Thursday, May 2, 2024

Digital Class Room: নিজের খরচেই আধুনিক ক্লাশরুম! নয়াগ্রামের অজ গাঁয়ের শৈশব মেতেছে ডিজিটাললেই

- Advertisement -spot_imgspot_img

নিজস্ব সংবাদদাতা: হাত বাড়ালেই পাশের রাজ্য ওড়িশা। নিবিড় জঙ্গলমহলের এই অজ গ্রামটি সদ্য আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়ে ওঠা নয়গ্রাম বাজার থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার। ঘন জঙ্গল আর অনুর্বর ডাহি জমি পরিপূর্ণ গ্রামের নাম গড় খেলাড়। উপজাতি আর সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই গ্রামের মানুষের জীবিকা শালপাতা সংগ্ৰহ, বাবুই দড়ি বানানো আর গরু কেনাবেচা। কৃষি এখানে সচরাচর বাড়ন্ত। তেমনই এক গাঁয়ের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল ক্লাশরুম তৈরি করে চমকে দিয়েছেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সনাতন মাহাত। সমগ্র জঙ্গলমহল তো দুরের কথা, লাগোয়া পশ্চিম মেদিনীপুরের শহর কিংবা মফঃস্বলের কোনও স্কুলে এমন দৃষ্টান্ত বিরল।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম ১ চক্রের আওতাধীন এই স্কুলটিতে পঞ্চমশ্রেণী অবধি পড়ুয়ারা পাঠ নিয়ে থাকে আর মোট পড়ুয়ার সংখ্যা ১৬৫জন। প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণী অবধি প্রতিটি ক্লাশই দিনে ১ঘন্টার জন্য এই ডিজিটাল ক্লাশের আওতায় থাকে। অর্থাৎ প্রধান শিক্ষক প্রতিদিন ৫ ঘন্টা ধরে প্রতিটি পড়ুয়াকে ডিজিটাল পাঠ দিয়ে থাকেন। ‘নো ব্ল্যাকবোর্ড’ পদ্ধতিতে পাঠ নেওয়ার আনন্দে তাই পড়ুয়াদের অভ্যাস হয়ে গেছে ‘নো স্কুল ফাঁকি’তে! করোনা কালীন অতিমারীর ফলে দীর্ঘ ২ বছর ধরে স্কুলের বাইরে থাকা কচিকাঁচা পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করার এই অভিনব উদ্যোগটি সনাতন মাহাতো নিয়েছেন সম্পূর্ন নিজের খরচেই। কিন্তু কেন? নিজের খরচে হঠাৎই এসব করতে গেলেন কেন?

সনাতন জবাব দিয়েছেন, লকডাউনে আমাদের দপ্তরীয় কিছু কাজকর্ম করতে হলেও পড়াতে হয়নি। অনেকেই শিক্ষক শিক্ষিকাদের ব্যঙ্গ করেছেন বসে বেতন নিয়েছি বলে। তারই একটা প্রতিক্রিয়া হয়ত জানানোর তাগিদ জন্মেছিল। তাই এই ভাবনা। ইউটিউব দেখে দেখেই তৈরি করে ফেললাম এই ডিজিটাল ক্লাশরুম। প্রথমেই ৫৬ হাজার টাকা দিয়ে কিনে ফেললেন একটা স্যামসাং ৪৪ আল্ট্রা এইচডি ( sumsung 44 ultra hd) স্মার্ট এলিইডি প্যানেল টিভি। তারপর ৩২ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছেন একটি ল্যাপটপ। বাকিটা শিখিয়েছে স্মার্ট ইনফো ভিশনের টিউটোরিয়াল ক্যাসেট।

সনাতন বলেন, ” প্রাথমিকের ভাষা শিক্ষা থেকে অঙ্ক, ইংরেজি অথবা বিজ্ঞানের প্রাথমিক পাঠে চমৎকার কাজ দিচ্ছে এই স্মার্ট ক্লাশরুম। ধরুন আমি বাচ্চাদের খরগোশ সম্পর্কে পরিচিতি দিতে চাই কিংবা রয়েলবেঙ্গল টাইগার আর চিতাবাঘের ফারাক। নিমেষেই তারা ছবি থেকে সজীব হয়ে উঠছে। তাদের চলাফেরা, হাঁক, ডাক , গর্জন সমস্ত কিছুই দেখানো যাচ্ছে। একই ভাবে মানবদেহের অভ্যন্তরে ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, যকৃতের কার্যকলাপ থ্রি-ডি মোশানে ছেলে মেয়েরা দেখতে পাওয়ার ফলে দ্রুত তাদের মনে ধারণা গড়ে উঠছে। পাঠ মনেও রাখা সহজ হয়ে পড়ছে।”

নয়াগ্রাম ১চক্রের শিক্ষাবন্ধু লোকেশ মাহাত বলেছেন, ‘ সনাতনবাবুর এই উদ্যোগ বদলে দিয়েছেন পড়াশুনার ধরনটাই। লকডাউনে বহু ছেলে মেয়ে ডিজিটাল পড়াশুনায় অভ্যস্থ হয়ে উঠেছিল। ফের চিরাচরিত পদ্ধতিতে ফিরে আসতে হয়ত তাদের সমস্যা হত কিন্তু সেই ঘাটতি দুর করে দিয়েছে এই স্মার্ট ক্লাশরুম। ছেলেমেয়েদের পড়ার আগ্রহ দ্বিগুণ হয়ে গেছে।’ ক্লাশ ফাইভের আনিশা খাতুন কিংবা ফোরের তাবসুম খাতুনরা এখন মেতে রয়েছে সনাতনের ডিজিটাল ক্লাশরুমেই। স্কুল শুরুর ঘন্টা পড়ার আগেই জুটে যাচ্ছে পড়ুয়ারা। নো লেট!

- Advertisement -
Latest news
Related news