নিজস্ব সংবাদদাতা: ছোট বেলাতেই বাবা মাকে হারিয়ে পড়েছিলেন আত্মীয় রূপী শত্রুদের হাতে। সেই আত্মীয়দের খপ্পর থেকে গিয়ে পড়েছিলেন নারী মাংস ব্যবসায়ীদের হাতে। পাচার চক্রের ফাঁদে পড়ে একদিন নিজের অজান্তেই হয়ে গেছিলেন পতিতাপল্লীর স্থায়ী বাসিন্দা।

নিত্যদিন খদ্দের জুটিয়ে মালিকের লাভের অঙ্ক বাড়ানোই ছিল তাঁর কাজ। আর এভাবেই একের পর অন্ধকার পতিতাপল্লী পেরিয়ে এসে পৌঁছেছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের আরেক পতিতাপল্লীতে। তখনও বুঝতে পারেননি এখানেই তাঁর জন্য অপেক্ষা করেছে আলোর পাখি। সোমবার সেই আলোর পাখির ডানায় চড়েই মুক্তির উড়ান খুঁজে পেলেন সেই কন্যা।
সোমবার এমনই এক আশ্চর্য শুভ পরিণয়ের স্বাক্ষী থাকলেন মহিষাদলের বাসিন্দারা। এলাকার প্রতিষ্ঠিত ক্লাব নীহারিকার সদস্যদের উদ্যোগে ও সহযোগিতায় স্থানীয় এক যুবকের সাথে বিয়ে হয়ে গেল সেই কন্যাটির। স্থানীয় সরস্বতী মন্ডপে বিবাহ উপলক্ষ্যে হাজির ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। দু’হাত ভরে নবদম্পতিকে আশীর্বাদও করে যান তাঁরা।
জানা গেছে এই পতিতালয়েই হোম ডেলিভারি বা খাবার সরবরাহ করতে আসতেন স্থানীয় একটি হোটেলের মালিক। এখানেই ওই যুবক হোটেল মালিকের সাথে আলাপ হয় ২১ বছরের ওই কন্যার। ক্রমশ যা পরিণত হয় প্রণয়ে। মাস পাঁচেক পর দুজনেই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বিয়ে বললেই বিয়ে করা যায়না। ওই যুবকের পরিবারের পক্ষে যেমন এই বিয়ে চরম অস্বস্তির ছিল তেমনই সমস্যা ছিল পতিতালয়ের মালিকানা থেকে মুক্তির।
এই অবস্থাতেই নীহারিকা ক্লাব কাম স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দ্বারস্থ হন ওই হোটেল ব্যবসায়ী যুবক। সংস্থার সদস্যরা মুশকিল আসান হয়ে আসেন। সংস্থার সম্পাদক মানস বেরা জানান, ‘এই অসম্ভবকে সম্ভব করার কাজ ক’জন করতে পারেন। অন্ধকার জগৎ থেকে একটি মেয়েকে আলোর দিশা দেখানো শুধু গল্প আর সিনেমার কাহিনীতেই দেখা যায় কিন্তু বাস্তবে এ যেন এক অলীক কল্পনা। তাই এই প্রস্তাব আসা মাত্রই দেরি করিনি আমরা। সমস্ত স্তরে আলোচনা করে সব্বাইকে সম্মত করে সম্ভব হয়েছে এই মহৎ কাজ। এই মহৎ কাজ ব্যর্থ হয়ে গেলে নতুন করে এই কাজে আর কেউ এগিয়ে আসবেননা।’ মানস আরও বলেছেন, ‘শুধু ওই যুবকই নন, আমরা প্রশংসা জানাবো তাঁর পরিবারকেও যাঁরা অবশেষে পুত্রবধূ হিসাবে মেনে নিয়েছেন ওই কন্যাকে।’
সোমবার রাতে পুরোহিতের সঙ্গে বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণে সরস্বতীকে স্বাক্ষী রেখেই সিঁদুর দান ও মাল্য বিনিময়ের পর ক্লাবের ছোট্ট ঘরেই বসে তাঁদের বিয়ের আসর। যুবকের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে কন্যাদান করেছেন ক্লাবের উদ্যোক্তারাই। অবশেষে স্বামীর হাত ধরে শ্বশুরবাড়ির আলোয় যাত্রা শুরু। ( সামাজিক সুরক্ষায় নাম পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।)