নিজস্ব সংবাদদাতা: কাজ থেকে ফিরে মায়ের বানানো চা খেতে খেতে ফোনটা এসেছিল। বন্ধুর ফোন। এখুনি আসছি বলে বেরিয়ে গেছিল ছেলেটা। দেড় ঘন্টার মাথায় খবর এল ছেলে আর আসবেনা। বাড়ি থেকে ১৫ কিলোমিটার দুরে লাশ হয়ে পড়ে আছে সে। খড়গপুর পৌরসভার ৩৩নম্বর ওয়ার্ডের রবীন্দ্রপল্লীর বাসিন্দা বছর পঁচিশের আনন্দ রাও। আইআইটি খড়গপুর ক্যাম্পাসের ভেতরে একটি বেসরকারি নির্মাণসংস্থায় সদ্য কাজ পেয়েছিল।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে কেশিয়াড়ী থানার খাজরা বাস স্ট্যান্ড থেকে দক্ষিণ দিকে কুশগেড়িয়াতে। বাইক চালিয়ে কেশিয়াড়ীর দিক থেকে খড়গপুর ফিরছিল ওরা। বাইক চালাচ্ছিল লাল্টু প্রামানিক, পেছনে আনন্দরাও। কুশগেড়িয়ায় রাস্তার ধারে স্টোন চিপস খালি করছিল একটি ট্র্যাক্টর। ট্র্যাক্টরের পেছনে ব্যাক লাইট ছিলনা। সন্ধ্যা ৭টা। অন্ধকার গাঢ়, কুয়াশাও নামছিল ফলে ট্র্যাক্টরের অস্তিত্ব টের পায়নি ওরা। খড়গপুর- কেশিয়াবড়ী রাজ্য সড়ক শুনশান, জোরেই ছুটছিল বাইক। ঠিক ওই সময় উল্টো দিক থেকে আসা একটি গাড়ি আসায় তাকে জায়গা দিতে গিয়ে সরাসরি ট্র্যাক্টরের পেছনে গিয়ে ধাক্কা মারে বাইক। বাইক সমেত লাল্টু থেঁতলে যায় ট্রাক্টরের পেছনেই। আর আনন্দ বাইক থেকে ছিটকে পড়ে পীচের শক্ত রাস্তায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রচন্ড একটা শব্দে চমকে ওঠেন তাঁরা। রাস্তার ধারে একজন জানান বাইকের পেছনে থাকা ছেলেটা যেন উড়ে উপর দিকে উঠে যায় এবং মাথা নিচু অবস্থায় রাস্তায় আছড়ে পড়ে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় আনন্দের। লাল্টুকে প্রথমে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানেই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে সে। তার চোখ মুখ কপাল বিকৃত হয়ে গেছে। বাঁচার সম্ভবনা ক্ষীন। বেআইনি ভাবে মাল নামানো ট্র্যাক্টর পালিয়েছে। পুলিশ সন্ধান করছে ট্রাক্টর ও তার চালকের। আনন্দর মৃতদেহ খড়গপুর হাসপাতালের মর্গে, ময়নাতদন্তের অপেক্ষায়।
পুলিশ জানিয়েছে, ‘দুজনের কারুরই মাথায় হেলমেট ছিলনা। হেলমেট থাকলে আনন্দের মরারই কথা নয়। কেশিয়াড়ী পুলিশের এক আধিকারিক আক্ষেপের স্বরে বলেছেন, পুলিশ নিরন্তর সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফের প্রচার চালাচ্ছে। নিয়মিত হেলমেটহীন আরোহীদের ধরছে কিন্তু তবুও সচেতন হচ্ছেনা বাইক আরোহীরা। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। কেউ কেউ সঙ্গে হেলমেট রাখে কিন্তু পরেনা । পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে যেন মজা পায় এরা। আর সেই মজা দেখাতে গিয়েই বাপ মার কোল খালি করে এভাবেই অকালে চলে যায়। হেলমেট থাকলে মাথাটা যে বাঁচে আর মাথা বাঁচলে জীবনটাও বেঁচে যায়, কে বোঝাবে এদের?’