
নিজস্ব সংবাদদাতা: ক্যানসার আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য কেমো একটি প্রচলিত ব্যবস্থা। আর কেমো চিকিৎসা পদ্ধতির অনির্বায পরিণতি হল চুল পড়ে যাওয়া। সময়ের সাথে চুল আবার উঠতে শুরু করে কিন্তু সেই লম্বা, গোছা ভরা চুল আর ফেরৎ পাওয়া সচরাচর হয়ে ওঠেনা। তাই নিজের সৌন্দর্য ধরে রাখতে অনেকেই পরচুলা ব্যবহার করেন। মানুষের আসল চুলে তৈরি সেই পরচুলার দামও যথেষ্ট বেশী।
ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে গিয়ে যে সমস্ত মানুষের সর্বস্ব চলে যায় তাঁদের কাছে এই পরচুলা কেনাটা সত্যিই খুব কঠিন হয়ে পড়ে। তেমনই মানুষদের জন্য পরচুলা জোগান একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। বিশ্ব ক্যানসার দিবস উপলক্ষ্যে ভারতীয় কন্যাদের কাছে নিজেদের চুল দান করার আহ্বান জানিয়েছিল ‘মদত’ নামে ওই সংস্থাটি। সেই ডাকেই সাড়া দিয়েই নিজেদের চুল নিজের হাতে কেটে পাঠালেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ২ শিক্ষিকা।
মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা ওই দুই শিক্ষিকা হলেন আল্পনা দেবনাথ বোস এবং সালমা খাতুন। মেদিনীপুর শহরের রবীন্দ্রনগরের বাসিন্দা আল্পনা দেবনাথ বোস জীববিজ্ঞানের শিক্ষিকা এবং মীরবাজারের বাসিন্দা সালমা খাতুন ইংরেজীর শিক্ষিকা। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের চুল নিয়ে কাজ করা মুম্বাই-এর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “মদত” ট্রাস্টের মাধ্যমে তাঁরা এই কাজটি করলেন। এই চুল কাটার বিষয়টি অত সহজ ছিলনা অবশ্য। নিজের মনের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম কষ্ট তো থাকেই তার সঙ্গে ছিল ওই সংস্থার গাইড লাইন মেনে চুল কাটার কাজটা। শেষ অবধি সেটাই করে রীতিমত কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দিলেন ট্রাস্টের ঠিকানায়। নিজেদের সিংহভাগ চুল কেটে বিনুনি করা অবস্থায় পাঠালেন ‘মদত’ ট্রাস্টে। তাঁদের এই কাজে তাঁরা পাশে পেয়েছেন নিজেদের পরিবারকে।
দুজনেই জানান, তাঁদের মাথার এই চুল যদি ক্যানসার আক্রান্তদের সাহায্যে আসে তাহলে তাঁরা নিজেদের ধন্য মনে করবেন।আগামী দিনেও তাঁরা এভাবে মানুষের পাশে থাকতে চান।পাশাপাশি তাঁরা অন্যদেরও একাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। মেদিনীপুর কুইজ কেন্দ্রের সদস্যা আল্পনা দেবনাথ বোস জানান, ক্যান্সার দিবসকে সামনে রেখে, তাঁর প্রিয় সংগঠন মেদিনীপুর কুইজ কেন্দ্রের দশম বর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে তিনি তাঁর মাথার চুল দান করলেন।
উল্লেখ্য মাস কয়েক আগেই এভাবেই মাথার চুল দান করেছিলেন আল্পনা দেবনাথ বোসের মেয়ে মনীষিতা বোস। মেয়ের সেই কাজ অনুপ্রাণিত করেছিল আল্পনাকেও। মেয়ের পথ ধরেই এবার এগিয়ে এলেন মা ও। মা ও মেয়ে দুজনেই আশা প্রকাশ করেছেন এভাবে যদি আরও অনেকে এগিয়ে আসেন । তাহলে আরও অনেক আক্রান্ত সুন্দর হয়ে আগের মত স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারেন। মুছে ফেলতে পারেন ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার ভয়াবহ স্মৃতিকে। রোগভোগের দীর্ঘ ট্রমা থেকে বেরিয়ে আসার এও এক ওষুধ বৈকি।