নিজস্ব সংবাদদাতা: এক চটকা দেখলে মনে হবে সরকারি কোনও সভা হচ্ছে যেখানে আসছেন কোনও ভিভিআইপি! সভাস্থল বটেই সভাস্থলের কয়েক কিলোমিটার অবধি বেছানো পুলিশ। রাত পোহালেই বন্দর শহর হলদিয়াতে জনসভা করবেন তৃনমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগের দিনই সেই শহরেই শ্রমিক সম্মেলন করছে দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি। আর সেই সম্মেলনকে ঘিরে এমন কড়া পুলিশি বেষ্টনি বুঝিয়ে দিয়েছে তীব্র শ্রমিক অসন্তোষের ভয়ে গুটিয়ে আছে দলটা। আর তার জন্যই নামানো হয়েছে এত পুলিশ। শনিবার যেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা হবে রানিচক সংহতি ময়দানে। শুক্রবার দুর্গাচকে হয়ে গেল আইএনটিটিইউসির সম্মেলন। আর সেই সম্মেলন মঞ্চ থেকে দেড় কিংবা দু’কিলোমিটার দুরে টিম করে করে ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল পুলিশকে! সিটিসেন্টার, রানিচক, উৎসব ভবন, ক্ষুদিরাম কোথায় ছিলনা পুলিশ।
ওদিকে সম্মেলন স্থল আগাগোড়াই পুলিশে মোড়া। পুলিশ আর দলীয় স্বেচ্ছাসেবক মিলিয়ে আড়াই স্তরীয় বেষ্টনি! মোবাইল নিয়ে ঢোকা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। ভয়, পাছে সম্মেলন স্থলে গন্ডগোল হয় আর কেউ ভিডিও করে ছড়িয়ে দেয়। ভয়, সম্মেলনের মঞ্চে কোনও বাদানুবাদ হলে তা রেকর্ড হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। তাই সম্মেলনে অংশ নেওয়া প্রায় ১২০০ প্রতিনিধিকে ঢুকতে হয়েছে দেহতল্লাশির মধ্যে দিয়েই। একবার পুলিশ তো একবার দলীয় স্বেচ্ছা সেবকদের। যেন কোনও বিমানবন্দরে সন্ত্রাসী হানার ভয়ে তল্লাশি হচ্ছে! আর সাংবাদিকদের তো প্রবেশ নৈবচ নৈবচ। তারই মধ্যে মোবাইল নিয়ে গলে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন এক ব্যক্তি।
সম্মেলনে তখন হাজির আইএনটিটিউসির রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক, জেলার দুই মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র ও অখিল গিরি, ছিলেন রাজ্য নেতা বেচারাম মান্নাও। উপস্থিত প্রায় ১২০০ শ্রমিক প্রতিনিধির মধ্য থেকেই লটারির মাধ্যমে বেছে নেওয়া ৫৪ জন শ্রমিক প্রতিনিধি নিজেদের বক্তব্য রাখেন। আর সেখান থেকেই উঠে এসেছে টিপ্পনি। কেউ সদ্য কয়েকমাস আগে বহাল জেলা শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি শিবনাথ সরকার সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন যে ওনাকে একসময় দাদার (শুভেন্দু অধিকারী) অনুগামী হয়ে মিছিলে হাঁটতে দেখা গিয়েছিল। সেই ছবিও নাকি শুক্রবার রাজ্য নেতাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
কেউ কেউ আবার এই বলে কটাক্ষ করেছেন যে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমাবেশকে ঘিরে জেলা জুড়ে ‘ঐক্যে’ লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাঁর কয়েক শতাংশও ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের সময় দেখা গেলে হলদিয়া বিধানসভা কেন্দ্র হারতে হতনা। আর কেউ আবার কটাক্ষ করে বলেছেন, সবই তো হচ্ছে কিন্তু শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার কাজটা হচ্ছে কোথায়? এতদিন পেরিয়ে গেল এখনও চার্টার অফ ডিমান্ড হলনা কেন? নেতারা অবশ্য আজ আর কথার জবাবে কথা বলে বিতর্ক তৈরির ঝুঁকি নেননি। সবটাই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপরে ছেড়ে দিয়েছেন। সম্মেলন ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘আমরা আপনাদের উত্থাপিত বিষয়গুলি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে রাখব । শনিবারের মহাসমাবেশ থেকে তিনিই সব প্রশ্নের উত্তর দেবেন।’ বলাবাহুল্য ২৪ ঘন্টা আগে কে ঝুঁকি নিতে চায়? কারন জবাব পছন্দ না হলে যদি পাল্টা জবাবে সব গুবলেট হয়ে যায়!