নিজস্ব সংবাদদাতা: হলদিয়ার জামাইয়ের পর এবার তমলুকের এক ব্যক্তির ভাইপো গ্রেফতার হল দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরীর হিংসা মামলায়। বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের ধলহরা থেকে সেই ভাইপোকে গ্রেপ্তার করল দিল্লি পুলিশ। উল্লেখ্য গত কয়েকদিন ধরেই জাহাঙ্গীরপুরী হিংসাকান্ডের তদন্তে পূর্বমেদিনীপুরে রয়েছে দিল্লি পুলিশ। জেলার বিভিন্ন জায়গায় তদন্ত চালাচ্ছেন তাঁরা। এই ঘটনায় প্রথম উঠে আসে মহম্মদ আনসার বলে এক ব্যক্তির নাম। দিল্লি থেকে গ্রেফতার হওয়া আনসার হলদিয়ার জামাই বলে জানা গিয়েছিল। সেই সূত্রে হলদিয়ায় খোঁজ খবর নিতে আসে দিল্লি পুলিশ। তারপর জেলায় থেকে বেশ কয়েকটি জায়গায় তল্লাশিও চালায় তাঁরা। এবার সাফল্য পেলেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা হল ফরিদ শেখ ওরফে মুন্না নামে এক ব্যক্তিকে।
যদিও মুন্নার বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় নয়। তাঁর আসল বাড়ি হাওড়া জেলায় বলেই জানা গেছে। মুন্নার জাহাঙ্গীরপুরীতে মুরগি মাংসের দোকান রয়েছে। সেখানেই পরিবার নিয়ে থাকে সে। হনুমান জয়ন্তীর শোভাযাত্রার দিন জাহাঙ্গীরপুরীতে যে হিংসার ঘটনা ঘটে তারপরই দিল্লি থেকে পালিয়ে আসে সে। হাওড়ায় না গিয়ে চলে আসে তমলুকের ধলহরা গ্রামে। সেখানে তাঁর কাকার বাড়ি। বেশ কয়েকদিন ধরেই কাকারবাড়িতে সে আত্মগোপন করেছিল বলেই জানা গেছে। বিশেষ সূত্রে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে তমলুক পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই সেখানেই হানা দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশের বিশেষ দলটি।
হনুমানজয়ন্তী উপলক্ষ্যে সেদিন জাহাঙ্গীরপুরীতে যে সংঘর্ষ হয়েছিল সেখানে শোভাযাত্রায় পাথর ছোঁড়ার অভিযোগ ছিল মুন্নার বিরুদ্ধে বলে দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে। যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ করে ধৃত মুন্নার পরিবার। দাদা গ্রেফতার হওয়ার পরই তমলুক থানায় চলে আসে মুন্নার বোন সাবিনা বিবি। তবে তাঁকে দাদার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। থানার বাইরে দাঁড়িয়ে সংবাদমাধ্যমকে সামিনা জানান, তাঁদের জন্ম দিল্লিতেই। বাবা, মা মারা যাওয়ার পর ফরিদই সংসারের হাল ধরেছিলেন।
বলেন,আমার দাদা এই ঘটনায় জড়িত নয়। ইফতারের সময় ওই ঘটনাটি ঘটে। দাদা সেই ঘটনার মীমাংসায় গিয়ে ফেঁসে যায়। দাদার একটি হাতে শারীরিক প্রতিবন্ধী জনিত সমস্যা রয়েছে। ও এই ঘটনায় জড়িত নয়।’
সাবিনার দাবি, হিংসার ঘটনার দিন দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সঙ্ঘর্ষ আটকাতে চেয়েছিলেন ফরিদ। পরে অভিযুক্তের তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে জানতে পেরেই তমলুকে চলে এসেছিলেন তিনি। সাবিনার কথায়, ‘‘যে দিন দিল্লিতে পাথর ছোড়া হয়, সে দিন দাদা ওখানেই ছিল। তবে পাথর যাঁরা ছুড়েছিলেন, তাঁদের থামানোর চেষ্টা করছিল দাদা। পরে অভিযুক্তের তালিকায় নাম রয়েছে জানতে পেরেই দিল্লি থকে তমলুকে চলে এসেছে ও।’’
অন্য দিকে দিল্লি পুলিশের দাবি, মুন্না আগেও একটি অপরাধে যুক্ত ছিল। দিল্লি পুলিশের খাতায় নাম রয়েছে তাঁর। ঘটনার পর থেকেই ফোন বন্ধ রেখেছিল অভিযুক্ত। পরদিন সকালে দিল্লি থেকে ট্রেন ধরে কলকাতা পালিয়ে আসে সে। কলকাতায় এসে শেষবার ফোন চালু করে যোগাযোগ করে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে। তারপর থেকেই তার ফোন বন্ধ ছিল। কলকাতা থেকে এসে আশ্রয় নেয় তমলুকে কাকারবাড়িতে। সূত্র মারফত সে খবর জানতে পেয়ে এদিন সেখানে হানা দেয় পুলিশ। স্থানীয় আদালতে মুন্না ওরফে ফরিদকে পেশকরার পর তাঁকে ট্রানজিট রিমান্ডে নিয়ে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিয়েছে পুলিশ।