নিজস্ব সংবাদদাতা: অনেক অস্বস্তির সঙ্গেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরও একটি অস্বস্তির নাম বোধহয় আইপিএস (IPS) অফিসার নগেন্দ্র। কারন রাজ্যের বেশিরভাগ আইপিএস বা আইএএস (IAS) আধিকারিকরা যখন তাঁর কাছে নুইয়ে পড়েন তখন নগেন্দ্র ত্রিপাঠীর মত আইপিএস আধিকারিকরা নিজের শিরদাঁড়া টানটান করে দাঁড়িয়ে থাকেন। দিনটা ১লা এপ্রিল ২০২১। নিজেরই বেছে নেওয়া নন্দীগ্রাম বিধানসভায় শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিদ্বন্দ্বী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের তরফে বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক করা হয়েছিল আইপিএস আধিকারিক নগেন্দ্র কে। ভিভিআইপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা, তাই একটা বিধানসভার জন্য একজনই পুলিশ পর্যবেক্ষক।
মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি অভিযোগ আনলেন নন্দীগ্রামের
বয়াল অঞ্চলের মক্তব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে বুথ জ্যাম করে রিগিং করছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী নিজে ছুটে এলেন সেখানে। ছুটে এলেন নগেন্দ্রও। বাকিটা ইতিহাস। গত একযুগ ধরে শাসকের কাছে আইপিএস আর আইএএস (IAS) আধিকারিকদের নুইয়ে পড়ার ধারাবাহিকতা তৈরি হয়েছে তার বিপরীতে গিয়ে আরেক ইতিহাস। সেদিন মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি অভিযোগ আনলেন বিজেপির ক্যাডাররা বুথ জ্যাম করছে, রিগিং করছে কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনী আর নির্বাচন কমিশনের অধীন পুলিশ নিষ্ক্রিয়। সামান্য দু’এক মিনিটের কথোপকথন। নগেন্দ্র জানালেন, কোনও জ্যাম হয়নি। কিছু মানুষ বুথের অদূরে জমায়েত হয়েছিল কিন্তু পুলিশ তখুনি তাদের সরিয়ে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তুমি ঠিক বলছনা। আইপিএস নগেন্দ্রর হাত উঠে আসল নিজের খাকি উর্দির কলারে। সেই কলার ছুঁয়ে তিনি বললেন, ‘খাকি পরে দাগ নেবনা ম্যাডাম।’
এই সামান্য একটু কথোপকথনের ভিডিয়ো সেদিন প্রকাশ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল মিডিয়ার দৌলতে। আইপিএস নগেন্দ্রর সেই কলার ছুঁয়ে উক্তি যেন মনে করিয়ে দিয়েছিল আইপিএস পদে আসার আগে এভাবেই খাকি উর্দির সম্মান রক্ষার শপথ নিতে হয় আইনরক্ষার এই সর্বোচ্চ আধিকারিকদের। মুহূর্তে বাংলার প্রতিটি নাগরিকের মুখ দিয়ে বাংলার পুলিশের উদ্দেশ্যে যেন একটাই অব্যক্ত উচ্চারণ ধ্বনিত হয়েছিল, নগেন্দ্রকে দেখো, নগেন্দ্রকে শেখো, খাকি উর্দিতে কেউ দাগ নিওনা। নির্বাচন মিটে যাওয়ার পর নগেন্দ্রকে বীরভূমের পুলিশ সুপারের দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সেই আইপিএস অফিসার নগেন্দ্র ত্রিপাঠীকে এ বার কর্মক্ষেত্রে বিশেষ কৃতিত্ব এবং পরিষেবার পদকে পুরষ্কৃত করা হচ্ছে। বুধবার প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ সম্মানিত করবেন নগেন্দ্রকে। নির্বাচন কমিশনের সুপারিশেই তাঁর এই পদক-প্রাপ্তি।
মঙ্গলবার জাতীয় গ্রন্থাগারে ‘জাতীয় ভোটার দিবস’ পালন করেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব। সেখানেই ঘোষণা করা হয়, নগেন্দ্রকে পদক দেওয়া হবে। নগেন্দ্রর পাশাপাশি প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ উত্তর ২৪ পরগনা ও হাওড়ার জেলাশাসক এবং পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপারকে পুরস্কৃত করবেন বলে জানিয়েছে কমিশন। রাজ্য সরকারের তরফে মঙ্গলবার কর্মক্ষেত্রে কৃতিত্ব প্রদর্শনের জন্য নদিয়ার জেলাশাসক শশাঙ্ক শেট্টি, জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু এবং বাঁকুড়ার জেলাশাসক কে রাধিকা আয়ারকে পুরস্কৃত করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার সেই মিডিয়ার দৌলতেই ছড়িয়ে পড়েছে আইপিএস আধিকারিক নগেন্দ্র ত্রিপাঠীকে রাষ্ট্রপতি পদক দেওয়ার ঘোষণা। বাংলার মানুষের মনের ফের ভেসে উঠেছে এক অকুতোভয় পুলিশ আধিকারীকের সেই দিনের ছবিটা।