Friday, May 3, 2024

Haldia: মাফিয়া আর সিন্ডিকেট, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের স্থানে বিনিয়োগ আসতে পারেনা! মুখ্যমন্ত্রীর একনায়কত্বকেও তোপ রাজ্যপালের

Governor of the state Jagdeep Dhankar practically thwarted the demands of the West Bengal government and the Chief Minister regarding the industrial potential and investment of the state. During a visit to the state's industrial and port city of Haldia on Wednesday, Governor Jagdeep Dhankar said that syndicates and mafia forces were dominating the industrial and trade belt of West Bengal. People are living in an environment of fear. The development of industry and trade can never take place in this environment. In the words of the Governor, 'Development and investment are interrelated. As well as the development of democratic values ​​and human rights, the state administration must be transparent and free from corruption. The government will not be run by one person. Without such an environment, the state's industry and commerce cannot prosper. "

- Advertisement -spot_imgspot_img

নিজস্ব সংবাদদাতা: রাজ্যের শিল্প সম্ভবনা ও বিনিয়োগ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রীর দাবিকে কার্যত: তুলোধুনা করলেন রাজ্যের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। বুধবার রাজ্যের শিল্প তথা বন্দর শহর হলদিয়া সফরে এসে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় জানিয়ে গেলেন, পশ্চিমবঙ্গের শিল্প ও বাণিজ্যের প্রান্তে প্রান্তে সিন্ডিকেট ও মাফিয়া বাহিনী আধিপত্য করছে। মানুষ বাস করছে এক ভয়ভীতির পরিবেশের মধ্যে। এই পরিবেশের মধ্যে কখনওই শিল্প এবং বাণিজ্যের বিকাশ ঘটতে পারেনা। রাজ্যপালের কথায়, ‘উন্নয়ন এবং বিনিয়োগ পরস্পর সম্পর্ক যুক্ত। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের এবং মানবাধিকারের বিকাশ চাই, রাজ্য পরিচালনা ব্যবস্থা স্বচ্ছ এবং দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে। সরকার কোনও এক ব্যক্তির দ্বারা পরিচালিত হবেনা। এই রকম পরিবেশ ছাড়া রাজ্যের শিল্প ও ব্যবসাবাণিজ্যের উন্নতি হতে পারেনা।”

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

নিশ্চিত ভাবেই রাজ্যপালের লক্ষ্য ছিল রাজ্যে কয়েকদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলন বা ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট- ২০২২’ । কনফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড এ্যশোয়িশনের উদ্যোগে আয়োজিত চারদিনের এই বাণিজ্য সম্মেলনের পশ্চাতে  পশ্চিমবঙ্গ সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগ ছিল প্রধান। এই শিল্প সম্মেলনকে ঘিরে বিপুল বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান  আসছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। রাজ্য সরকারেরও বিভিন্ন দপ্তর ও মন্ত্রীরা যখন কয়েকশ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের আশার কথা শোনাচ্ছেন তখন রাজ্যপালের এই বক্তব্য কার্যত জল ঢেলে দিল সেই সম্ভাবনায়। এবার শিল্পায়নকে ঘিরে রাজ্য সরকার বনাম রাজ্যপালের ফের আরেক দফা বিতর্ক সামনে চলে এল।

রাজ্যপাল সরাসরি হাতিয়ার করেছেন এবছরেরই কলকাতা হাইকোর্টের একটি রায়কে। ২১ শে ফেব্রুয়ারির সেই রায়কে উদ্ধৃত করে রাজ্যপাল বলেন, ” ওই রায়ে কলকাতা হাইকোর্টের রাজ্য পরিচালনা, বিভিন্ন মামলার তদন্ত ও আইন সম্পর্কে ভয়ঙ্কর পর্যবেক্ষণ প্রতিফলিত হয়েছে। হাইকোর্টের সেই প্রতিফলন হল, রাজ্যের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি কোনায় সিন্ডিকেট ও মাফিয়া রাজ সক্রিয়। হাইকোর্টের সেই পর্যবেক্ষনের ক্ষেত্রগুলির মধ্যে রয়েছে ব্যবসা, বাণিজ্য এবং শিল্পক্ষেত্র। হাইকোর্টের এই পর্যবেক্ষনের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন।” রাজ্যপাল রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিকে সিদ্ধার্থ রায় শঙ্করের জামানার সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, ” আমরা সবাই জানি ৬ দশক আগে কিভাবে পশ্চিমবঙ্গ মাফিয়া এবং সিন্ডিকেট রাজ্যের হাতে করায়ত্ত হয়ে পড়েছিল।”

তিনি আরও বলেন, কলকাতা হাইকোর্ট এও বলছে রাজ্যের মানুষের মধ্যে ভয় ও ভীতির মনোভাব কাজ করছে। মানুষ সব কিছু ব্যক্ত করতে পারছেননা।’ রাজ্যপালের কথায়, বাংলার শিল্প ও বাণিজ্যক্ষেত্রে যে স্থবিরতা কাজ করছে তাকে উৎপাটন না করতে পারলে রাজ্যের উন্নয়ন সম্ভব নয়। জানা গেছে কেবলমাত্র সাংবাদিকদের সামনেই নয়, হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের সর্বোচ্চ কর্তাদের সঙ্গে মত বিনিময়ের সময়ও এই প্রসঙ্গগুলি উঠে এসেছে। রাজ্যপাল আক্ষেপের সঙ্গে বলেছেন, ‘ এটা আমার জন্য খুবই আক্ষেপ ও যন্ত্রণার যে এই রাজ্যের উপযুক্ত মানবসম্পদ রাজ্যের বাইরে কাজ করছে। এই রাজ্যের বিনিয়োগও অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছে। সমস্ত সম্ভবনা থাকা স্বত্ত্বেও শুধু রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির কারণেই তাকে এই রাজ্যেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছেনা।’ রাজ্যপালের এই বক্তব্য যে প্রশ্নটা তুলে দিয়েছে তাহল যেখানে রাজ্যের মানবসম্পদ, রাজ্যের বিনিয়োগ অন্য রাজ্যে চলে যায় সেখানে অন্যত্র থেকে এরাজ্যে বিনিয়োগের দাবির বাস্তবতা কত খানি? শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলির পাশাপাশি এদিন রাজ্যপাল হলদিয়া চৈতন্যপুর বিবেকানন্দ মিশন আশ্রমে একটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। ঘটনা যাইহোকনা কেন রাজ্যপালের এই বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর শিল্পায়নের দাবির ওপর জল ঢেলে দিল এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

বুধবার শিল্প ও বন্দর শহর হলদিয়ায় রাজ্যপালের সফরকে ঘিরে আগে থেকেই কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছিল। বন্দর কিংবা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলির কাছে এই সফর ছিল অনেকটাই ‘আচমকা।’ রাজ্যপালের মত ব্যক্তিত্বকে স্বাগত জানানোর আগে এক সপ্তাহও সময় মেলেনি বলে জানানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলির কাছ থেকে। তাঁদের চার থেকে পাঁচদিনের প্রস্তুতির মধ্যেই বুধবার সকালে বন্দর শহরে পা সস্ত্রীক এসে পৌঁছান রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ হলদিয়া বন্দরের পোর্ট হাউসে পৌঁছান রাজ্যপাল । প্রায় ৩০ মিনিট শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী বন্দরের চেয়ারম্যান বিনীত কুমারের সাথে বৈঠক করেন। দুপুর ১ টা নাগাদ হলদিয়া বন্দরের অতিথি নিবাসের প্রেক্ষাগৃহে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের কর্তাদের সাথে মিলিত হন রাজ্যপাল। তারপরই একটি সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় বলেন, ” আমাদের প্রধানমন্ত্রীর যে ‘পূবে তাকাও’ বা লুক ইস্ট দৃষ্টিভঙ্গি ( ভিশন) গ্রহণ করেছেন তাঁর উদ্দেশ্যই হল, পূর্বের রাজ্য গুলির গণতন্ত্র এবং উন্নয়ন দেশের অন্য প্রান্তের মত শান্তিপূর্ন নয়। গত ৭ দশক ধরে পশ্চিমবঙ্গে ট্রেড, ইন্ডাস্ট্রি, বিজনেস, এডুকেশন, ট্যুরইজম সমস্ত কিছুই দারুন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।” এরপরই রাজ্যপাল ২০২২ সালে প্রদত্তকলকাতা হাইকোর্টের একটি রায়কে উল্লেখ করে বলেন যে, ‘ কলকাতা হাইকোর্টের সেই রায়ে বলা হচ্ছে, পশ্চিমবাংলার সমস্ত প্রান্তেই নির্মাণ ক্ষেত্র থেকে শুরু করে ব্যবসার অন্যান্য ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট ও মাফিয়ারাই সক্রিয়।’

- Advertisement -
Latest news
Related news