নিজস্ব সংবাদদাতা: ষাটের দশকে প্রতিটি মাকে কাঁদিয়ে ছিল একটি শিশুর করুন আবেদন, “ও তোতা পাখিরে, শেকল কেটে উড়িয়ে দেব আমার মাকে যদি এনে দিস। ঘুমিয়ে ছিলাম মায়ের কোলে কখন যে মা গেছে চলে, সবাই বলে ওই আকাশে লুকিয়ে আছে খুঁজে নাও…। ১৯৫৩ সাল, প্রবীর মজুমদাররের কথা ও সুরে গানটি গেয়েছিলেন নির্মলা মিশ্র। রবিবার, জুলাই মাসের শেষ দিনটিতেই জীবনের শেকল কেটে সত্যি সত্যি চলেই গেলেন ৮১ বাংলার সঙ্গীত কিংবদন্তি নির্মলা মিশ্র। জানা গেছে রাত ১২.০৫ নাগাদ চেতলার নিজের বাড়িতে জীবনাবসান হয় তাঁর। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। এমনই জানিয়েছেন তাঁর পারিবারিক চিকিৎসক। রাতে নার্সিং হোমে রাখা থাকবে তাঁর মরদেহ। আজ , রবিবার (৩১ জুলাই) তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
গত বেশ কয়েক মাস ধরেই বার্ধ্যকজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন শিল্পী৷ ১৯৩৮ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগণার মজিলপুরে জন্মগ্রহণ করেন নির্মলা। পণ্ডিত মোহিনীমোহন মিশ্র ও ভবানী দেবীর কন্যা নির্মলা। বাবার চাকরির কারণেই তিনি তাঁর পরিবার নিয়ে কলকাতার চেতলায় চলে আসেন। স্বর্ণযুগের অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী নির্মলা। শুধু ছোটদের গানের সেই আ্যলবাম নয়, রোমান্টিক বাঙালিকে দিনরাত গুনগুনিয়ে রেখেছে তাঁর যে সমস্ত অজস্র গান তারমধ্যে ছিল পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা নচিকেতা ঘোষের সুরে গাওয়া’এমন একটি ঝিনুক খুঁজে পেলাম না যাতে মুক্ত আছে।’ তারপর ভাস্কর বসুর কথায় অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে গাইলেন ‘বলত আরশি তুমি মুখটি দেখে, যদিও কাজল আমি পারিনি..” এভাবেই বাংলা আধুনিক গানের ইতিহাসে চিরস্থায়ী হয়ে গেছিল তাঁরনাম।
বাংলা ছবির জন্য প্লে-ব্যাকও গেয়েছেন তিনি, জনপ্রিয় হয়েছে সে গান। ১৯৭৬ সালে উত্তর কুমারের সঙ্গে নব-রূপে তৈরি মহালয়ার প্রভাতী অনুষ্ঠানেও তিনি অংশ নিয়েছিলেন বলে শোনা যায়। নির্মলার স্বামী প্রদীপ দাশগুপ্তও ছিলেন একজন শিল্পী ও গীতিকার। গত ডিসেম্বর মাসেও চিকিৎসার জন্য নার্সিং হোমে ভর্তি করতে হয়েছিল শিল্পীকে৷ শনিবার রাতে বাড়িতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শিল্পীর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন তাঁর চিকিৎসক৷ আজ রাতে তাঁর মরদেহ একটি বেসরকারি হাসপাতালে রাখা থাকবে। ইতিমধ্য়ে এই খবর পৌঁছেছে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কাছে। আগামিকাল রবীন্দ্রসদনে তাঁর মরদেহ শায়িত থাকবে। তবে চূড়ান্ত সময়সূচি নির্ধারিত হবে রবিবার সকালেই।