবিক সরকার। দীর্ঘ ২০ মাস পর বিদ্যালয়ে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পঠন-পাঠন শুরু হচ্ছে অথচ হাতে কলমে শিক্ষা দেওয়া NSQF শিক্ষক আর ল্যাব আ্যাসিস্ট্যান্টরা বিদ্যালয়ে যেতে পারবে না। কারন গোপনে গোপনে তাঁদের ছাঁটাই চলছে। কর্মসংস্থান নয় কর্মহীন হচ্ছে শিক্ষকরা !”

উল্লেখ্য ২০১৩ সালে তৃণমূল সরকার আসার পর সরকার ও সরকার পোষিত উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সমগ্র শিক্ষা অভিযানের অন্তর্গত নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বৃত্তিমূলক বিষয়গুলি সিলেবাস থাকা সকল ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে হাতে কলমে যেমন কম্পিউটার (আইটি) , রিটেল ,হেলথ কেয়ার , কন্সট্রাকশন,অটোমোটিভ শেখার একটি সরকারি উদ্যোগ শুরু হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে স্থায়ী বিষয়গুলি হিসেবে এটি পরিচিত। সম্পূর্ণ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তত্ত্বাবধানে শিক্ষা দপ্তর দ্বারা চালু হলেও ২০১৪ সালে শিক্ষা দপ্তর পরিচালনার দায়ভার তুলে দেয় কারিগরি দপ্তরকে। স্থায়ী বিষয় হলেও সরকার শিক্ষক ও ল্যাব-আ্যাসিস্ট্যান্টদের নিয়োগ করে বিভিন্ন বেসরকারকারী এজেন্সি দ্বারা। দীর্ঘ ৯ বছর ধরে সরকারি বিদ্যালয়ে হাতে কলমে ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে গিয়ে আজ ঠিক স্কুল খোলার আগেই এনএসকিউএফ শিক্ষক ও ল্যাব-আ্যাসিস্ট্যান্টরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে।

শুভদীপ ভৌমিক বলেন “যখন স্কুল খোলার জন্য সবাই আন্দোলনে পথে নেমে ছিলেন , ঠিক এনএসকিউএফ শিক্ষকদের ও ল্যাব- আ্যাসিস্ট্যান্টদের ছাঁটাই করার জন্য হটাৎ করে ২৭শে অক্টোবর একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কারিগরি দপ্তর । এই নিয়ে শিক্ষক মহলে যথেষ্ট নিন্দার ঝড় উঠেছে।বহুদিন ধরে এনএসকিউএফ শিক্ষকরা স্থায়ী চাকরির জন্য আন্দোলন করে আসছেন। এবারেও এনএসকিউএফ শিক্ষকরা শিক্ষক দিবস,মহালয়া,পুজোর সময় নবমীর দিন , দীপাবলি এমনকি গত মঙ্গলবার 09.11.2021 এ কারিগরি ভবনে শান্তিপূর্ণভাবে ডেপুটেশন দিতে গিয়ে প্রায় ২৫০ জন এনএসকিউএফ শিক্ষক,শিক্ষিকা আটক হয়েছিলেন ,এমনকি তাঁদের নামে মামলাও করা হয়েছে। এই এনএসকিউএফ শিক্ষক ও ল্যাব-আ্যাসিস্ট্যান্টরা মহামারীতে অনলাইন ক্লাস থেকে শুরু করে মিড ডে মিল সবেতেই সরকার এঁদের ব্যবহার করেছেন।”

জানা গেছে রাজ্যে বর্তমানে রাজ্যে প্রায় ১৬০০ এনএসকিউএফ বৃত্তিমূলক শিক্ষক ও ল্যাব-আ্যাসিস্ট্যান্ট আছেন। এই শিক্ষকগণ নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সকল ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মিতভাবে কম্পিউটার , অটোমোটিভ ,প্লাম্বিং, হেলথ ইত্যাদি বিষয়গুলি শিক্ষাদানের পাশাপাশি কন্যাশ্রী , ঐক্যশ্রী , বাংলার শিক্ষা ই পোর্টাল ,সবুজ সাথী , শিক্ষাশ্রী প্রকল্পগুলিতে ছাত্র-ছাত্রীদের নাম ও বিস্তারিত তথ্য নথিভুক্তকরন , বিদ্যালয়ের যাবতীয় টেকনিক্যাল কাজ , ডেটা এন্ট্রি সহ নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে সমস্ত কাজ সফলতার সহিত করে চলেছেন।

রাজ্য সম্পাদকের কথায়, ” ২০১৩ সাল থেকে শিক্ষকতা করেও নূন্যতম সামাজিক সুরক্ষা পেলাম না , দিদি এই কি আমাদের পাওনা !! আমাদের নিয়োগ হয়েছিলো সরকারের নিয়ম মেনে, এখন কয়েক হাজার পরিবার দিশেহারা, ভাতের থালায় শুধুই চোখের জল , দু মুঠো অন্নের জন্য শিক্ষক ও ল্যাব আ্যাসিস্ট্যান্টরা রাস্তায় এবার পরিবার নিয়ে আত্মহত্যা করবে না হয় অনাহারে মরবে ! আপনি আমাদের রক্ষা করুন। অবিলম্বে দিদি আমাদের বেসরকারিকরণ মুক্ত করে চাকুরী ফিরিয়ে দিন,আমরা স্কুলে যেতে চাই, আমাদের ৬০ বছর পর্যন্ত চাকুরী সুনিশ্চিতকরণ করুন, না হয় আমাদের স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন গ্রহণ করুন। স্কিলের কারিগরদের আজ কর্মহীন হতে হচ্ছে , সত্যিই দুৰ্ভাগ্যজনক। ”

যদিও রাজ্যের কারিগরি শিক্ষা মন্ত্রী ও ডেবরার বিধায়ক হুমায়ুন কবীর বলেছেন, এই প্রকল্পটি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনেই চলে থাকে। রাজ্যকে সেই গাইডলাইন মানতে হয়। কেন্দ্র যদি পদের বিলুপ্তিকরন ঘটায় সেখানে রাজ্য কী করতে পারে?

- Advertisement -
Latest news
Related news