নরেশ জানা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউ.এস আর্মি সদর দপ্তরের আর্ট গ্যালারিতে গেলে ভারতের বিভিন্ন জায়গার অজস্র ছবির পাশাপাশি আপনি দেখতে পাবেন খড়গপুর শহরের হিজলী জেলের প্রশাসনিক ভবনের এক অসাধারণ ছবি। এই ছবি আপনাকে ৮০ বছর আগের খড়গপুরে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। ছবিটি এঁকেছিলেন ইউ.এস আর্মির একজন শিল্পী যাঁর নাম John-Garrett-Hanlen বা John-G-Hanlen. আজ আমরা ‘KGP Bangla’র পক্ষ থেকে সেই অমূল্য চিত্রর পাশাপাশি John এর আঁকা কয়েকটি ছবি এখানে রাখছি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল হিজলী জেল। মেদিনীপুর জেলাকে দুটি ভাগে ভাগ করে প্রস্তাবিত নতুন হিজলী জেলার সদরদপ্তর বা কালেক্টরেটের প্রশাসনিক ভবন বানানো হয়েছিল ১৯০৫-৬সাল নাগাদ কিন্তু নতুন জেলার পরিকল্পনা বাতিল হওয়ার পর ১৯৩০ সালে এখানেই তৈরি হল হিজলী জেল। ভারতের প্রথম মহিলা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কারাগার বা ‘জেনানা ফাটক’ও এখানে। ১৯৩১ সালে কুখ্যাত হিজলী জেল হত্যাকান্ড। দুই বন্দি তারকেশ্বর সেনগুপ্ত ও সন্তোষ কুমার মিত্রের মৃত্যু। ১৯৩৭ সালে জেলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ফের ১৯৪০ সালে জেল চালু হল। চলেছিল ১৯৪২ সাল অবধি। তারপর পাকাপাকি উঠে গেল জেল। 1943 সালে এখানে ইউ.এস.আর্মির মিলিটারি এয়ার ফিল্ড হেডকোয়ার্টার গড়ে উঠল। 1951 সালে এখানেই প্রতিষ্টিত হল দেশের প্রথম আইআইটি (IIT Kharagpur).
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন মার্কিন বায়ু সেনার বোমারু বিমান ঘাঁটির পূর্বাঞ্চলীয় সদর দপ্তর হিসাবে ফের সচল হয়ে ওঠে হিজলী প্রশাসনিক ভবন। কলাইকুন্ডা, সালুয়া, পিয়ারডোবা, দুধকুন্ডি, শালবনী, ডিগ্রি, চাকুলিয়া প্রভৃতি জায়গায় বোমারু বিমান অবতরণের ব্যবস্থা হল সাথে প্রশিক্ষণেরও। এই সময় হিজলী মিলিটারি এয়ারবেস (Hijli Air Field) থেকেই সবটা নিয়ন্ত্রিত হত। 1943 থেকে 1945 মূলতঃ জাপানকে প্রতিহত করার জন্যই এখানে একে একে চালু হয়েছিল Army Air Force Unit, Army Airways Communications (AACS) Units, Tactical Group, Army Airways Communication System, Miscellaneous Units, Radio Security Det, Signal Battalions / Companies, Weather Squadrons ইত্যাদির সদর দপ্তর স্থাপিত হল হিজলীতে। এরা সবাই নিয়ন্ত্রিত হতেন Bomber Command দ্বারা।
এই বিভিন্ন কাজের জন্য আমেরিকা থেকে বিভিন্ন সেনা, সেনা আধিকারিকরা আসতে থাকলেন। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ ছিলেন শিল্পী। সেরকমই একজনের নাম John-Garrett-Hanlen. John সেই সময় কার ভারতের বিভিন্ন ক্যাম্পগুলিতে গিয়েছিলেন পাশাপাশি গিয়েছিলেন চীনেও। ভারত এবং চীনের সেনা ছাউনি গুলির পাশাপাশি সেই সমস্ত জায়গার গ্রাম, শহর, মন্দির, দেবালয় এবং জনজীবনের ছবি এঁকেছেন। এঁকেছেন অসংখ্য পোট্রেট এবং নৈসর্গিক দৃশ্য। এই সময়েই তিনি হিজলী ইউ.এস.আর্মি হেডকোয়ার্টারে আসেন এবং হিজলী প্রশাসনিক ভবনের ছবি আঁকেন।
John 1922 সালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের উইনফিল্ড প্রদেশের কানসাস শহরে জন্মগ্রহন করেছিলেন। তাঁর ছবি আঁকার শিক্ষা ফিলাডেলফিয়া পেনসিলভেনিয়া একাডেমি অফ ফাইন আর্টস এবং বারনেস ফাউন্ডেশনে (Pennsylvania Academy of Fine Arts in Philadelphia, and The Barnes Foundation)। 1942 সালে তিনি আমেরিকা সেনাবাহিনী বা ইউএস আর্মিতে যোগ দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তাঁকে আর্মি ক্যাম্প বা সেনা ছাউনিগুলি ঘুরতে হত সেনার জন্য নকশা ও বিভিন্ন ভৌগলিক অবস্থান, ভূখণ্ডের ছবি আঁকার জন্য।
এরই পাশাপাশি John নিজের মত করে এঁকে গেছেন গ্রাম শহরের ছবি। যেখানে আমরা হিজলী জেলের প্রশাসনিক ভবনটি দেখতে পাই। এখনও এই ছবিগুলি দেখতে পাওয়া যায়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি চিত্র সংগ্ৰহ বা US Army Art Collecton গ্যালারিতে। John অবশ্য ভুলবশত: Hijli কে Hijki বলে উল্লেখ করেছেন।