নিজস্ব সংবাদদাতা: নজিরবিহীন ঘটনায় পাঞ্জাব (Punjab) সফর বাতিল করতে বাধ্য হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Narendra Modi)। অবরোধের জেরে প্রায় ২০ মিনিট রাস্তায় আটকে রইল তাঁর কনভয়। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় সফর বাতিল করে তাঁকে ফিরে যেতে হল।

বুধবারের এই ঘটনায় পাঞ্জাব পুলিশের প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা গাফলতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে.পি নাড্ডা। পাশাপাশি এটাও প্রমান হয়ে গেছে যে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি পাঞ্জাবের কৃষকদের ক্ষোভ একটুও প্রশমিত হয়নি।
বুধবার পাঞ্জাব হুসাইনিওয়ালায় (Hussainiwala)শহিদদের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ( National Martyrs Memorial) শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির৷ তারপর ফিরোজপুরের (rally in Ferozepur) একটি সভাতেও বক্তব্য রাখার কথা ছিল তাঁর৷ পরিকল্পনা ছিল ভাতিন্ডা বিমানবন্দরে নামার পর সেখান থেকে ফের হেলিকপ্টারে করে হুসাইনিওয়ালার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন তিনি। কিন্তু বৃষ্টি এবং খারাপ আবহাওয়ায় দৃশ্যমানতা কম থাকায় বিমানবন্দরেই প্রায় ২০মিনিট অপেক্ষা করেন তিনি। পরিস্থিতির বদল না হওয়ায় হেলিকপ্টারের বদলে থেকে সড়কপথেই রওনা দেয় প্রধানমন্ত্রীর কনভয়। কিন্তু হুসেইনওয়ালার গন্তব্যস্থলের তিরিশ কিলোমিটার আগে একটি উড়ালপুলের উপরে আচমকা কৃষকদের অবরোধের জেরে আটকে যায় নরেন্দ্র মোদির কনভয়৷ অবরোধের জেরে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট উড়ালপুলের উপরেই আটকে থাকেন প্রধানমন্ত্রী৷ এর পর তাঁর কনভয় ফিরে যায়৷
এই ঘটনাকে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড়সড় গলদ বলে অভিযোগ করে বিবৃতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক৷ তাদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি অনেক আগে থেকে ঠিক করে পঞ্জাব সরকারকে জানানো হয়েছিল৷ শুধু তাই নয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের (MHA) বিবৃতিতে বলা হয়েছে যাত্রাপথের এই বদল পাঞ্জাবের পুলিশ মহানির্দেশক (DGP Police) কে অবগত করা হয়েছিল। তারপরেও কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল তার রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে পাঞ্জাব পুলিশের কাছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, পঞ্জাবের মুখ্যসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি সড়কপথে প্রধানমন্ত্রীর কনভয় যাওয়ার বিষয়ে এসপিজি-কে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছিল৷ তার পরেও কীভাবে বিক্ষোভকারীদের প্রধানমন্ত্রীর যাত্রাপথে ঢুকে অবরোধ করার সুযোগ দেওয়া হয়।
ওদিকে ফিরোজপুরে (Ferozepur) যেখানে মোদীর সভা হওয়ার কথা ছিল সেইস্থানে পৌঁছনোর সমস্ত রাস্তা অবরোধ করে বসে পড়েন বিক্ষুব্ধ কৃষকরা। ফিরোজপুরে যাওয়ার তিনটি প্রধানসড়কের দখল নিয়ে ১২ঘন্টা ধরে অবস্থান করছিলেন কিষান মজদুর সংঘর্ষ কমিটি। তাঁরা মোদীর পাঞ্জাব সফরের বিরোধিতা করতে থাকেন। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে. পি নাড্ডা অভিযোগ করেন, ‘ রাজ্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ফিরোজপুরের সভায় যাতে না লোক আসতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য। যে কারনে ওই সভায় আসা মানুষদের নিয়ে বিশাল সংখ্যক বাস রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ও প্রতিবাদীদের যোগ সাজশেই এটা হয়েছে।
যদিও পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিং চান্নির অবশ্য দাবি, আগাম না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কনভয় সড়কপথে চলে আসাতেই এই ঘটনা ঘটেছে৷ পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর আরও দাবি, দুপুর তিনটের মধ্যে অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য বিক্ষোভকারীদের অনুরোধ করেছিলেন তিনি। চান্নি আরও বলেছেন, ‘আপনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী। একজন পাঞ্জাবী হিসাবে আপনাকে সম্মান করি, আপনার জন্য জীবনও দিতে পারি কিন্তু আপনার জীবনের কোনও ঝুঁকি আজ ছিলনা।’ উল্লেখ্য এদিনই ফিরোজপুরে একটি সভা থেকে ৪২,৭৫০ কোটি টাকার উন্নয়নপ্রকল্প ঘোষণা করার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রীর। এর মধ্যে একাধিক জাতীয় সড়ক, ব্রডগেজ লাইন, ২টি মেডিকেল কলেজ সহ একগুচ্ছ প্রকল্প ছিল। কিন্তু শেষ মেশ বাতিল করা হয় ওই সভা।
রাজনীতিকরা মনে করছেন, কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে কৃষকদের দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে আইন ৩টি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। এই আন্দোলনের মুখ্যভাগেই ছিলেন পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশের কৃষকরা। ঘটনাচক্রে ওই রাজ্যগুলিতে এবছরের গোড়াতেই বিধানসভা নির্বাচন। আর সে কারণেই দুই রাজ্যকে সন্তুষ্ট করতে একের পর এক প্রকল্পের উদ্বোধন করেই চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু পাঞ্জাবের কৃষকরা যে তাঁর প্রতি ক্ষোভ এখনও ঝেড়ে ফেলতে পারেননি তা আবারও প্রমান হল।