নিজস্ব সংবাদদাতা: সদ্য হয়ে যাওয়া মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে নাবালিকা মা, আসন্ন প্রসবা এবং বিবাহিতাদের সংখ্যা রীতিমতো দুশ্চিন্তায় ফেলেছে সমাজবিদদের। মেইনস্ট্রিম মিডিয়া যখন নাবালিকা মা পরীক্ষার্থীর মধ্যে ‘বীরাঙ্গনা’ দেখতে পাচ্ছে তখন ‘KGP বাংলা’ তুলে এনেছে লকডাউন ও দীর্ঘ স্কুল বন্ধের এক ভয়াবহ চিত্র। গোটা বাংলা জুড়েই দেখা গেছে ১৪/১৫ বছরে বিয়ে হয়ে যাওয়া আর ১৬/১৭ বছরে মা হওয়ার এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক শিক্ষিকা সমাজবিদরা। এবার সেরকমই একটি ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা গেল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদল এলাকায়। ক্লাশ নাইনে পাঠরতা একটি মেয়ের পড়া বন্ধ করে দিয়ে তার বিয়ে দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই নাবালিকার পরিবারের ৪জন এবং ছেলের পরিবারের ১জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি খোঁজ চালানো হচ্ছে বিয়ের পুরোহিত সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদল থানার অন্তর্গত ইটামগরা- ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। মহিষাদলের বিডিও যোগেশ চন্দ্র মন্ডল স্বয়ং উদ্যোগ নিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মহিষাদল থানার পুলিশকে। তারপরই পুলিশ ৫জনকে গ্রেফতার করে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ইটামগরা- ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের কেশবপুর জালপাই গ্রামের নবম শ্রেণীর ওই ছাত্রী গত সপ্তাহ থেকে হঠাৎই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। স্কুলের শিক্ষকদের সন্দেহ হওয়ায় খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন ছাত্রীর বিয়ের ব্যাবস্থা হচ্ছে। সাথে সাথে তাঁরা বিষয়টি বিডিও-র নজরে আনেন। মঙ্গলবার বিডিও যোগেশ চন্দ্র মন্ডল ওই ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখেন রবিবার (১৩ই মার্চ) পাশেরই পাড়ার এক তরুনের সাথে বিয়ে হয়ে গেছে ওই নাবালিকার।
এদিকে বিডিও মেয়ের বাড়িতে যাচ্ছে খবর পেয়েই আগেভাগেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান মেয়ে এবং ছেলের পরিবারের লোকজনেরা। এরপরই বিডিও অভিযোগ করেন মহিষাদল থানায়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মেয়ের মা, মেয়ের জেঠু, জেঠিমা ও কাকিমাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনও সন্তোষজনক উত্তর না মেলায় গ্রেফতার করা হয় প্রত্যেককেই। পরে অন্য একটি সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ গ্রেফতার করেছে পাত্রের বাবাকেও । পাত্র, পুরোহিত ও আরও বেশ কয়েকজনকে খুঁজছে পুলিশ। এই ঘটনায় স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের কী ভূমিকা ছিল, তাঁর কাছে কোনও খবর ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন।
আইনজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভারতের বাল্য বিবাহ নিরোধক আইন অনুসারে এই বিয়ের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের সর্বাধিক ৩মাসের জেল ও জরিমানা হতে পারে। আইনবিদদের মতে, সাধারণ নিয়ম অনুসারে ওই ছাত্রীকে স্বামীর ঘরে যেতে হলে আরও অন্ততঃ ৬বছর অপেক্ষা করে ফের বিয়ে করতে হবে। কারন বর্তমান নিয়ম অনুসারে বিয়ের জন্য মেয়েদেরও বয়স ২১ হওয়া বাঞ্ছনীয় এবং চলতি বিয়ে আইনসম্মত নয় বলে বাতিল হয়ে যাবে। মহিষাদলের বিডিও শ্রী মন্ডল জানান, ” দোষিদের বিরুদ্ধে পুলিশ তার নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় তদন্ত চালাবে এবং আদালত যা করবার করবে। আমরা নির্দিষ্ট আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ওই ছাত্রীকে পুনরায় স্কুলে পাঠানোর উদ্যোগ নেব।”