নিজস্ব সংবাদদাতা: অবশেষে ল্যান্ডফল (Landfall) হল গুলাবের। ৯০কিলোমিটার বেগে ঘূর্ণিঝড় গুলাব রবিবার সন্ধ্যা ৬টার নাগাদ ঝাঁপিয়ে পড়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশা উপকূলে। আর তারই জেরে ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়েছে শ্রীকাকুলাম জেলা এবং সন্নিহিত তটবর্তী এলাকায়। ঝড়ের তান্ডবে অন্ততঃ ২জন মৎসজীবীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। ট্রলার থেকে ভেসে গিয়েছেন ৬জন। পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা এবং অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার এই মুহূর্তে ২০হাজার মানুষকে ত্রাণ শিবিরে সরিয়ে এনেছেন বলে জানা গেছে। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে অন্ততঃ ৩ ঘন্টা ধরে চলবে এই ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া। ওই সময়টাই মারাত্মক। ইতিমধ্যে গুলাবের ল্যান্ডফলের জেরে বিপর্যস্ত ওড়িশা ও অন্ধ্র উপকূল। ভারতীয় নৌবাহিনীর জওয়ানরা সমুদ্রে জাহাজ ও বিমান নিয়ে নজরদারি চালাচ্ছে। উদ্ধার কার্য ও ত্রাণকার্যে হাত লাগিয়েছেন তাঁরা।
এদিকে রবিবারই দিঘাতে বেড়াতে এসে লাগোয়া রাজ্য ওড়িশার তালসারির সমুদ্রে স্নান করতে গিয়ে তলিয়ে গেছেন উত্তর ২৪পরগনার ২যুবক। জানা গেছে রবিবার দুর্যোগ আবহে দুর্ঘটনা এড়াতে দিঘায় সমুদ্রস্নানে কড়া নিষেধাজ্ঞা ছিল। সমুদ্রে নামতে দেওয়া হয়নি কাউকেই। তাই পড়শি দিঘা ছেড়ে তালসারির সমুদ্রে স্নান করতে গিয়ে এই মর্মান্তিক ঘটনার শিকার হয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামের দুই যুবক। রবিবার বিকেল নাগাদ ঘটেছে দুর্ঘটনাটি। অভ্রদ্বীপ বাগড়িয়া (২২) ও দেবর্ষি সিংহ (২৩) নামের নিখোঁজ ওই দুই যুবকের খোঁজে চলছে তল্লাশি।
পুলিশের পাশাপাশি উদ্ধার কাজে নেমেছে এনডিআরএফের (NDRF)একটি দল। নামানো হয়েছে পুলিশ বোট। এদিন সন্ধে পর্যন্ত তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে তালসারি মেরিন থানার পুলিশ। জানা গেছে, ৮ জনের দলে দিঘায় এসেছিলেন ওই দুই যুবক। রবিবার সকলেই অল্পবিস্তর মদ্যপান করেছিলেন। বিকেলে ৮ জনের দলটি তালসারিতে সমুদ্রস্নানে নেমেছিল। আচমকা সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠলে টাল সামলাতে না পেরে সঙ্গে সঙ্গে তলিয়ে যান ওই ২ জন। চেষ্টা করেও জল ছেড়ে উঠে আসতে পারেননি।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়ে দিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় গুলাবের প্রভাব সরাসরি বাংলায় না পড়লেও ব্যাপক বৃষ্টি হতে চলেছে রাজ্যের উপকূলীয় জেলাগুলোতে। তাই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে চূড়ান্ত ভাবে তৈরি থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলাগুলিতে। সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার অবধি সমুদ্র তীরবর্তী সমস্ত পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। পর্যটকদের ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে দিঘা, মন্দারমনি, শঙ্করপুর, চাঁদপুর, তাজপুর ইত্যাদি এলাকা থেকে। মৎসজীবীদের পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া অবধি সমুদ্রে যেতে বারন করা হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে সোমবার থেকে আবহাওয়ার বদল লক্ষ্য করা যাবে। মঙ্গল এবং বুধবার দক্ষিণ পূর্ব ঝড়ো হাওয়া বইবে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে। ফলে বৃষ্টি হবে। মঙ্গলবার দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত জেলাতেই বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা। তার মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, কলকাতা, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ায়। দিঘা উপকূলে জারি হয়েছে হলুদ সতর্কতা। ২৮ এবং ২৯ তারিখ জারি করা হয়েছে কমলা সতর্কতা।