নিজস্ব সংবাদদাতা: মাথার ওপরে পঞ্চায়েত নির্বাচন কিন্তু একটি আসনেও প্রার্থী দিতে পারল না তৃণমূল কংগ্রেস। মেরে কেটে ৪ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল বিজেপি কিন্তু একটি আসনে জয় পাওয়া তো দুরের কথা, বাম প্রার্থীদের লড়াইয়ে বহু পিছনে পড়ে রইলেন সেই প্রার্থীরা। প্রায় অবিশ্বাস্য ঘটনাটি ঘটেছে কৃষি সমবায় সমিতিতে। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানার কাশীনাথপুর। দাসপুর ২নম্বর ব্লকের অন্তর্গত এই সমবায় সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় রবিবার। ওইদিনই বিকালে ফল ঘোষণার পর দেখা যায় ১২টি আসনের ১২টিতেই বিপুল ব্যাবধানে জয়ী হয় সিপিএম মনোনীত সমবায় বাঁচাও মঞ্চের প্রার্থীরা। ফলাফল ঘোষণার পর বাম সমর্থকদের পাশাপাশি উচ্ছাসে ফেটে পড়তে দেখা গেছে সাধারন গ্রাম বাসীদেরও।
দাসপুর সিপিএম নেতা অমল ঘোড়াই জানিয়েছেন, ” পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে এই জয় আমাদের কর্মীদের আত্মবিশ্বাস দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিল। কারন এটা শুধুমাত্র একটি সমবায় সমিতির নির্বাচন নয় তৃনমূলের নির্বিচার লুটের প্রতিবাদে সরাসরি স্থানীয় জনগনের সমুচ্চারিত জবাবও। এই জয় এটা প্রমাণ করে দিয়েছে যে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে মুখ লুকানোর জায়গা পাবেনা তৃনমূল বিজেপি। বাম প্রার্থীদের হারাতে তৃনমূল ও বিজেপি যে বন্ধু তা যেমন এই নির্বাচনে প্রমাণ হল তার পাশাপাশি এটাও প্রমাণ হল যে জনগন ওই দুই শক্তিকে একই হিসাবে দেখছে এবং ঐক্যবদ্ধ ভাবে তাদের পরাস্ত করেছে।”
সারা ভারত কৃষক সভার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সম্পাদক মেঘনাদ ভূঁইঞা বলেন, ” ভোটে হারার আগাম বার্তা পেয়েছিল তৃনমূল। ওদের বিরুদ্ধে জনরোষ বাড়ছিল। তাই নির্বাচন বন্ধ করতে শেষ অবধি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় তৃণমূল নেতারা। মজার কথা সেই প্রক্রিয়ায় সাহায্যও করে সরকার। কিন্তু আইনি লড়াইতে পরাজিত হয়। এই ঘটনায় মানুষ আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ফলে প্রার্থী দিতেই সাহসই পায়নি তৃনমূল কংগ্রেস। তারা বিজেপির দেওয়া ৪ টি আসন জেতানোর চেষ্টা করে। যদিও শেষ অবধি ওই জোটের সবাই পরাস্ত হয়েছে। বিপুল ব্যাবধানে জয়ী হয়েছেন ১২জন বাম প্রার্থীই।”
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে বাম পরিচালিত এই সমিতির মেয়াদ শেষ হয়েছিল আড়াই বছর আগেই। কিন্তু অভিযোগ সরকারের তরফে কোনও নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়ার পরিবর্তে প্রশাসক বসিয়ে কাজ চালানো হচ্ছিল। সিপিএমের অভিযোগ সমবায় দখল না করার উপায় দেখেই তৃনমূল সরকার পিছনের দরজা দিয়ে প্রশাসক বসিয়ে সিপিএমকে আটকানোর চেষ্টা করেছিল। নির্বাচনের দাবিতে কলকাতা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয় বামেরা। আদালত নির্বাচন করানোর নির্দেশ দেন। সেই নির্বাচনই অনুষ্ঠিত হয় রবিবার। মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৯৬৯ জন। ভোটে অংশ গ্রহন করেন ৬৫১ জন। জয়ীদের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রাপ্ত ভোট ৫৭৭টি এবং সর্বনিম্ন ভোট ৫৩৩টি। বিজেপি সর্বোচ্চ ৮১ এবং সর্বনিম্ন ৬৪টি ভোট পেয়েছে।