নিজস্ব সংবাদদাতা: খড়গপুর কিংবা মেদিনীপুর শহর আর দুই শহরের মধ্যবর্তী হোটেল, রেস্তোরাঁ, ধাবা গুলি কতটা নিরাপদ? বেড়াল কিংবা কুকুরের মাংস নিয়ে বছর কয়েক আগে তোলপাড় হয়েছিল বাংলা। তখন পরপর কিছুদিন খানা তল্লাশির পর জানা গিয়েছিল দুই শহরের বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরাঁয় কী ব্যাপক পরিমান কুখাদ্য বিক্রি করা হত। তারপর আর কী সেই ভাবে তল্লাশি হয়? মেদিনীপুর শহরে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে দুই বন্ধুর মৃত্যু আলোড়ন ফেলে দিয়েছে।
শনিবার রাতে মৃত্যু গায়ক ও অভিনেতা সম্ভ্রম চক্রবর্তী ওরফে টিটোর , রবিবার বাদ্য শিল্পী সোমেশ হড় ওরফে সোমের। দু’জনের অসুস্থকালীন উপসর্গ মোটামুটি একই, পেটের ব্যথা, বমি। এবং জানা যাচ্ছে শনিবার সন্ধ্যায় দু’জনই এক সাথে কোথাও খাবার খেয়েছিলেন সঙ্গে মদ্য পানও করে থাকতে পারেন। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজেই দুজনের মৃত্যু হয়েছে। শুরু হয়েছে বমি, পেট ব্যথা দিয়ে শেষ অবধি মৃত্যু হয়েছে সেরিব্রাল আর কার্ডিয়াক, টিটোর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ আর সোমের হৃদযন্ত্র বিকল বা হার্ট আ্যটাক। শরীরে যখন কোনও তীব্র যন্ত্রনা বা টানাপোড়েন তৈরি হয় তখন দুর্বলতর জায়গাটি সর্বাধিক ধাক্কা খায়। টিটো উচ্চ রক্তচাপের রোগী ছিলেন তাই তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছিল, সোমের নিশ্চিতভাবে হার্ট দুর্বল ছিল তাই হার্ট ফেলিওর।
টিটোর বন্ধুদের সূত্রে জানা গেছে শনিবার বিকালে খড়গপুর শহরে এসছিলেন কোনও মুমূর্ষুকে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিতে তারপর ফেরার পথে সোমকে নিয়ে কোনও রেস্টুরেন্টে বা ধাবায় খাবার খেয়েছিলেন। মদ জাতীয় পানীয়ও পান করে থাকতে পারেন। পানীয়ের সম্ভবনা এই কারনেই রয়েছে যে দুজনেরই পানীয় নেওয়ার অভ্যাস ছিল বলে জানা গেছে। দুজনই বাড়ি ফেরার অসুস্থ হন, পেটে ব্যথা,বমি এবং ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে যাওয়ায় দুজনকেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয় কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে, দুজনেরই মৃত্যু হয় কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে। দুজনেরই খাদ্যে বিষক্রিয়ার লক্ষণ ছিল। প্রশ্ন হচ্ছে কী খেয়েছিলেন তাঁরা? কোথায় খেয়েছিলেন? রেস্তোরাঁয় নাকি ধাবায়?
অনেকে মনে করতে পারেন রেস্তোরাঁয় ওঁরা একাই খাবার খেয়েছিলেন নাকি? আরও অনেকেই খেয়েছিলেন। অন্য কেউই তো অসুস্থ হয়ে মারা যায়নি। উত্তর, হয়ত হয়েছেন, জানার উপায় কী? টিটো বা সোম যে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন তা ক’জন জানেন? কোনও পুলিশ কেস হয়নি কারন কেউ অভিযোগ করেননি। সেরকমই অন্য কোথাও গিয়ে কেউ যদি একই ভাবে মারা যান জানার উপায় নেই। দ্বিতীয়ত: যদি টিটো এবং সোম কোনও বিশেষ পদ নিয়ে থাকেন যা অন্য কেউ-ই সেদিন নেননি? যেমন মাশরুমের কোনও পদ কিংবা ওই জাতীয় অন্য কিছু? যদি তাঁদের মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার পরিবেশন করা হয়ে থাকে? যদি ধাবাতে আগে থেকে করে রাখা কোনও বিষক্রিয়াযুক্ত তড়কা, পনির ইত্যাদির অবশিষ্টাংশ চট জলদি গরম করে পরিবেশন করা হয়ে থাকে?
বিপদটা মদের দিক থেকেও হতে পারে। ধাবা কিংবা সস্তার কোনও হোটেলে মদ জাতীয় পানীয় নিয়েও বিপদ ঘটতে পারে। বিলাতি মদের আড়ালে আকছার জাল মদের কারবার চলে। কোম্পানির পরিত্যক্ত বোতলে স্পিরিট জাতীয় তরলের সাথে গন্ধ যুক্ত করে রাম হুইস্কির দেদার কারবার নতুন কী? দেশি মদেও চোলাই সংযোগ আশ্চর্যের কী? হ্যাঁ ঠিক কী হয়েছে তা এখুনি জানার উপায় নেই যদি না পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করে। কিন্তু এই দুই মৃত্যু খড়গপুর আর মেদিনীপুরবাসীর জন্য বড়সড় প্রশ্ন তুলে গেছে। বিশেষ করে যাঁরা আকছার বাইরে খাবার পানীয় ইত্যাদি গ্রহণ করে থাকেন।