নিজস্ব সংবাদদাতা: মর্মান্তিক ঘটনার স্বাক্ষী রইল কেশপুর ব্লকের পিয়াশালা গ্রামপঞ্চায়েতের অধীন নিউ দন্ডপাট ক্লোড স্টোরেজের সামনের বাসিন্দারা। প্রায় সকলের চোখের সামনেই ষাঁড়ের গুঁতোয় প্রাণ হারালেন এক মধ্য বয়স্ক কৃষক।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মৃত কৃষকের নাম ধর্ম ঘোষ। তাঁর বাড়ি ওই একই গ্রামপঞ্চায়েতের অধীনের চিঁয়াপাট এলাকায়। জানা গেছে ধর্মের নামে ছেড়ে দেওয়া একটি ধর্ম ষাঁড়ের গুঁতোয় এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে। এই ঘটনায় একদিকে যেমন মানুষের মনে ওই খুনি ষাঁড়কে ঘিরে ত্রাসের সঞ্চার হয়েছে তেমনই মৃতের পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
ঘটনাসূত্রে জানা গেছে, মৃত ধর্ম ঘোষ একজন সম্পন্ন আলু চাষী। প্রতি বছরের মত এবারও কয়েক বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছিলেন। সম্প্রতি মাঠ থেকে সেই আলু তোলার কাজ শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার সেই আলু বস্তাবন্দী করে বাড়িরই গরুরগাড়ি নিয়ে গিয়ে ছিলেন নিউ দণ্ডপাট কোল্ড স্টোরেজে জমা করতে। উল্লেখ্য কেশপুর ব্লক হলেও দুটি এলাকাই আনন্দপুর থানার অধীন।
পুলিশ সূত্রে খবর মৃতের নাম ধর্ম ঘোষ বাড়ি আনন্দপুর থানা এলাকায়। এদিকে ওই এলাকায়, আলুর ওই হিমঘর লাগোয়া অঞ্চলেই ঘুরে বেড়ায় ওই ধর্মের ষাঁড়টি। পচা, বাতিল, পরিত্যক্ত আলু খাওয়ার লোভেই ষাঁড়টি সম্ভবতঃ ঘুরে বেড়াতো হিমঘরের কাছাকাছি। কখনও সখনও হিমঘরের গেট পেরিয়ে ঢুকে পড়ত হিমঘরের ভেতরেও।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এদিনও ওই ষাঁড়টি গেট পেরিয়ে হিমঘরের চত্বরে ঢুকে পড়েছিল। যেহেতু এখন কৃষকরা আলু জমা করতে আসছে তাই প্রচুর বাতিল আলু পাওয়া যাচ্ছে তাই ষাঁড় এখন আর এই এলাকা ছেড়ে নড়তেই চায়না। ধর্ম ঘোষ যখন হিমঘরের প্রধান ফটক পার হয়ে হিমঘর চত্ত্বরে প্রবেশ করেছে তখনই মুখোমুখি হয়ে পড়ে ষাঁড়টি। গাড়ির জোতের সঙ্গে বাঁধা দুই বলদ সামনে ষাঁড়টিকে দেখে উত্তেজিত হয়ে ওঠে। রুখে দাঁড়ায় ষাঁড়টিও। শুরু হয়ে যায় ষাঁড় বনাম দুই বলদের লড়াই। বলদের কাঁধ থেকে জোত পড়ে যায়। কিন্তু দড়ি বাঁধা থাকায় গাড়ির জোতের সাথে আটকে থাকে বলদ দুটি। ধর্ম ঘোষ হাতের পাচন বাড়ি দিয়ে সম্ভবতঃ লড়াই আটকাতে গেছিলেন কিন্তু ষাঁড়ের গুঁতো খেয়ে গরুর গাড়ি সামনে পড়ে যান।
সেই অবস্থাতেই ষাঁড়টি ধর্ম ঘোষকে ঠুসে ধরে গাড়ির সঙ্গে। এবার ষাঁড়ের সিং ঢুকে তাঁর যায় পেটে। অন্যদিকে ওই অবস্থায় গাড়ির আগল থেকে নিজেদেরকে ছড়ানোর চেষ্টা করছিল বলদ দুটি। সেই টানাটানির ফলে আলুর বস্তা ভর্তি গরুর গাড়ির চাকা গড়িয়ে যায় ধর্ম ঘোষের মাথার উপর দিয়ে। গোটা ঘটনাই এত দ্রুত ঘটে যায় যে হতভম্ব হয়ে যান উপস্থিত অন্যান্য আলু চাষীরা। সেই হতভম্ব ভাব কাটিয়ে উঠে দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে চন্দ্রকোনা হাসপাতালে আনলে চিকিৎসক রা মৃত বলে ঘোষণা করে। সেই মৃত্যুর খবর আসার পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন অন্যান্য কৃষকরা। পুরো ঘটনায় হিমঘর কর্তৃপক্ষর দায়িত্ব জ্ঞানহীনতাকে দায়ী করে ক্ষতিপূরণের দাবিতে হিমঘরের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আনন্দপুর থানা পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন তাঁরা। ধর্ম ঘোষের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। অবোধ, নির্বিকার ষাঁড়টি এখনও ওই এলাকায় থাকায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।