নিজস্ব সংবাদদাতা: সাত সকালে মেদিনীপুর শহর লাগোয়া তোলাপাড়া থেকে উদ্ধার হয়েছে এক যুবকের মৃতদেহ। আনুমানিক ২৮ বছর বয়সী ওই যুবককে সেক পল্টু বলে সনাক্ত করা গেছে। জানা গেছে মৃত যুবকের বাড়ি মেদিনীপুর শহর ঘেঁষা ধর্মা এলাকায়। নিজের বাড়ি থেকে এতদূরে এসে ওই যুবক কী কারণে এসেছিল তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে মৃতদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে যদিও কী কারণে মৃত্যু তা নিয়ে এখুনি মুখ খুলতে রাজী হয়নি পুলিশ। মেদিনীপুর কোতওয়ালি থানার এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘ যতদূর জানা গেছে ওই যুবক মাদকাসক্ত ছিল। ব্রাউনসুগার ইত্যাদি নেশা করত। সেই নেশার জন্যই সে এই এলাকায় এসেছিল কিনা আমরা খতিয়ে দেখছি। বাকিটা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরই পরিস্কার হবে।’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, যুবকের জামা কাপড় ছেঁড়া ছিল এবং শরীরে আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। তাকে ওই তোলাপাড়ার শিবমন্দির সংলগ্ন একটি বিদ্যুৎবাতি স্তম্ভে বেঁধে বেধড়ক মারধর করেছে কিছু মানুষ। তাঁদের সন্দেহ টোটোর ব্যাটারি চুরি করতে এসে ধরা পড়ে যায় ওই যুবক। এরপরই কয়েকজন মিলে তাকে বেঁধে ফেলে ল্যাম্পপোস্টের সঙ্গে। তারপরই বাঁশ লাঠি ইত্যাদি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। ভোর বেলার এই ঘটনায় যুবকটি অচৈতন্য হয়ে পড়ার পরই তাকে ফেলে পালায় ওই ব্যক্তিরা। পরে পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে বেশকিছু গাছের লতা পাওয়া গেছে যা দেখে মনে করা হচ্ছে যে ওই লতা দিয়েই বেঁধে রাখা হয়েছিল যুবককে। যদিও ঘটনাস্থল থেকে চুরি যাওয়া কোনও ব্যাটারি বা অন্যকিছুর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
ঘটনা নিয়ে পুলিশও যেমন মুখ খুলতে চায়নি তেমনই মুখ খুলতে চাননি এলাকার মানুষ। যুবককে এই ধরনের পিটিয়ে মারার ঘটনায় জড়িয়ে পড়তে হতে পারে এমন ভয় কাজ করছে। কিছু মানুষ বলেছেন যে ভোররাতে যুবককে যখন মারধর করা হচ্ছিল তখন তা দূর থেকে তাঁরা দেখেছেন কিন্তু বিষয়টি দু’দল সমাজবিরোধীর মধ্যেকার ঘটনা বলে তাঁরা এগিয়ে আসতে সাহস পাননি। অনেকের বক্তব্য যারা ওই যুবককে মারধর করেছে তারা এলাকার কেউ নয়। অন্য জায়গা থেকে যুবককে তাড়া করতে করতে এসে এখানে ধরে ফেলে। স্থানীয় লোকজন হলে হাতের সামনে অথবা বাড়ি থেকে দড়ি পেত। যারা মেরেছে তাঁরা দড়ি পাননি বলেই লতাপাতা জোগাড় করে বেঁধে ছিল যুবককে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, এটা ঘটনা যে এলাকায় ছিঁচকে চুরির পরিমান অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। বাড়ির বাইরে ভুল করে থেকে যাওয়া বালতি, বাসন থেকে টোটোর ব্যাটারি ইত্যাদি চুরিতে নাজেহাল মানুষ। আর এই চুরির পেছনে রয়েছে ওই ‘পাতাখোর’ বা ব্রাউন সুগার আসক্ত কিশোর, যুবককরা। আর বারংবার ব্যাটারি চুরি হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছিল টোটো চালকদের মধ্যে। তক্কে তক্কে ছিলেন তাঁরাও। মঙ্গলবার ভোরে কোনও ভাবে তাঁদের হাতে ধরা পড়ে যায় সেক পল্টু। মৃতদেহের কাছ থেকে একটি সাইকেল ও একটি নাইলন ব্যাগ পাওয়া গেছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।