নিজস্ব সংবাদদাতা: জেলা সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম প্রকাশ্য জনসভায় এলেন সুশান্ত ঘোষ। এলেন খড়গপুর পৌরসভার প্রচারে আর শুরুতেই নিজস্বতার প্রমান রাখলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের এই লড়াকু নেতা। জনসভায় বসলেন পেছনের সারিতে আর ৩ প্রার্থীকে রাখলেন একেবারে সামনের সারিতে। ঘটনার গুরুত্ব বোঝেননি সিপিএমের স্থানীয় নেতারাও।

খড়গপুর শহর সিপিএমের এক নেতা মানতে বাধ্য হয়েছেন যে এভাবে বিষয়টা ভাবা হয়নি। খড়গপুর শহরের ওই নেতা বলেন সাধারণ ভাবে এই ধরনের সভায় মূলবক্তার পাশাপাশি সভার সভাপতি ও উচ্চতর নেতৃত্বের বসার ব্যবস্থা সামনের সারিতেই রাখা হয়। প্রার্থীরাও মঞ্চেও থাকেন। প্রার্থী পরিচিতি করানোর সময় তাঁদের নাম বললে তাঁরা উঠে দাঁড়ান এবং উপস্থিত জনতাকে নমস্কার করেন অথবা হাত নাড়েন। কিন্তু সুশান্ত দা সেই রীতির বাইরে গিয়ে আমাদের ১নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী সঙ্গীতা সিং, ২নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী জয়দীপ বোস এবং ২০নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী রানী কুমারী শর্মাকে সামনের সারিতে রেখে নিজে পেছনের সারিতে চলে যান। সামনের সারিতে ওই তিন প্রার্থীর পাশে বসার জন্য আরও চেয়ার থাকা স্বত্ত্বেও তিনি বসেননি। বলা বাহুল্য নির্বাচনী প্রচার সভায় এটা একটা নতুন রেওয়াজ চালু হয়ে গেল।
উল্লেখ্য ২০১১ সালের পর ২০২১ সালের নির্বাচনের আগে ছাড়া জেলায় পা রাখতে পারেননি সুশান্ত ঘোষ। তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের দায়ের করা একটি মামলায় জামিন পাওয়া স্বত্ত্বেও সরকার তাঁকে জেলায় প্রবেশ করতে না দেওয়ার আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। সুশান্ত ঘোষ হাইকোর্টের সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।
সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে নিজের জেলায় প্রবেশের অনুমতি দেন। এই গোটা পদ্ধতিতে ঘোষকে একদশকের কাছাকাছি জেলার বাইরে থাকতে হয়েছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরপরই নিজের বিধানসভা ক্ষেত্রে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন ঘোষ। ফলে জেলায় সেই ভাবে প্রচারে অংশ নিতে পারেনি। মাত্র কয়েকদিন আগেই ডেবরার জেলা সম্মেলনে জেলা সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর এই প্রথম কোনও সমাবেশে হাজির হলেন ঘোষ।
এদিনের সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সিপিএমের সদ্য নির্বাচিত জেলা সম্পাদক খড়গপুর শহরবাসীকে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, খড়্গপুর পৌরসভায় তৃণমূল এখনেও পর্যন্ত মানুষের রায়ে জিতে আসতে পারেনি। ২০১৫ সালে ৩৫ আসনের পৌরসভায় মাত্র ১১টি আসনে জয়ী হয়। তারপর কীভাবে তৎকালীন পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে মাফিয়া অন্ধকার জগতের লোকজন দিয়ে বিরোধী দলের কাউন্সিলরদের ঘর থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মামলার ভয় সহ নানান প্রলোভন দিয়ে বোর্ড দখল করেছিল। পাশাপাশি ঘোষ মানুষকে এও জানিয়ে দেন যে, পুলিশি রাজ ও তোলাবাজ রাজনীতি রুখে দেওয়ার সু্যোগ যেন মানুষ হাত ছাড়া না করেন। ঘোষ বলেন, এখন তৃণমূল বিজেপি সব মিলেমিশে একাকার। দলে দলে তৃণমূল নেতারা বিজেপি গিয়েছিলেন টিকিট পেতে আবার বিধানসভা ভোটের পর আবার তৃণমূলে ফিরে আসছেন পদের জন্য, কামাইয়ের জন্য। ঘোষের ভাষায়, ‘একটা বড় ফুল আর একটা ছোটো ফুল। কিন্তু দুটি ফুলই বিষাক্ত! দুই ফুলে মাথা ধরলে বাম লাগান। দেশ ও রাজ্য বাঁচান, নিজেদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করুন। ঘোষ ছাড়াও এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বিজয় পাল এবং পার্টির খড়গপুর নেতারা।