নিজস্ব সংবাদদাতা: অবিশ্বাস্য কান্ড! বছরের পর বছর জেলে থাকা তৃনমূল-বিজেপির ভাষায় ‘হার্মাদ নেতা’ সুশান্ত ঘোষের পায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন কৃষকরমণীরা। রবিবার এমনই কান্ড দেখে অবাক হয়ে দেখেছিলেন আশেপাশের তৃনমূল কংগ্রেস কর্মীরা। এমন করে তাঁদের নেতাদের কাছে গিয়ে মানুষকে আবেদন করতে দেখেননি তাঁরা। রবিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের বুড়াল হাট ময়দানে সিপিএমের ডাকা একটি সভায় উপস্থিত ছিলেন দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ ।
সভা শুরুর আগে সবং বাজার থেকে বুড়াল অবধি ৯ কিলোমিটার পদযাত্রায় অংশ নিয়েছেন। প্রায় ৭০০ মিটার দৈর্ঘ্যর ঠাসা জনস্রোত সদ্য এসে থেমেছে বুড়ালের সভায়। ঘোষ চেয়ারে বসে, সভা শুরুর মুখে। হঠাৎই হাউমাউ করে কাঁদতে তাঁর পায়ের কাছে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা গেল কয়েকজন গৃহবধূ, কৃষক রমণীকে। ঘোষ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁরা বলতে শুরু করেছেন, ‘আমাদের বাঁচান, আমাদের জমি কেড়ে নিচ্ছে ওরা। আমাদের চাষ নষ্ট করে দিচ্ছে। ধানের জমিতে বিষ ছড়িয়ে দিচ্ছে, চারা উপড়ে ফেলছে। পুলিশ, প্রশাসন কেউ কিছু করছেনা।’
সুশান্ত ঘোষ হাতে ধরে ওঠালেন তাঁদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেল মহিলাদের নাম মোনালিসা পাল, সরস্বতী বেরা, তুলসী মান্না ইত্যাদি ইত্যাদি। সবং থানার রামভদ্রপুর গ্রামের বাসিন্দারা এঁরা। এই রামভদ্রপুরেই চাষের জমিতে বেআইনী ভাবে ভেড়ি করতে চাইছে ভেড়ি মাফিয়ার দল। আর তাই ৪০০ একরেরও বেশি কৃষিজমি খুঁড়ে জলা বানাতে চাইছে ওই ভেড়ি মাফিয়ার দল। যাঁরা ভেড়ি তৈরিতে বাধা দিচ্ছেন তাঁদের জমির ধানের চারা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কখনও খুঁড়ে দেওয়া হচ্ছে জমি, কখনও ঘাস মারার রাসায়নিক ছড়িয়ে নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে চাষ। মোনালিসা পাল কাঁদতে কাঁদতে জানালেন, ‘ ১৪ কাটা জমির ওপর আমাদের চারজনের সংসার চলে। বছরে দু’বার ধান চাষ ছাড়াও সর্ষের চাষ করতাম। কিন্তু গত দু’বছর ধরে লাগাতার চাষ নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে এটা দেখানোর জন্য যে এখানে ভালো চাষ হয়না। আমরা বাধা দিতে গেলেই রাত্রে এলাকায় এসে বোমাবাজি করা হচ্ছে, শাসানো হচ্ছে খুন করে দেওয়ার।”
রামভদ্রপুর মৌজায় ১২কাটা চাষের জমি রয়েছে গৃহবধূ সরস্বতী বেরার পরিবারের। দুই ছেলে নাতি নাতনি নিয়ে ৯ জনের পরিবার সরস্বতীর। সরস্বতী বলছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন জোর করে কারও জমি নেওয়া হবেনা। আর সেটা বোঝানোর জন্য বন্দুক নিয়ে ঘরে ঘরে ভয় দেখিয়ে ভেড়ির পক্ষে হলফনামা নিতে আসছে ওরা। পেছনে শাসকদলের পরিষ্কার মদত। হাইকোর্ট ভেড়ির বিরুদ্ধে রায় দেওয়া স্বত্ত্বেও এই গুন্ডামি চলছে। বিডিও, বিএলএলআরও, পুলিশ, বিধায়ক কাম মন্ত্রী কেউ নেই আমাদের মত গরিবদের পাশে। সবাই মাফিয়াদেরই মদত দিচ্ছে। তাই আমরা সুশান্ত বাবুর কাছে এসেছি।’ কিন্তু সুশান্ত ঘোষকে যে হার্মাদ বলা হয়? সরস্বতী বলেন, ” হার্মাদ দেখতে হলে, রামভদ্রপুরে আসবেন। প্রতিদিনই রাত্রে মুখে কাপড় বেঁধে বাইক বাহিনী নিয়ে আসে আসল হার্মাদের দল।”
রামভদ্রপুরের ১৭ কাটা জমির অংশীদার গৃহবধূ তুলসী মান্না সুশান্ত ঘোষকে বলেন, ‘ আমাদের ৬ জনের পরিবার ওই জমির ওপর নির্ভরশীল। ওই জমি ধরে রাখতে আমরা রক্ত দেবো, জীবনও দিতে রাজি। আমরা চাষেরভজমিতে ভেড়ি করতে দিবো না। ওরা বন্দুক, বোমা, আগ্নেয় অস্ত্র দেখিয়ে চাপ দিচ্ছে। আপনি শুধু আমাদের পাশে থাকুন।’ সব শোনার পর সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘এই হচ্ছে মা মাটি মানুষের সরকারের আসল রূপ। শুধু সবং নয়, সারা বাংলা জুড়েই গরিব, খেটে খাওয়া মানুষের নূন্যতম রুটিরুজির জায়গা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আমরা আমাদের সর্বশক্তি দিয়েই মানুষের পাশে দাঁড়াবো।” ঘোষ এদিন কৃষকসভা ও ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের পরামর্শ দিয়ে গেছেন রামভদ্রপুরের মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। এই নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য।