Monday, May 20, 2024

Kharagpur CPM: দিনমজুর বাবার এম.এ পড়া মেয়ে সঙ্গীতা যেন খড়গপুরের মীনাক্ষী ! লালঝাণ্ডা হাতে বলছেন, ইন্টার্নশিপের খুড়োর কল নয়, বেকারদের চাকরিটা দিন মুখ্যমন্ত্রী

- Advertisement -spot_imgspot_img

নিজস্ব সংবাদদাতা: দারিদ্র কাকে বলে একবার ঘুরে আসতেই হয় খড়গপুর পৌরসভার ১নম্বর ওয়ার্ডের তেঁতুলডাঙায়। শহরটা যেন এই তেঁতুলডাঙার আগেই শেষ হয়ে গেছে! মধ্য খড়গপুর যখন পুজোর মুখে কমিশন খাওয়ার নীলসাদা আলোয় সেজে ওঠে তখন মিটমিটে আলোয় রাত জায়গা এই প্রায় বস্তি এলাকাটি।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে
ফেসবুক প্রচারে CPM

গা ঘেঁষাঘেঁষি করে টিকে থাকে ভূমিজ, আদিবাসী জনজাতি পরিবার গুলি। সকাল বেলায় যাঁরা কাজের সন্ধানে শহরে ঢোকেন আর সন্ধার পর বাড়ি ফেরেন। ঝকঝকে শহরে তখন অদৃশ্য নো-এন্ট্রি বোর্ড যেন ঝুলিয়ে রাখে, তেঁতুলডাঙার জন্য। সেই তেঁতুলডাঙার তস্য হা ঘর থেকেই চমকে দিয়েছে মাত্র ২৩ বছরের এক আদিবাসী কন্যা। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এমন কী অনার্স পাশ করে মেয়েটা এম.এ তে ভর্তি হয়ে গেছে সে।

সেই মেয়েটাই এবার বামফ্রন্ট মনোনীত সিপিএম প্রার্থী খড়গপুর পৌরসভার ১নম্বর ওয়ার্ডের ইন্দা সংলগ্ন এলাকায়। সঙ্গী একরাশ তরুণ তাজা প্রাণকে নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন খড়গপুরের ‘মীনাক্ষী’। পুরনির্বাচনে এলাকার উন্নয়নের প্রশ্ন তো আছেই কিন্তু তার সাথে রাজ্যের মৌলিক সমস্যাগুলোকেও এড়িয়ে যাচ্ছেননা। বলছেন, ‘সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী আবার ঢেকুর তুলেছেন, শিক্ষিত বেকারদের আড়াই হাজার, তিনহাজারে নাকি ইন্টার্নশিপ করাবেন। ওই সিভিক ভলান্টিয়ার গোছের সিভিক শিক্ষক আর কি! সরকার যদি ঠিক মত নিয়মকরে প্রাইমারি আর এসএসসি করাতে পারত তা’হলে এসবের দরকার হতনা। এখন ইন্টার্নশিপের খুড়োর কল ঝোলাচ্ছেন বেকারদের সামনে।’

খড়গপুর পুরসভার ১নম্বর ওয়ার্ড থেকে গত পুর নির্বাচনেও জয়ী হয়েছিল সিপিএমই। স্থানীয় এক সিপিএম কর্মী জানান, ‘সেবার ২০১৫, জেলার পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খড়গপুরের দখল দিতেই হবে এমনই প্রতিজ্ঞা ছিল তৎকালীন পুলিশ সুপার। ভোটের আগের দিন রাতেই বাড়ি থেকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায় ইন্দা এলাকার কয়েকজন নেতাকে। চারিদিকে ভয়ভীতি আর সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছিল পুলিশ। কিন্তু মাথা নত করানো যায়নি তেঁতুলডাঙার। বুক চিতিয়ে দল বেঁধে ভোট দিয়ে জিতিয়েছিল সিপিএমকে।’ পুরসভা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলনা তৃনমূল। শুরু হল নতুন খেলা। পুলিশের নেতৃত্বেই শুরু হল সেই খেলা। একদিকে মামলা মোকদ্দমার ভয় দেখানো, অন্যদিকে সমাজবিরোধীদের লেলিয়ে দেওয়া আর টাকা আর চাকরির অফার। বিরোধী ভাঙিয়ে বোর্ড গড়ল তৃনমূল। ১নম্বর ওয়ার্ডের জয়ী প্রার্থীও চলে গেল তৃনমূলের ঘরে। সেই জবাবও দিতে চায় ১নম্বর ওয়ার্ড। সামনে লাল ঝান্ডা হাতে দিন মজুরের মেয়ে। মেয়ের পাশে বুক চিতিয়ে বাবা গোপাল আর মা ভাবনী। চরম দারিদ্র আর লোভের হাতছানিতেও লালঝান্ডা ছাড়েনি পরিবার। খেটে খুটে মেয়েকে পড়াচ্ছেন তাঁরা।

গোপাল সিং বলেছেন, ‘আমাদের আদিবাসী পরিবারের রেওয়াজই হল অল্প বয়সে বিয়ে। বিশেষ করে মেয়েদের। প্রস্তাবও এসেছে, অনেকেই বলেছেন মেয়েকে বিয়ে দিয়ে ভারমুক্ত হও। আর কতদিন বইবে? আমরা রাজী হয়নি। লালঝান্ডা আমাদের শিখিয়েছে সন্তান শুধু পরিবারের নয়, সমস্ত সমাজের। তাকে যত জ্ঞানী করবে সমাজ তত জ্ঞানী হবে। মেয়েও এখনই বিয়েতে রাজী নয়। বাবা-মার হাতে লালঝান্ডা দেখতে দেখতেই বড় হওয়া সঙ্গীতার। যফলা আদর্শ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক করার পর ইন্দা কৃষ্ণলাল শিক্ষা নিকেতন থেকে উচ্চমাধ্যমিক। তারপর খড়গপুর কলেজে গিয়ে পড়াশুনার পাশাপাশি ছাত্র রাজনীতি। বর্তমানে এস.এফ.আই খড়গপুর পূর্ব লোকাল কমিটির সভাপতি এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্যা। সহযোদ্ধাদের কাছে সে যেন রাজ্যের মহিলা নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জী, খড়গপুরের মীনাক্ষী। সেই মীনাক্ষীকেই সামনে রেখে লড়াইয়ে নেমেছেন তাঁর কমরেডরা।

- Advertisement -
Latest news
Related news