নিজস্ব সংবাদদাতা: রাজস্থানের উদয়পুরে কানহাইয়া লাল সাহু নামে এক দর্জি খুনের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকায়। মঙ্গলবার প্রকাশ্য দিনের বেলায় ভরা বাজারে একটি দোকানের ভিতরে কানাইয়া লালের মাথা ধড় থেকে আলাদা করে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। বহিষ্কৃত বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার সমর্থনে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করার পর থেকে কানহাইয়া লাল সাহু ক্রমাগত প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছিলেন তিনি এমনটাই জানা গেছে তাঁর পরিবার সূত্রে।
সেই খুনের ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন লাগানোর ঘটনাও ঘটছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সংলগ্ন এলাকা জুড়ে ইন্টারনেট ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এনআইএ-র একটি দল ঘটনাস্থলে রওনা দিয়েছে বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় ২জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট টুইট করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন এবং শান্তির জন্য জনগণের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। অন্যদিকে রাজস্থানের বিরোধী দলনেতা গুলাবচাঁদ কাটারিয়া সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, একটি সমাজবিরোধী গোষ্ঠী এই ঘটনা ঘটাচ্ছে, কিন্তু সরকার ও প্রশাসন তা বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। কাটারিয়া বলেন, ” চার ৪ দিন আগে, নির্যাতিতার পরিবার পুলিশের কাছে গিয়েছিলেন, কিন্তু পুলিশ এটিকে গুরুত্বের সাথে নেয়নি এবং আজ দোকান খোলার সাথে সাথে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে।”
রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে বলেছেন, “উদয়পুরে এক নিরীহ যুবকের নির্মম হত্যাকাণ্ড থেকে এটি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে রাজ্য সরকারের প্ররোচনা এবং সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির কারণে অপরাধীরা বহাল তবিয়তে বিরাজ করছে । রাজ্যে উন্মত্ততা ও হিংসা দেখা দিয়েছে। অপরাধীরা এতটাই অজ্ঞ যে তারা প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে হিংসাত্মক বক্তব্য দিয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত সকল অপরাধীকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। এই ঘটনার নেপথ্যে যাঁরা, রাজ্য সরকারের উচিত তাঁদেরও ফাঁস করে গ্রেপ্তার করা।”
জানা যাচ্ছে ঘটনাটি ঘটেছে উদয়পুর শহরের ধানমন্ডি থানা এলাকার মালদাস স্ট্রিটে প্রকাশ্যে দিবালোকে দুই থেকে তিনজন ওই ঘটনা ঘটানোর পর চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর ধানমন্ডি ও ঘন্টাঘর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে এমবি হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যায়। একটি সূত্র মারফৎ জানা যায় মৃত কানহাইয়ালালের আট বছরের ছেলে তার মোবাইল থেকে নূপুর শর্মার সমর্থনে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন। এর পরেই কানহাইয়ালালকে গ্রেফতার করে ধানমন্ডি থানার পুলিশ।
তারপর থেকেই কানহাইয়ালালকে ক্রমাগত হুমকি দিয়ে আসছিল কিছু মানুষ। তারপরই মঙ্গলবারের ঘটনা। জামা বানানোর নাম করে দুস্কৃতীরা তার দোকানে উপস্থিত হয়। কানাইয়ালাল যখন এক দুষ্কৃতীর জামার মাপ নিচ্ছিলেন তখন অন্য দুষ্কৃতী চপার দিয়ে তাঁর ঘাড়ের ওপর মারলে মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঘটনার পরই একটি ভিডিও পোস্ট করে কানাইয়ালালকে খুনের কথা স্বীকার করে দুই ব্যক্তি। পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে ওই দুজনকে গ্রেফতার করেছে বলে জানা গেছে। ঘটনায় কোনও উগ্রপন্থীর গোষ্ঠীর হাত রয়েছে কিনা তা তদন্ত করতে জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা বা NAI ঘটনাস্থলে গিয়েছে।