নিজস্ব সংবাদদাতা: ওই গ্রাম তো দুরের কথা আশেপাশের ৫০/১০০ গ্রাম, মায় গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বাচ্চা ছেলে চুরি হয়েছে এমন কোনও অভিযোগই নেই অথচ ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়ে মেরে ফেলা হল এক ভবঘুরেকে, মার খেয়েও প্রাণে বেঁচেছেন এক মহিলা। দু’মুঠো ভাতের জন্য মানুষের বসতির মধ্যে ঘুরে বেড়ানো যে কী ভয়ানক মানুষের জন্য তারই জলজ্যান্ত উদাহরণ রাখল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথির বিরামপুট গ্রাম। দুই অসহায় নরনারীর প্রাণ বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা আর গগন বিদারী কান্না হাহাকার ঢাকা পড়ে গেল ছেলেধরা শিকারীদের জান্তব উল্লাসে! হায় মানুষ! এখনও নিজেকে মানুষ বলে দাবি কর? স্বজাতি পিটিয়ে মারার আনন্দ প্রাণীকুলে আর কোন প্রাণী করে থাকে?
বুধবার রাতে দিনান্তের ভিক্ষা পর্ব সেরে গ্রামে আশ্রয় নিতে যাওয়া এক মহিলা ও পুরুষ ভবঘুরেকে এমনি নির্মম গণপিটুনি দেওয়া কাঁথির জুনপুট কোস্টাল থানার বিরামপুট এলাকায়। কিল চড় লাথির সঙ্গে বাঁশ বাটাম আর লাঠির মারে মৃত্যু হয়েছে আক্রান্ত পুরুষ ভবঘুরেটির। পুরুষত্বে বাধায় হয়ত কম মারা হয়েছিল মহিলাটিকে তাই চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিনি। অমানবিক এই ঘটনায় পুলিশ একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করলেও কাউকেই এই অবধি গ্রেপ্তার করতে পারেনি। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে ছেলেধরা সন্দেহে ওই দুই ভবঘুরেকে মারধর করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শুধুমাত্র সন্দেহের বশেই এই নৃশংসতা জানিয়ে পুলিশ বলছে শুধু ওই এলাকা কেন আশেপাশের কোথাও কোনও শিশু চুরির ঘটনা ঘটেইনি।
জুনপুট কোস্টাল থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছেভ, বুধবার রাত সাড়ে ৯ টা নাগাদ স্থানীয় বহুমুখী আশ্রয় কেন্দ্রের কাছে ঘটনাটি ঘটেছে। বিভিন্ন জায়গায় খাদ্য সংগ্ৰহ করার পর মানুষ দুটি রাতের আশ্রয় নেওয়ার জন্য ওই আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কিছু মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই দুজনের ওপর। গনহিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত আরও কিছু মানুষ পরে সামিল হয় গনপিটুনিতে। অসহায় নারী পুরুষ দুটি লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। খবর পেয়ে পুলিশ আহত অবস্থায় মহিলা ও পুরুষকে উদ্ধার করে। কাঁথি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা পুরুষ লোকটিকে মৃত বলে জানান। মৃত এবং আক্রান্তের নাম-পরিচয় জানতে পারেনি পুলিশ। তবে মৃত পুরুষটির বয়স পঁয়তাল্লিশ এবং আক্রান্ত মহিলা বছর চল্লিশের বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কাঁথির মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সোমনাথ সাহা বলেন, ‘ ছেলেধরা সন্দেহে ওই ভবঘুরে মহিলা ও পুরুষকে মারধর করা হয় বলে আমরা জানতে পেরেছি।গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে পরুষ লোকটির।আক্রান্ত মহিলা অবশ্য সুস্থ রয়েছেন। চিকিৎসার পর বৃস্পতিবার তাঁকে আদালতে তোলা হয়। ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু হয়েছে। তদন্ত চলছে।’
প্রাথমিক ভাবে স্থানীয় সূত্রে যা জানা গেছে তা আরও মর্মান্তিক। বুধবার বিকেল নাগাদ সমুদ্র বাঁধের কাছে স্থানীয় এক শিশুর সঙ্গে খুনসুটিতে মেতে উঠতে দেখা যায় ওই ভবঘুরে মহিলাকে। যা নজরে পড়ে ছিল স্থানীয় কিছুজনের। পরে চারপাশে খবর ছড়িয়ে পড়ে, গ্রামে ছেলেধরা এসেছে। পাগলের সাজে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। এ খবরে উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। এরপর রাত সাড়ে ৯ টা নাগাদ ওই মহিলাকে বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের সমানে পেয়ে ঘিরে ধরেন একদল গ্রামবাসী। শুরু হয় মারধর। কিছুক্ষনের মধ্যেই সেখানে এসে পৌঁছায় পরুষ ভবঘুরে লোকটি। রাস্তা থেকে তাঁকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় আশ্রয় কেন্দ্রে। তারপর সেখানে গ্রিলে বেঁধে চলে বেদম প্রহার। কী ভয়ঙ্কর অপরাধ তাইনা? সংসার হারানো এক মহিলা কোনও শিশুকে কেন্দ্র করে যদি মাতৃত্বের স্বাদ উপলব্ধি করেন?