নিজস্ব সংবাদদাতা: ২০১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিককে জেলায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং তাঁকে সম্বর্ধনা দিয়েছিলেন। শনিবার মাঘ পঞ্চমীতে, বিদ্যাদেবীর আরাধনা। সরস্বতীর অঞ্জলি দিয়েই নিজেকে নদীর জলে ভাসিয়ে দিলেন গ্রামীণ খড়গপুরের এক মেধাবিনী কন্যা। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে খড়গপুর গ্রামীন থানার অন্তর্গত লছমাপুর গ্ৰাম পঞ্চায়েত এলাকায়। গোটা ঘটনায় শোকাহত ছাত্রীর গ্রাম সহ আশেপাশের গ্রাম। তাঁর মৃত্যুুুর খবর পৌঁছনোর পরই আশেপাশের গ্রামগুলিতে সরস্বতী পূজোর মাইক বাজানো বন্ধ করে দিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মৃতা ছাত্রীর নাম সঙ্গীতা মহাপাত্র (২১)। বর্তমানে সঙ্গীতা মেদিনীপুর কলেজে ইংরাজীতে অনার্স নিয়ে পড়ছিলেন। তাঁর দ্বিতীয় বর্ষ চলছিল। লছমাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের জনার্দনপুর সংলগ্ন বাড়মুনিবগড় গ্ৰামে। পরিবার সূত্রে জানা গেছে ছাত্রী ২০১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান দখল করেছিলেন সঙ্গীতা। মোট ৫০০ নম্বরের মধ্যে ৪৮২ পেয়েছিলেন। ওই বছরই তাঁর ওই কৃতিত্বের জন্য মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং তাঁকে সম্বর্ধিত করেছিলেন। জানা গেছে সঙ্গীতাকে নার্সিং নিয়ে পড়ার জন্য জোর করেছিল তাঁর পরিবার। তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁকে নার্সিংয়ে ভর্তিও করা হয় কিন্তু শেষ অবধি সঙ্গীতা নার্সিং পড়া ছেড়ে চলে আসেন। তাঁর ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি ঝোঁক ছিল বেশি। যা তার পরিবার হয়ত মেনে নিতে পারেনি। এরপরই কড়া শাসনে রাখা হত সঙ্গীতাকে।
পুলিশের অনুমান শুক্রবার রাতে পরিবারের সঙ্গে কিছু একটা সমস্যা হতে পারে যে কারনে সে বিমর্ষ ও অবসাদগ্রস্ত ছিল। শনিবার সকালে এই সরস্বতী পুজো উপলক্ষে নিজের পুরনো স্কুল জনার্দনপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার পর স্কুল বেরিয়ে যান স্কুল থেকে। এরপর লাগোয়া কাঁসাই বা কংসাবতী নদীর পাড়ে দেখা যায় তাঁকে। একা একাই যান। আশেপাশে ছুটির আমেজে নদীর পাড়ে কিছু স্কুল পড়ুয়াও ছিল। তাদের থেকে একটু দুরে গিয়ে হঠাৎই নদীতেঝাঁপ দেন।
ঘটনাটি দেখতে পেয়ে স্কুলের এক পড়ুয়া জলে ঝাঁপ দিয়ে এই ছাত্রীটিকে উদ্ধার করে। তারপর প্রাথমিক শুশ্রুষা করার পর মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে চিকিৎসক ঘোষণা করেন মৃত বলে। পুলিশ এখনও এই ঘটনার সঠিক কারণ অনুসন্ধান করতে পারেনি। তবে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে সঙ্গীতাকে খুবই কঠোর অনুশাসনের মধ্যে রাখত তাঁর গোঁড়া পরিবার। যেটা মানতে পারছিলনা সঙ্গীতা। খড়গপুর পুলিশের এক আধিকারিক বলেছেন, ‘ এই মুহূর্তে এই শোকের আবহে পরিবারের সঙ্গে পুরোপুরি কথা বলা একটু সমস্যা হয়ে পড়েছে। আমরা মনে করছি গতকাল রাতে সঙ্গীতার সঙ্গে তাঁর পরিবারের কোনও সমস্যা হয়েছিল। হতে পারে তা সঙ্গীতার মোবাইল ব্যবহার নিয়ে বা অন্য কিছু। যেই ঘটনার অভিঘাত থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি মেয়েটি। হয়ত একদিন নয় দীর্ঘদিনের পারিবারিক চাপ তাঁকে একটা ট্রমার পথে ঠেলে দিয়েছিল। সেখান থেকেই মুক্তি খুঁজছিল।” ঘটনায় এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মাটি হয়ে গেছে প্রাক্তন স্কুল সহ আশেপাশের ক্লাবগুলির সরস্বতী পুজোর আনন্দ।