নিজস্ব সংবাদদাতা: তখন তোমার ২১বছর বোধহয়, আমি তখন অষ্টাদশীর ছোঁয়ায়…গীতিকার সুবীর হাজার এই কথা তখন বাপী লাহিড়ীর সুরের জাদুতে আরতী মুখার্জির কন্ঠ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বাংলার অলগলিতে। একটা ভালোবাসার গান শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য আর সেই গানের কলি যতবার বেজে ওঠে ততবারই কোনও তরুণ আনমনা হয়ে কোনও এক অষ্টাদশীকে খোঁজে। বলা বাহুল্য এটা বিয়ের বয়স নিয়ে গান নয়, প্রেমের বয়স নিয়ে গান। যদিও প্রেমে পড়ার তো এরকম কোনও বয়স থাকেনা। বরং অনেকেই আরও কিছুটা আগে থেকেই প্রেমে পড়েন। তবুও এই ২১ আর ১৮বছরের কনসেপ্টটা এসেছিল ভারতীয় বিবাহ আইন মোতাবেক যেখানে এতদিন বলা হচ্ছিল বিয়ের জন্য মেয়েদের নূন্যতম বয়স ১৮ আর ছেলেদের ক্ষেত্রে তা ২১হতেই হবে। বুধবার সেই ব্যবধান ঘোচার আভাস পাওয়া গেল কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট বৈঠকে। যেখানে ছেলেদের মতই মেয়েদেরও বিয়ের নূন্যতম বয়স বাড়িয়ে ২১করার প্রস্তাব অনুমোদন হয়ে গেল।
ভারতীয় নারী এবং পুরুষের মধ্যে এতদিন যাবৎ চলে আসা বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় নুন্যতম বয়সের ওই ৩ বছরের পার্থক্যটি যে ঘুচতে চলেছে তার আভাস মিলেছিল এবছর স্বাধীনতা দিবসেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাতির উদ্দেশ্যে সেদিন ভাষণে বলেছিলেন, “মেয়েদের বিয়ের ঠিক বয়স কত হওয়া উচিত, তা নিয়ে শলা-পরামর্শ চলছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সচেতন মহিলারা আমাকে চিঠি পাঠিয়েছেন। এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ করেন তাঁরা। অনেকে প্রশ্ন করেছেন, কমিটির রিপোর্ট এখনও আসেনি কেন? আমি তাঁদের সকলকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, রিপোর্ট আসার সঙ্গে সঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি সরকার ওই ব্যাপারে পদক্ষেপ করবে।” তিনি আরও বলেছিলেন, ” এদেশের কন্যা এবং ভগ্নিদের স্বাস্থ্য নিয়ে সরকার অতিমাত্রায় সচেতন ও স্পর্শকাতর রয়েছে। মেয়েদের অপুষ্টি থেকে রক্ষা করার জন্য তাঁদের সঠিক বয়সে বিয়ে হওয়াটা জরুরি।’
জানা গেছে সরকারের তরফে বাল্য বিবাহ রোধের (Prohibition of Child Marriage Act) জন্য যে আইন রয়েছে সেই আইন মোতাবেক এবার থেকে বিশেষ বিবাহ আইন (Special Marriage Act) এবং হিন্দু বিবাহ আইন (Hindu Marriage Act) সহ সর্বক্ষেত্রেই এখন মহিলাদের বিয়ের নূন্যতম আইন ২১বছর করা হবে। মহিলাদের বিয়ে এবং মাতৃত্বের মধ্যে সময়ের গড় ব্যবধান, এই দুই বিষয়ের সঙ্গে স্বাস্থ্য ও পুষ্টির যোগ, জন্মের সময়ে শিশু ও মায়ের মৃত্যুর হার, সন্তানধারণ ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করার জন্য গত বছর জুন মাসে জয়া জেটলির নেতৃত্বে সরকারের তরফে ভি.কে পাল ছাড়াও মহিলা ও শিশুকল্যাণ দপ্তরের কিছু আধিকারিকদের নিয়ে এই বিষয়ে একটি টাস্ক ফোর্স তৈরি হয়।
গত ডিসেম্বর মাসে এই টাস্ক ফোর্স একটি রিপোর্ট রাখে যেখানে মহিলাদের প্রথম গর্ভধারণের বয়স নূন্যতম ২১বছর করা হয়। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল মেয়েদের দেরিতে বিয়ে অর্থনৈতিক, সামাজিক ক্ষেত্রে যেমন সদর্থক ভূমিকা পালন করবে তেমনই সদর্থক ভূমিকা পালন করবে পরিবার, সমাজ ও শৈশবের ক্ষেত্রেও। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন রাজ্য সভার সাংসদ জয়া বচ্চন। বলেছেন, “এটি অত্যন্ত ভালো একটি সিদ্ধান্ত। এরফলে মেয়েরা আরও পড়াশুনার সুযোগ পাবে। তারা আরও বেশিদিন স্বাধীনতাকে উপভোগ করবেন এবং কর্মসংস্থানের জন্য ভালো সুযোগ খুঁজতে পারবেন।”