নিজস্ব সংবাদদাতা: স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে সব চিকিৎসা হবে? না, হবেনা। স্রেফ জানিয়ে দিয়েছে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতাল। ফলে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে এগিয়ে যাচ্ছেন তমলুকের গণেশ মন্ডল। অবশ্য গণেশ একাই নয় তারই সাথে ধ্বংসের পথে মা, স্ত্রী আর ৮বছরের ছেলে নিয়ে ৪জনের সংসারটাও। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর তৃনমূল কংগ্রেসের ডেপুটি সুপ্রিমো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কাতর মিনতি করেছেন, আমাদের বাঁচান। রাজ্যে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে যখন সব চিকিৎসা হয় এমনই দাবি করে সরকার কিংবা শাসকদল তখন তার বিপরীতে গিয়ে এই চিত্র প্রশ্ন তুলে দেয় যে, তাহলে আসলে যা বলা হয়, প্রচার করা হয় তা কী আদৌ সত্য?
গণেশ মন্ডলের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক ব্লকের হরিদাসপুরের টুল্যা গ্রামে। ৪০বছর যুবক গণেশ ২০১৩ সালে জানতে পারেন তাঁর দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। সেই সময় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা হচ্ছিল তাঁর। জমি জায়গা সমস্ত কিছু বিক্রি করে ১৫লাখ টাকার কাছাকাছি খরচ করে ফেলেছে পরিবার। তারপর থেকে চলছে নিয়মিত ডায়লিসিসি। তার পেছনেও চলছে খরচ। কিন্তু এরই মধ্যে হঠাৎই একদিন তাঁর নাক মুখ দিয়ে রক্ত উঠতে শুরু করে। তাঁকে নিয়ে যায় তমলুক জেলা হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে কলকাতার নীলরতন হাসপাতালে পাঠান।
এই নীলরতন হাসপাতালে চিকিৎসা চলে ১১দিন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানায় তিনি আইটিপি রোগে আক্রান্ত । আর এই রোগের চিকিৎসার খরচ হয় লক্ষ লক্ষ টাকা। কারন যে ইঞ্জেকশন তাঁকে দিতে হয় যাঁর প্রতিটির মূল্য ১লাখ ৭০হাজার টাকার মত। নীলরতন হাসপাতালে সেই ইঞ্জেকশন সরবরাহ না থাকায় গনেশ মন্ডলকে বাড়ি চলে যেতে বলা হয়। ফলে বাড়ি ফিরতে হয় তাঁকে। বাড়ি ফিরে আসার পর ওই ইঞ্জেকশনের জন্য চারদিকেই চেষ্টা করতে থাকে গণেশের পরিবার যদিও স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও ওই ইঞ্জেকশন কেনার জন্য ছাড় মেলেনি কোথাও। শুধু তাই নয় সরকারি হাসপাতালে ওই সুবিধা পাওয়ার জন্য পিজি বা এসএসকেএমে গিয়েছিলেন গণেশ। সঙ্গে মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রর সুপারিশ সম্বলিত চিঠিও নিয়ে গেছিলেন কিন্তু পাত্তা দেওয়া হয়নি মন্ত্রীর চিঠিকেও।
গণেশের বৃদ্ধা মা কল্পনা মন্ডল জানিয়েছেন, ” মানুষের সব চেয়ে যন্ত্রণার কারন তাঁর সন্তানের অসহায়তা। আমাকে চোখের সামনেই দেখতে হচ্ছে সন্তানের এই করুন পরিণতি। মুখ্যমন্ত্রী শুনেছি গরিবের আশ্রয়। একজন মা হয়ে আমার তাঁর কাছে একটাই মিনতি আমার সন্তানকে বাঁচান, আমাদের পরিবারকে বাঁচান।” গণেশের স্ত্রী বুল্টি বলেছেন, ” আমাদের আর কিছুই নেই। সর্বস্ব দিয়ে ওঁর চিকিৎসা করিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি আমরা। এরপর যদি ওঁকে হারাতে হয় আমরাও আর বাঁচবনা। মুখ্যমন্ত্রী আমাদের বাঁচান।” গণেশ মন্ডল কাঁদতে কাঁদতে জানিয়েছেন,” প্রতি সপ্তাহে ডায়ালিসিস করাতেই চলে যায় বেশকিছু টাকা। এখন সেটা জোগাড় করতেই আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এরপর ইঞ্জেকশনের টাকা জোগাড় করব কী করে? আমার একটি ৮ বছরের সন্তান রয়েছে তার মুখে ভালোমন্দ তুলে দিতে পারিনা আজকাল। আমি শুনেছি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরাগী টিম অভিষেক বাংলার দুর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন। আমি হাত জড়ো করে আবেদন করছি এই পরিবারটির পাশে দাঁড়ান। নচেৎ আমার মৃত্যুর সাথে গোটা পরিবারই শেষ হয়ে যাবে।”