নিজস্ব সংবাদদাতা: “খড়গপুরে এত ‘ক্রাইম’ বাড়ছে কেন? আপনারা কি নিয়মিত টহল দেন শহরে? আপনি নিজে জিপ নিয়ে শহরে ঘুরেন?” খড়গপুর টাউন থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ (IC) বিশ্বরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার ২দিনের জেলা সফরের প্রথম দিনই প্রশাসনিক বৈঠক থেকে খড়গপুর শহরের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে এভাবেই তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্লেখ্য দু’দিনের জন্য পশ্চিম মেদিনীপুরে এসেছেন। মঙ্গলবার এবং বুধবারে থাকছেন জেলায়। সেই কর্মসূচির প্রথম দিনেই মঙ্গলবার মেদিনীপুর শহরের শহিদ প্রদ্যোত স্মৃতি সদনে অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক সভা থেকে খড়গপুর শহরের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে রীতিমত ক্ষোভ ঝরে পড়ছে বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রীর গলায়।
উল্লেখ্য গত কয়েকমাস যাবৎ খড়গপুর শহরে একের পর এক চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেই চলেছে। ভোর বেলা থেকে রাত্রি বেলায় শহরের বিভিন্ন অংশে একের পর এক ঘটে যাওয়া এই চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনায় রীতিমত উদ্বেগ ছাড়িয়েছে শহর জুড়েই। খুব সম্প্রতি গুলি চলার ঘটনাও ঘটেছে। সপ্তাহ খানেক আগেই একটি পরিবারের জানলা ভেঙে ঘরে ঢুকে চার চারটি গুলি করা হয় এক ব্যক্তিকে। তার কয়েকদিন আগেই এক ব্যবসায়ীর কয়েক লক্ষ টাকা ছিনতাই হয় সুভাষপল্লী এলাকায়। ওই দিন রাতেই মালঞ্চ এলাকায় এক গৃহবধূর ২লক্ষ টাকার হার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। তার ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই ফের দুই গৃহবধুর হার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। মাত্র ১ঘন্টার ব্যবধানে ছিনতাই হয় ওল্ড সেটেলমেন্ট ও ধ্যান সিং ময়দান এলাকায়। পুলিশের ওপর তিক্ত বিরক্ত ভুক্তভোগী এক গৃহবধূ বলেও ফেলেন যে, খড়গপুর শহর মহিলাদের জন্য নিরাপদ নয়।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সুপার দীনেশ কুমারকে বলেন, গোটা খড়গপুর শহরকে আপনারা সিসিটিভি ক্যামেরায় মুড়ে দিন। প্রশাসনিক মঞ্চ থেকেই তিনি বিষয়টি দেখার জন্য রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক ( DGP West Bengal) মনোজ মালব্যকে নির্দেশও দেন। মুখ্যমন্ত্রী পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকে পরামর্শ দেন ডিজির সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি ঠিক করার জন্য। উল্লেখ্য পুলিশের তরফে এর আগেই জানানো হয়েছিল খড়গপুর শহরে সিসিটিভির সংখ্যা অত্যন্ত কম। এমনকি গোলবাজার, খরিদা, মালঞ্চ, ইন্দা, কৌশল্যা, পুরানো বাজার, বাসস্ট্যান্ডের মত জনবহুল জায়গা ও বাজারগুলিতে পর্যাপ্ত সিসিটিভি নেই। পুলিশের তরফে একবার ব্যবসায়ী এবং ক্লাব প্রতিষ্ঠানগুলিকেও আবেদন করা হয় নিজের নিজের এলাকায় সিডিটিভি ক্যামেরা বসানোর জন্য। যদিও সেই আবেদনে খুব বেশি সাড়া পড়েনি।
বছর খানেক আগে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে শুধু বাজার এবং জনবহুল এলাকাতেই সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর জন্য খুব কম করেও ৭ হাজার সিসিটিভি ক্যামেরার প্রয়োজন। সেখানে খড়গপুর শহরে মেরে কেটে ৩ হাজারের মত সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে পেরেছিল পুলিশ যার মধ্যে ঝড়বৃষ্টি প্রাকৃতিক দুর্যোগে নষ্ট হয়ে গেছে বেশকিছু ক্যামেরা। বড় জোর ১২০০ মত ক্যামেরা এখন সক্রিয়। আর সেই কারণে বহু অপরাধের কিনারা করা সম্ভব হয়নি। জেলা পুলিশের নিজস্ব বাজেট থেকে শুধুমাত্র খড়গপুর শহরে এত সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো সম্ভব নয়। জেলার এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী সমগ্র খড়গপুর শহরকে বিশেষ করে রেল এলাকা, উত্তর এবং মধ্য খড়গপুর, পূর্ব এবং পশ্চিম খড়গপুর এবং দক্ষিণ খড়গপুরের সমস্ত বাজার ও বসতির মুখগুলিতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে হলে খুব কম করেও ১২ থেকে ১৫ হাজার সিসিটিভি ক্যামেরা প্রয়োজন। মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগের পর যদি রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে সহায়তা মিলে তবে সেই কাজ করা সম্ভব। পশ্চিম মেদিনীপুর পুলিশের আশা সেই সাহায্য এবার মিলতে চলেছে।