নিজস্ব সংবাদদাতা: গুলাবের প্রভাবে শনিবার সকাল থেকেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে দিঘা, হলদিয়া, ক্যানিং, কাকদ্বীপে। দ্রুত বদলে যাচ্ছে রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকার আবহাওয়া। ঘন গভীর এবং কালো মেঘ ক্রমশ দখল করে নিচ্ছে আকাশ। আবহাওয়ার দপ্তর জানাচ্ছে বঙ্গোপসাগরে শক্তি বাড়িয়ে উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’।

বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া গভীর নিম্নচাপ গত ১২ ঘণ্টায় ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এখন তা অতি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে, এমনটাই জানাচ্ছে হাওয়া অফিস। ইতিমধ্যেই উপকূলবর্তী জেলা দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের একাধিক এলাকায় শুরু হয়ে গিয়েছে বৃষ্টি। কাকদ্বীপ, ক্যানিংয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে বৃষ্টি।
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের আধিকারিকের কথায়, বঙ্গোপসাগরে সাইক্লোন ‘গুলাব’ শক্তি বাড়িয়ে ধেয়ে আসছে বাংলার দিকে। এর পাশাপাশি নিম্নচাপ এবং ঘূ্ণাবর্তের জেরে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। পূর্ব ও মধ্য বঙ্গোপসাগর থেকে শক্তি বাড়িয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোচ্ছে একটি ঘূর্ণাবর্ত। সেটি ক্রমশ শক্তি বাড়িয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। শনিবার দুপুরের পর তা ওড়িশা উপকূলের কাছাকাছি আসবে। প্রায় সমান্তরাল একটি ঘূর্ণাবর্ত আগামিকাল উত্তর বঙ্গোপসাগরের দিকে যাবে। যার জেরে রবিবার থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
দুর্যোগের আশঙ্কায় কাঁপছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা। পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল অঞ্চলে চলছে মাইকিং। উপকূলবর্তী এলাকায় ইতিমধ্যেই মক ড্রিলের কাজ শুরু করে দিয়েছে এনডিআরএফ। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকছে৷ আগামী ৪৮ ঘণ্টা যাতে কেউ সমুদ্রে না যান, তার নির্দেশ দিয়েছে হাওয়া অফিস। ইতিমধ্যেই নবান্নর পক্ষ থেকে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে প্রস্তুত থাকছে উপকূলরক্ষী বাহিনী এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। প্রশাসনের তরফে ২৪ ঘণ্টার জন্য খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। উপকূলবর্তী এলাকায় বাড়ানো হয়েছে পুলিশি নজরদারি। পুলিশের তরফে মাইকিং করে পর্যটকদের সমুদ্রের দিকে আসতে বারণ করা হচ্ছে। মৎসজীবীদেরও সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে। প্রশাসনের তরফে কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে।
দিঘার সমুদ্র তীরবর্তী কিছু কিছু গ্রামে ঢুকছে জল। আতঙ্কে বাড়ি ছাড়ছেন বাসিন্দারা। দিঘার উত্তাল সমুদ্র মনে করাচ্ছে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সময়কার স্মৃতি। কোনওরকম দুর্ঘটনা এড়াতে দিঘার সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় বাড়ানো হয়েছে পুলিশি নজরদারি। পুলিশের তরফে মাইকিং করে পর্যটকদের সমুদ্রের দিকে আসতে বারণ করা হচ্ছে।
হিসাব অনুযায়ী রবিবার খড়গপুর ও মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে প্রভাব পড়বে গুলাবের। খড়গপুর ও মেদিনীপুরের আকাশ শনিবার উজ্জ্বল থাকলেও রবিবার সকাল থেকেই দ্রুত বদলাতে শুরু করবে বলে জানা গেছে। ২৭ সেপ্টেম্বর সোমবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে। পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ওই দিন লাল সতর্কতা জারি হয়েছে বিভিন্ন জেলায়। ২৮ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার কলকাতা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলির কোনও কোনও জায়গায় অতিভারী বৃষ্টির আশঙ্কায় কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বাকি জেলাগুলিতে ওই সময় কোনও কোনও জায়গায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। আগামী দিন দুয়েক দিনেতর তাপমাত্রা ২-৩ ডিগ্রি পর্যন্ত পাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এদিকে কোভিড কালীন কালের জন্য স্কুলগুলি বন্ধ থাকলেও মিড-ডে-মিল এবং অন্যান্য করনের জন্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের বিদ্যালয়ে যেতে হচ্ছে। গুলাবের প্রভাবের কথা মনে করেই শনিবার থেকে সোমবার সমস্ত স্কুল বন্ধ রাখা রাখতে বলা হয়েছে। সোমবার পরিস্থিতি দেখার পরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অন্যদিকে সরকারি কর্মচারীদের সমস্ত ছুটি বাতিল করে ২৪ঘন্টা সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। প্রতিটি জেলার কাছ থেকে প্রতি মুহূর্তের আপডেট নিচ্ছে নবান্নের কন্ট্রোলরুম।