নিজস্ব সংবাদদাতা: পুর নির্বাচনকে ঘিরে সর্বাধিক উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে। নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই যেন অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে পরিস্থিতি। বিশেষ করে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা যেখানেই যাচ্ছেন প্রচারে সেখানেই একটা সংঘর্ষের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবারেও তার অন্যথা হলনা। এদিন শুভেন্দু অধিকারীর নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন খোদ রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরির পুত্র সুপ্রকাশ গিরি এমনই অভিযোগ তুলে কাঁথি থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন মন্ত্রীপুত্র।

অন্যদিকে গোটা ঘটনাটিকে নাটক বলে দাবী করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির দাবি, মন্ত্রীপুত্র আহত হওয়ার এই নাটক রপ্ত করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে। মুখ্যমন্ত্রী যেমন নন্দীগ্রামে আহত হওয়ার নাটক করে সমবেদনা আদায় করতে চেয়েছিলেন তেমনটাই করছেন মন্ত্রীপুত্র। বিজেপির আরও দাবি মুখ্যমন্ত্রী যেমন সেই নাটক করেও নন্দীগ্রামে জয়ী হতে পারেননি তেমনই মন্ত্রীপুত্রেরও কাঁথিতে জয়ের স্বপ্ন সফল হবেনা।
ঘটনাচক্রে যেই ওয়ার্ডে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রচারে যাওয়ার ফলে এই ঘটনা ঘটেছে সেই ১৩ নম্বর ওয়ার্ডেরই তৃণমূল প্রার্থী কাঁথি সাংগঠনিক জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি মন্ত্রীপুত্র সুপ্রকাশ গিরি। কাঁথি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পুত্রের হয়ে কাঁথি থানায় অভিযোগ করেছেন খোদ মৎস্যমন্ত্রী। মন্ত্রীর অভিযোগ, ‘শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রার্থী সুপ্রকাশ গিরি যখন প্রচার করছিল, সেই সময় কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী ওই পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তৃণমূলের কর্মীরা তখন স্লোগান দিচ্ছিল। শুভেন্দু নিজেই সুপ্রকাশকে দেখিয়ে দেন। তারপর তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনী গিয়ে জোর মারধর করে সুপ্রকাশকে। বন্দুক দিয়ে আঘাত করা হয় তাকে। ধাক্কাধাক্কিতে রাস্তার ওপর পড়ে গেলে তার গলা চেপে ধরা হয়। তাকে বাঁচাতে গিয়ে আরও কয়েকজন কর্মীও আক্রান্ত হয়েছেন। তাদেরও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
যদিও বিজেপির তরফে গোটা ঘটনার জন্য সুপ্রকাশ গিরিকেই দায়ী করা হয়েছে। অন্যদিকে, বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুদাম পণ্ডিত বলেন, ‘কাঁথি পুরসভার প্রচারে বেরিয়ে প্রত্যেক বাসিন্দার কাছে যাচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূলের কিছু গুণ্ডা বারবার আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করছে তাঁর ওপর ।’ তিনি জানান, ‘ শুক্রবার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে কালুরায় মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে সুপ্রকাশ গিরির নেতৃত্বে অধিকারীকে মন্দিরে ঢুকতে এবং পূজো দিতে বাধা দেওয়া হয়।’
পন্ডিত বলেন ‘চিটফান্ড আর তোলাবাজের দল মন্দিরের পথ আটকে দাঁড়ায়। সেই বাধা সরিয়ে তিনি পূজো দেন এবং প্রচারেও নামেনও। এটা দেখেই আতঙ্কিত সুপ্রকাশ ও তাঁর লোকজন ফের হামলা চালানোর পরিকল্পনা করে। প্রচার সেরে বাড়ি ফেরার পথে বিরোধী দলনেতার ওপর প্রাণঘাতী আক্রমন চালানোর পরিকল্পনা করা হয়। বিরোধী দলনেতার নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে সঙ্কট মুক্ত করে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।’
শুভেন্দু অধিকারী ঘটনাস্থল থেকে ফিরে আসার পর
শুভেন্দু অধিকারীকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তৃণমূলকর্মীরা। দলীয় প্রার্থী এবং কর্মীদের মারধর, কেন্দ্রীয় জওয়ানদের এমন আচরণ অস্বাভাবিক বলে দাবি করেছেন মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি। ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার পথে নামার ডাক দিয়েছে তৃণমূল।
অন্যদিকে বিজেপির জেলা সভাপতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘এ ভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাবে দল।’ বিজেপি সভাপতি আরও বলেন, ‘ কাঁথির জনতা সবই দেখছেন, সবই জানেন। তাঁরা এই ঘটনা মেনে নেবেননা। কাঁথি দখল সম্ভব নয় বুঝতে পেরেই এসব নাটক করা হচ্ছে। নিজেরাই হামলা চালিয়ে নিজেরাই আক্রান্ত হওয়ার অভিনয় করা হচ্ছে।’