শশাঙ্ক প্রধান: ‘পুলিশের চালক বলবেন না, বড়বাবুর পার্সোনাল ড্রাইভার। বড়বাবুর নিজস্ব ড্রাইভার ছিল!’ এমনটাই জানালেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের এক আধিকারিক। অর্থাৎ একান্তই বড়বাবুর ব্যক্তিগত চালক। আর তাতেই সেই চালক তোলা তুলেছে কোটি টাকার বেশি! তোলা তুলেছে পুলিশের নাম করেই। শুক্রবার ওড়িশার পুরী (Puri) থেকে গুড়গুড়িপাল থানার পুলিশ গ্রেফতার করে এনেছে সেই চালক বাপ্পা বেজকে।
পুলিশ জানিয়েছে গত ১মাস ধরে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল বাপ্পা। এরপর তার সন্ধান করতে করতে পুলিশ পাশের রাজ্য ওড়িশার পুরীতে পৌঁছায় এবং পুরীর সমুদ্র সৈকত থেকে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। শনিবার মেদিনীপুর আদালতে পেশ করার পর বাপ্পাকে ৬দিনের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে বছর তিরিশের বাপ্পা বেজের বাড়ি গোয়ালতোড় এলাকায়। গোয়ালতোড় কলেজের পেছন দিকে বাড়ি। গোয়ালতোড় থানায় সেকেন্ড অফিসার ছিলেন সাব ইন্সপেক্টর শঙ্খ চ্যাটার্জী। সম্ভবতঃ সেখানেই বাপ্পার সাথে পরিচয় হয় তাঁর। এরপর পিংলা থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক বা OC হিসাবে যোগ দেন শঙ্খ। সেখানেই তিনি নিজের চালক হিসাবে নিয়ে যান বাপ্পাকে। সেই থেকেই বাপ্পা OC র গাড়ি চালাতো। পিংলা থেকে শঙ্খ চ্যাটার্জী গুরগুড়িপাল থানার OC হিসাবে বদলি হন। মাস দুয়েক আগে কোনও একটি অভিযোগের ভিত্তিতে গুরগুড়িপাল থানা থেকে সরিয়ে দিয়ে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয় শঙ্খ চ্যাটার্জীকে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে তোলা তোলার অভিযোগ আসে বাপ্পার বিরুদ্ধে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এক পুলিশ আধিকারিক জানাচ্ছেন, “পিংলা এবং গুরগুড়িপাল থানা থেকে ভুরিভুরি অভিযোগ দায়ের হয়েছে বাপ্পার বিরুদ্ধে। পিংলা এবং পার্শ্ববর্তী থানা সবংয়ের বেশকিছু ব্যবসায়ী, লরির মালিক এবং গুড়গুড়িপাল থানার বালি খাদানের মালিক এবং বালি বহন করে এমন গাড়ির মালিকরা অভিযোগ করেছেন, কখনও পুলিশের নাম করে কখনও আবার সরাসরি বড়বাবুর নাম করেও রাশিরাশি টাকা তুলেছে বাপ্পা বেজ। অভিযোগপত্র অনুযায়ী আদায়িকৃত অর্থের পরিমাণ কোটি টাকার কাছাকাছি!”
পুলিশের কাছে এখন প্রশ্ন এই তোলা বাপ্পা বেজ পুলিশ বা OC র নাম করে নিজেই তুলত নাকি OC শঙ্খ চ্যাটার্জী বাপ্পাকে দিয়ে তোলা তোলাতেন? পুলিশের বক্তব্য, OC র চালক হিসাবে বাপ্পা মানুষকে ভুল বুঝিয়ে পুলিশের নামে টাকা তুলতেই পারে কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যেখানে ব্যবসায়ীরা ১০হাজার, ৫০হাজার কিংবা তারও বেশি তোলা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন সেখানে তাঁরা কী শঙ্খ চ্যাটার্জীর সঙ্গে কথা না বলেই তোলা দিয়েছিলেন? দ্বিতীয়তঃ এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, বাপ্পা নিছকই বড়বাবুর গাড়ির নিজস্ব চালক ছিলেন নাকি অন্য কোনও ভূমিকা ছিল তাঁর সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারন একটি সূত্রে জানা গেছে বাপ্পা বেজ চালকের পাশাপাশি বড়বাবুর ম্যানেজারের কাজও করত। অর্থাৎ তাঁর তহবিলের জমা খরচ রাখত।
প্রশ্ন উঠেছে থানার একজন OC যেখানে সরকারি ভাবে সর্বক্ষণের গাড়ি পাচ্ছেন, চালক পাচ্ছেন সেখানে একজন নিজস্ব চালকের কী দরকার ছিল আর যদি একান্তই নিজস্ব চালককে তাঁকে রাখতেই হয় তবে সরকারি কাজে, তদন্ত বা তল্লাশিতে সেই চালককে ব্যবহার করা হবে কেন? আর একজন OC-র ম্যানেজারের কী প্রয়োজন? পুলিশের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ” আমরা ৬দিনের হেফাজতে নিয়ে এসেছি বাপ্পাকে। আগে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কী তথ্য পাওয়া যায় দেখি। তারপর অন্য বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হবে।”