নিজস্ব সংবাদদাতা: বিজেপির রোষে সাংবাদিক ও শিল্পীরা। এক বিজেপি বিধায়ক ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে খবর করার জন্য সাংবাদিক ও নাট্যকর্মীদের থানায় এনে পুলিশ তাদের জামা খুলিয়ে অন্তর্বাস পরে দাঁড় করিয়ে রাখে। প্রায় ১৮ ঘণ্টা তাদের আটক করে রাখা হয়। দেখা গেছে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবি ভাইরাল হতেই ক্ষোভের সৃষ্টি হয় নেটিজেনদের মধ্যে। ওই আটজন ব্যক্তি দেওয়ালের বিপরীতে সামনে হাত রেখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
সেই ছবি সামাজিক মাধ্যমে আসতেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।ওই সাংবাদিকের অভিযোগ, পুলিশ তাদের মেরেছে, খারাপ ব্যবহার করেছে। কেন তারা বিধায়কের বিরুদ্ধে খবর করতে গেছিল, সে প্রশ্ন করা হয়েছে। সাংবাদিকের দাবি, তার চিত্রহগ্রাহককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভুয়া মামলাও করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে মধ্যপ্রদেশের(Madhyapradesh) সিধি (Sidhi) জেলায়। ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই ২ পুলিশ আধিকারিককে থানা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে ওই সাংবাদিক ও নাট্যকর্মীরা সিধির পুলিশ থানার সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছিলেন কারন ওখানকার বিজেপি বিধায়ক কেদারনাথ শুক্লা ও তাঁর ছেলে গুরুদত্ত শরন শুক্লার বিরুদ্ধে একটি ফেসবুক পোষ্ট করেছিলেন ইন্দ্রবতী ড্রামা স্কুলের ডিরেক্টর তথা অভিনেতা নীরজ কুন্দের। কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক মনোজ সোনি জানিয়েছেন, “ওই রিপোর্টার ও সমাজকর্মীরা বিশৃঙ্খলা বিনা অনুমতিতে থানা চত্বরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন এবং শান্তি নষ্ট করছিলেন। সোনি আরো বলেন, কুন্দেরকে গ্রেপ্তার করার কারণ তিনি বিধায়কের ছবি বিকৃত করে পোষ্ট করেছিলেন।” যদিও সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান আইন অনুসারে ফেসবুক পোষ্ট করার দায়ে কাউকে গ্রেফতার করা যায়না।
নাট্যপরিচালক নীরজ কুন্দেরকে গ্রেপ্তার করার প্রতিবাদে সিধির একজন প্রখ্যাত ইউটিউব সাংবাদিক (YouTube journalist) কনিস্ক তিওয়ারি (Kanishk Tiwari) এবং কিছু নাট্যকর্মী, সমাজসেবীরা কোতোয়ালি পুলিশ থানার সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে শুরু করেন। বিধায়ক শুক্লার পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের বিরুদ্ধেও শ্লোগান দিতে থাকেন কুন্দেরের ‘বেআইনি’
বেআইনি গ্রেফতারের প্রতিবাদে। এরপরই পুলিশ তাঁদের ধাক্কা দিতে দিতে থানার ভেতরে ঢুকিয়ে দেয় এবং প্রত্যেকের জামা প্যান্ট খুলতে বাধ্য করে এবং ওই অবস্থায় তাঁদের দাঁড় করিয়ে রাখে। ২রা এপ্রিলের সেই ঘটনায় পুলিশের তোলা ৮ জনের সেই অন্তর্বাস পরা ছবি বৃহস্পতিবার ভাইরাল হয়ে যায়।
কী কারণে তাঁদের জামা কাপড় খুলে নেওয়া হল এর ব্যাখ্যা দিয়ে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক সোনি বলেন, “অনেক সময় পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন অভিযুক্ত ব্যক্তি জামা কাপড়কে ফাঁস হিসাবে ব্যবহার আত্মহত্যা করে থাকে। সেই ঘটনা যাতে না ঘটে তাই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।” এই ছবি ছড়িয়ে পড়ার পরই গোটা রাজ্য জুড়েই তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। তড়িঘড়ি করে থানার ওই ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সোনি এবং সাব-ইন্সপেক্টর অভিষেক সিংহকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়। রাজ্যের এক বরিষ্ঠ পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন ওই ছবি প্রকাশ্যে আসার পরই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই থানা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের।
সিধি জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ শ্রীবাস্তব (Mukesh Shrivastava) বলেছেন, ‘ঘটনায় রাজ্য পুলিশের তরফে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু হয়েছে যাঁর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাব ডিভিশনাল পুলিশ আধিকারিক গায়ত্রী তিওয়ারিকে। যাঁরা এই জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছেন এবং জন্য দায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাপড় খুলে নেওয়ার মত বরদাস্ত করা যায়না।”
মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস নেতা অজয় সিংহ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, ” সাংবাদিকদের সঙ্গে পুলিশের এই ব্যবহার শুধুমাত্র পুলিশের অত্যাচার ও পুলিশি সন্ত্রাসকেই প্রতিফলিত করেনা তারই সাথে সাথে সংবাদমাধ্যমের প্রতি বিজেপি পরিচালিত সরকারের মনোভাবকেও স্পষ্ট করে দেয়।” সিংহ এই বর্বরতাকে গণতন্ত্রের চতুর্থস্তম্ভের ওপর সরাসরি আক্রমন বলে জানিয়েছেন।